বয়ান বদলের হিড়িক, আটকে সারদা চার্জশিট, বিভ্রান্তি সিবিআইয়ে

গ্রেফতারির পরে সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন বিভিন্ন সময়ে তদন্তকারী অফিসারদের জানিয়েছেন, তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আঁকা ছবি কিনেছিলেন।

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ ও শুভাশিস ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:২৪
Share:

সিবিআই হানা অ্যামনেস্টির দফতরে।—ফাইল চিত্র।

তদন্ত যখন শেষ পর্বে, বয়ান বদলাচ্ছেন মূল অভিযুক্ত এবং সংশ্লিষ্ট অন্য কয়েক জনও। তাতে তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই এতটাই বিভ্রান্ত যে, বেআইনি লগ্নি সংস্থা সারদার তছরুপ নিয়ে চূড়ান্ত চার্জশিট দিতে পারছে না।

Advertisement

গ্রেফতারির পরে সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন বিভিন্ন সময়ে তদন্তকারী অফিসারদের জানিয়েছেন, তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আঁকা ছবি কিনেছিলেন। বলেছিলেন, তিনি নিজে সেই ছবি না-দেখলেও তার জন্য টাকা দিয়ে দিয়েছিলেন। এখন বয়ান বদলে সুদীপ্ত বলছেন, তিনি কোনও ছবিই কেনেননি। ছবি কিনতে টাকাও দেননি। যাঁরা আগে সুদীপ্তের ছবি কেনার বিষয়টি সমর্থন করেছিলেন, সেই প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অনেকের গলাতেও এখন উল্টো সুর।

সারদা-তদন্তে নেমে পাঁচ বছর বাদে সিবিআইয়ের সামনে এখন এই নিয়ে নতুন করে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। শুধু এটাই নয়। সারদায় অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা, মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা ছবি বিক্রি এবং তৃণমূলের দলীয় মুখপাত্র ‘জাগো বাংলার’ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকার লেনদেন নিয়েও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রের খবর।

Advertisement

আরও পড়ুন: দিল্লির আকাশ আরও ঘোলাটে, দূষণ নিয়ে রাজনীতির চাপান-উতোর চলছেই

গত মাস দেড়েকের মধ্যে শোভন চট্টোপাধ্যায়, কুণাল ঘোষ, ডেরেক ও’ব্রায়েন, মুকুল রায়, দীনেশ ত্রিবেদী, সৃঞ্জয় বসুর সঙ্গে কথা বলেছে সিবিআই। তারা জানাচ্ছে, কিছু কিছু স্পর্শকাতর বিষয়ে এক জনের বয়ানের সঙ্গে অন্য জনের বক্তব্য মিলছে না। তাঁদের বয়ান যে অন্য জনের সঙ্গে মিলছে না, তা-ও নাকি প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বলা হয়েছে।

সিবিআই-কর্তারা মাঝখানে দাবি করছিলেন, অচিরেই চূড়ান্ত চার্জশিট দেওয়া হবে। কিন্তু সিবিআই সূত্রের খবর, শেষ পর্যায়ে এসে কয়েক জন প্রভাবশালীদের বয়ান বদলে যাওয়ায় ফের বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। ফলে চূড়ান্ত চার্জশিট দিতে আরও দেরি হবে বলে মনে হচ্ছে। সিবিআই-কর্তাদের মতে, এমন বিভ্রান্তি নিয়ে চার্জশিট দেওয়া মুশকিল। আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর পরে যদি পরস্পরবিরোধী বয়ান আসতে থাকে, তাতে মামলার গুরুত্ব নষ্ট হয়ে যাবে।

তবে এটাও কেন্দ্রের কোনও পরিকল্পনার অংশ কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে। মাসখানেক ধরে কিছু ক্ষেত্রে আপাতত ‘ধীরে চলো’ নীতি নিয়েছে সিবিআই। পুলিশকর্তা রাজীব কুমারের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, কলকাতায় তাঁকে গ্রেফতারের জন্য যতটা উদ্যোগ, যত ছোটাছুটি ছিল, এখন আর তা নেই। কলকাতা হাইকোর্টে রাজীবের আগাম জামিন মঞ্জুরের পরে তার বিরোধিতা করে সিবিআই সুপ্রিম কোর্টে গেলেও তা নিয়ে তদ্বির-তদারকির উদ্যোগও চোখে পড়েনি। মনে করা হচ্ছে, সামনের বছর কলকাতা-সহ রাজ্যের বেশ কয়েকটি পুরসভার নির্বাচনের আগে বড় কোনও সিদ্ধান্ত না-ও নেওয়া হতে পারে। সে-ক্ষেত্রে সারদা মামলায় চূড়ান্ত চার্জশিট পেশের দিনক্ষণও পিছিয়ে দেওয়া হবে। সেই চার্জশিটে কয়েক জন ‘রাঘববোয়াল’-এর নাম থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তদন্তকারীদের একাংশ। সিবিআইয়ের খবর, আপাতত নতুন বিভ্রান্তি দূর করতে শিক্ষামন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়ে কিছু তথ্য চাওয়া হয়েছে। জেলে গিয়ে বার দুয়েক সুদীপ্ত এবং সারদার অন্যতম কর্ত্রী দেবযানীকে জেরা করা হয়েছে। তাতে বিভ্রান্তি কমার চেয়ে বেড়েছে।

বিভিন্ন সময়ে তৃণমূলের বিভিন্ন নেতা জাগো বাংলার দায়িত্বে ছিলেন। ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট বলছে, কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। অথচ কুণাল থেকে মুকুল, সৃঞ্জয় থেকে দীনেশ— সকলেই সেই লেনদেন সম্পর্কে বলছেন, ‘‘আমি কিছু জানি না।’’ ইনি বলছেন, উনি জানেন। উনি বলছেন, ইনি। কার্যত সকলেই বদলে ফেলছেন নিজেদের আগেকার বয়ান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন