মমতার আঁকা ১০টি ছবি হাতে নিল সিবিআই

ছবিগুলি নিয়ে কী করবে সিবিআই? সংস্থা সূত্রে বলা হচ্ছে, সাধারণ ভাবে বাজারে ছবি যাচাই করে সেগুলির মূল্যায়ন করা হবে। পাশাপাশি যে টাকা দিয়ে ছবি কেনা হয়েছিল, তার উৎস সন্ধানও করা হবে।

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ 

শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:২৯
Share:

যখন চিত্রশিল্পী মমতা।—ফাইল চিত্র।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আঁকা ছবি কে বা কারা কিনেছেন, এত দিন তা নিয়েই তদন্ত চলছিল। এ বার সরাসরি ছবি হাতে নিল সিবিআই।

Advertisement

সিবিআই সূত্রে খবর, বুধবার সকালে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে তৃণমূল ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ব্যবসায়ী শিবাজি পাঁজাকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। ২০১১ সালে মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা কিছু ছবি মোট ৫০ লক্ষ টাকা দিয়ে কিনেছিলেন শিবাজি। তার মধ্যে ১০টি ছবি তাঁকে সিজিও কমপ্লেক্সে পাঠাতে বলা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে শিবাজির আইনজীবী ছবিগুলি দিয়ে আসেন।

ছবিগুলি নিয়ে কী করবে সিবিআই? সংস্থা সূত্রে বলা হচ্ছে, সাধারণ ভাবে বাজারে ছবি যাচাই করে সেগুলির মূল্যায়ন করা হবে। পাশাপাশি যে টাকা দিয়ে ছবি কেনা হয়েছিল, তার উৎস সন্ধানও করা হবে। কিন্তু, কিসের ভিত্তিতে ছবি দাম যাচাই করা হবে, সেই প্রশ্নও উঠছে। কেননা, কোন ছবির কী দাম হবে, তার কোনও নির্দিষ্ট সূত্র বা মাপকাঠি নেই। তা চিত্রকরের খ্যাতি, সামাজিক অবস্থান, ক্রেতার পছন্দ, আর্থিক ক্ষমতা— ইত্যাদি বহুবিধ বিষয়ের উপরে নির্ভর করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার পরিবর্তনও হয়।

Advertisement

সিবিআই সূত্র আরও বলছে, কেউ সৎ পথে রোজগার করে সেই টাকায় ছবি কিনলে তাঁদের কিছু বলার নেই। কিন্তু, সারদা-কর্তা সুদীপ্ত সেন এবং রোজ ভ্যালি-কর্তা গৌতম কুণ্ডুও ছবি কিনেছিলেন। তাঁদের বিরুদ্ধে জনগণকে ভুল বুঝিয়ে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। সিবিআইয়ের যুক্তি, সেই টাকা দিয়ে ছবি কেনা হয়েছে কি না, তা অবশ্যই তদন্তসাপেক্ষ।

আরও পড়ুন: নমশূদ্রদেরও পর্ষদ, আশ্বাস দিলেন মমতা

তা হলে শিবাজির কেনা ছবি কেন বাজেয়াপ্ত করা হল? সিবিআইয়ের এক কর্তার কথায়, ‘‘তদন্তের অঙ্গ হিসেবে এই ছবি নেওয়া হয়েছে। আরও ছবি নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’’

সিবিআইয়ের এই তৎপরতা প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহল বারবার জানিয়েছে, ছবি বিক্রি করে যা টাকা এসেছিল, তা মুখ্যমন্ত্রী মানুষের কল্যাণে ব্যয় করেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপালের ত্রাণ তহবিলে সেই টাকা দান করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: বিজেপিকে রুখতে মৌসম চান তৃণমূল-সঙ্গ

গত অক্টোবরেই শিবাজিকে দু’বার ডেকে জেরা করেন তদন্তকারীরা। তখনই বারবার উঠে এসেছে ছবি-প্রসঙ্গ। কোথা থেকে শিবাজি ওই ৫০ লক্ষ টাকা পেলেন, সে সংক্রান্ত নথিও চাওয়া হয়েছিল। শিবাজি এ দিন বলেন, ‘‘যে টাকা দিয়ে ছবি কেনা হয়েছিল, তার উৎস সংক্রান্ত যাবতীয় নথি সিবিআই-কে দেওয়া রয়েছে। সেই টাকার সঙ্গে কোনও চিটফান্ডের সম্পর্ক নেই।’’ শিবাজির দেওয়া নথি যাচাইয়ের জন্য ব্যবসায়ী, প্রযোজক কৌস্তুভ রায়কেও ডেকে পাঠানো হয়েছিল। এক সময়ে শিবাজি ও কৌস্তুভ একসঙ্গে ব্যবসা করতেন।

কৌস্তুভের দাবি, ‘‘এই ছবির বিষয়ে সবচেয়ে ভাল বলতে পারবেন মুকুল রায়। শুনেছি, সুদীপ্ত পালিয়ে যাওয়ার আগে মুকুলের সঙ্গে দেখা করে গিয়েছিলেন। সারদা তদন্তে সিবিআই-কে সবচেয়ে বেশি সাহায্য মুকুলই করতে পারবেন। আর সিবিআই বোধ হয় নিজেদের অফিস সাজানোর জন্যই এখন এই সব ছবি নিচ্ছে।’’

মুকুল রায়কে ফোনে ধরা হলে তিনি বলেন, ‘‘২০১৫ সালের ডিসেম্বরে সিবিআই আমাকে ডেকে ৮ ঘণ্টা জেরা করেছিল। তখন যা জানানোর, সব জানিয়েছি। আমি এখন বিজেপি-তে রয়েছি বলে কিছু লোক পিঠ বাঁচানোর জন্য আমার নাম করছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন