Coal Scam

Coal and Cattle Scam of Bengal: গরুপাচারে যুক্ত বিনয়ের ভাইয়েরও এত সম্পত্তি! হিসেব কষতে গিয়ে অবাক সিবিআই

বিদেশে টাকা পাচারেও অন্যতম অভিযুক্ত বিকাশ। বছর দেড়েক আগে তাঁকে গ্রেফতার করে ইডি। এখন তিনি সিবিআই হেফাজতে রয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২২ ০৮:১৮
Share:

সিবিআইয়ের নজরে বিকাশ মিশ্র।

কয়লা ও গরু পাচারে তাঁর দাদা বিনয় মিশ্রই মূল অভিযুক্ত। কিন্তু তিনি, অন্যতম অভিযুক্ত বিকাশ মিশ্রও যে কিছু কম যান না, তাঁর প্রভূত বিষয়সম্পত্তি দেখে সেটাই তাদের প্রত্যয় হয়েছে বলে জানাচ্ছে সিবিআই। তাই বিকাশের প্রভাবশালী-যোগ খতিয়ে দেখার পাশাপাশি গত দশ বছরে তাঁর সম্পত্তি কোথায় কতটা বেড়েছে, সে-দিকেও নজর দিচ্ছেন তদন্তকারীরা। কয়লা ও গরু পাচারের তদন্তে সিবিআইয়ের সঙ্গে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছে ইডি বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটও। বিকাশের অগাধ সম্পত্তির উৎস কী, ইতিমধ্যেই ইডি তা খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে বলে তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে।

Advertisement

সিবিআই সূত্র জানাচ্ছে, প্রাথমিক তদন্তে বিকাশের নামে দুর্গাপুরে বিপুল পরিমাণ জমির হদিস পাওয়া গিয়েছে। তা ছাড়াও এমন ন’টি সংস্থার খোঁজ মিলেছে, যার সাতটিতে ডিরেক্টর পদে নাম রয়েছে বিকাশের। বাকি দু’টিতে তিনি রয়েছেন অতিরিক্ত ডিরেক্টরের পদে। তার মধ্যে একটি সংস্থার ডিরেক্টর-পদে তিনি নিযুক্ত হন ২০১০ সালে, বাকিগুলিতে তাঁর নিয়োগ হয়েছে ২০১৫ সালের পরে। ২০১৯ সালে তিনি একসঙ্গে চারটি সংস্থার ডিরেক্টর-পদ পান। বাস্তবে ওই সব সংস্থার সত্যিই কোনও অস্তিত্ব আছে, না, তার মধ্যে কিছু ভুয়ো সংস্থা রয়েছে, সবই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

তদন্তকারীদের দাবি, ২০১৯-এর আগে বিকাশ যে-ভাবে জীবন যাপন করতেন, গত দশ বছরে তা আমূল বদলে গিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, গরু ও কয়লা পাচারে তিনি তাঁর দাদা বিনয়কে সাহায্য করতেন। ইডি এবং সিবিআই এই মামলার তদন্ত শুরু করার পরে মূল অভিযুক্ত বিনয় ভারতের নাগরিকত্ব ছেড়ে প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে ভানাটু নামে একটি দ্বীপে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। তদন্তকারীরা জানান, এক সময় বেশ কিছু সংস্থায় ডিরেক্টর হিসেবে নাম ছিল বিনয়েরও। কিন্তু ভারত ছাড়ার সময় তিনি অনেক সংস্থার ডিরেক্টরের পদে ইস্তফা দেন। এখনও অন্তত চারটি সংস্থায় ডিরেক্টর এবং একটি সংস্থায় অতিরিক্ত ডিরেক্টরের পদে বিনয়ের নাম রয়ে গিয়েছে।

Advertisement

সিবিআই সূত্রের খবর, গত কয়েক বছরে দক্ষিণ কলকাতায় একটি প্রাসাদোপম বাড়ি বানিয়েছেন বিকাশ। তার ভিতরে লিফটও আছে। সেই বাড়িতেই ২০২০ সালের শেষ দিনে তল্লাশি চালায় সিবিআই। সম্প্রতি আসানসোল বিশেষ আদালতে আবেদন করে বিকাশকে হেফাজতে নিয়েছে তারা। সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা জানান,
প্রভাবশালী-যোগ ছিল বিনয়ের। তিনি এক সময় সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তদন্তকারীদের দাবি, প্রকাশ্যে বিনয়কে প্রভাবশালীদের আশেপাশে ঘোরাফেরা করতে দেখা যেত। বিনয় মূলত গরু ও কয়লা পাচারের লভ্যাংশের মোটা টাকা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছে দিতেন। সেই সঙ্গে তিনি হাওয়ালায় প্রভাবশালীদের বিদেশি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দিতেন বলেও তদন্তে উঠে এসেছে। তদন্তকারীদের দাবি, বিকাশও তাঁর দাদার নির্দেশে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট মারফত অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির কাছে টাকা পৌঁছে দিয়েছেন।

বিদেশে টাকা পাচারেও অন্যতম অভিযুক্ত বিকাশ। বছর দেড়েক আগে তাঁকে গ্রেফতার করে ইডি। এখন তিনি সিবিআই হেফাজতে রয়েছেন। কয়লা পাচারের মামলার যোগসূত্রে ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দু’দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ইডি। অভিষেকের স্ত্রী রুজিরা ও শ্যালিকা মেনকা গম্ভীরকে একাধিক বার তলব করেছে ইডি।

তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, বিকাশকে জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রভাবশালী-যোগের নানা তথ্য উঠে এসেছে। রাজ্য পুলিশের একাংশের যোগসাজশে কয়লা পাচার চক্র চালাতেন অনুপ মাঝি ওরফে লালা। তদন্তকারীদের দাবি, লালার মাধ্যমে লভ্যাংশের টাকা বিনয় ও বিকাশের কাছে জমা পড়ত। ওই দু’ভাই সেই টাকা পুলিশকর্তাদের একাংশ ও কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দিতেন। বিনয় দেশ ছাড়ার পরে তাঁর বাবা-মায়েরও খোঁজ মিলছে না বলে জানায় সিবিআই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন