হলফনামায় অবশ্য সরাসরি মমতার নাম করা হয়নি, বলা হয়েছে ‘পশ্চিমবঙ্গের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী’।
সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়া হলফনামায় এই প্রথম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আঁকার ছবির প্রসঙ্গ তুলল সিবিআই। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি জমা দেওয়া এই হলফনামায় মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে সারদা গোষ্ঠী পরিচালিত টিভি সংস্থাকে টাকা দেওয়ার প্রসঙ্গও রয়েছে। হলফনামায় অবশ্য সরাসরি মমতার নাম করা হয়নি, বলা হয়েছে ‘পশ্চিমবঙ্গের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী’।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি কলকাতার তৎকালীন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বাড়িতে সিবিআই হানার সময়ে বাধা পেয়ে, পুলিশের অতিসক্রিয়তা এবং আদালত অবমাননার (যে হেতু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সিবিআই তদন্ত করছে) অভিযোগ এনে পরের দিনই সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল সিবিআই। সে দিন এবং আদালতের নির্দেশে পরের দিন, পর পর দু’টি হলফনামা জমা দেওয়া হয়। তার পরেও সিবিআইয়ের যুক্তি ছিল, ঘটনার আকস্মিকতায় অফিসারেরা এতটাই হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলেন যে, বিস্তারিত ঘটনা জানতে আরও সময় লেগে যায়। ১৮ তারিখ হলফনামার আকারে সেই বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দিয়েছে সিবিআই।
সেই হলফনামার ২৬ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সারা ভারত তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপত্র মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা বেশ কিছু ছবি প্রায় ৬.৫ কোটি টাকায় বিক্রি করেছে। তদন্তে দেখা গিয়েছে, এ রকম বহু ছবি হয় কোনও বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থা অথবা তার ডিরেক্টর কিনেছেন। সিবিআইয়ের দাবি, ‘সিট’-এর তদন্তকে প্রভাবিত করতেই ওই সব ছবি কেনা হয়ে থাকতে পারে।
আরও পড়ুন: সার্জিকাল স্ট্রাইকের মাথাই রাহুলের তাস
সিবিআই হলফনামায় আরও জানিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ‘তারা টিভি’ নামে সারদা গোষ্ঠী পরিচালিত একটি সংস্থাকে ২০১৩ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৫ সালের মে মাস পর্যন্ত প্রায় ৬.২১ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। এই টাকায় সংস্থার কর্মীদের বেতন দেওয়া হয়। সিবিআইয়ের অভিযোগ, মূলত প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় সাহায্য দেওয়ার জন্য গঠিত তহবিল থেকে এমন একটা সময়ে এই টাকা দেওয়া হয়েছে, যখন সারদার লোক ঠকানোর কথা সবাই জেনে গিয়েছে এবং রাজ্য সরকার গঠিত ‘সিট’ তার তদন্ত করছে। হলফনামায় সিবিআই দাবি করেছে, রাজ্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্তাব্যক্তিরা যে অর্থ লগ্নি সংস্থাগুলির সঙ্গে বৃহত্তর যড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন, এই সব ঘটনাই তার প্রমাণ।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর রাজনৈতিক যাত্রা সম্বন্ধে কতটা জানেন?
সিবিআইয়ের ১৮ তারিখের এই হলফনামা নিয়ে রাজ্যের তরফে আপত্তি জানানো হয়। বলা হয়, দু’বার হলফনামা জমা দেওয়ার পরে আবার কেন তা দেওয়ার প্রয়োজন পড়ল? যদিও সেই আপত্তি মানতে চায়নি শীর্ষ আদালত। কিন্তু আদালত অবমাননার সঙ্গে ছবি বিক্রির সম্পর্ক কী? সিবিআই সূত্রের বক্তব্য, বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থাগুলি কেন মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা ছবি কিনেছিল, সে ব্যাপারে তদন্ত শুরু করেছে তারা। আর তা ঠেকাতে যে রাজ্য প্রশাসন সক্রিয় সেটাই বোঝাতে চাওয়া হয়েছে। তৃণমূল দলগত ভাবে এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চায়নি। তবে, দলের এক নেতার কথায়, ‘‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে এ সব করা হচ্ছে। নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ততই এই দুরভিসন্ধি বেশি করে সামনে আসছে। কিন্তু এ সব করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভয় পাওয়ানো যাবে না।’’