ফের ডাকা হবে শঙ্কুকে, এক তৃণমূল সাংসদকেও তলব করল সিবিআই

১৩ দিন বাদে অবশেষে তিনি সিবিআই দফতরে হাজির হলেন। নথিও জমা করলেন। এবং ঘণ্টা দুই বাদে বেরিয়েও গেলেন। চোখেমুখে ছিল না টেনশনের কোনও ছাপ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৯:৪৩
Share:

—ফাইল চিত্র।

১৩ দিন বাদে অবশেষে তিনি সিবিআই দফতরে হাজির হলেন। নথিও জমা করলেন। এবং ঘণ্টা দুই বাদে বেরিয়েও গেলেন। চোখেমুখে ছিল না টেনশনের কোনও ছাপ।

Advertisement

তবে এই স্বস্তি কত দিন স্থায়ী হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কেননা সিবিআই সূত্রের দাবি, নথিসহ যে সব ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছিল তার কিছু তিনি জমা করেছেন, কিছু ক্ষেত্রে দেননি। যে সব নথি দিয়েছেন, সেখানেও রয়েছে একাধিক অসঙ্গতি। ফলে ফের শঙ্কুদেবকে তলব করার সম্ভাবনা রয়েছে।

পাশাপাশি, সারদা কাণ্ডে রাজ্যসভায় শাসক দলের আরও এক সাংসদকে মৌখিক ভাবে তলব করা হয়েছে। রাজ্যসভার শীতকালীন অধিবেশন শেষ হলেই তিনি সিবিআই দফতরে আসবেন বলে জানিয়েছেন। এমনটাই সিবিআই সূত্রের খবর। তবে ওই সাংসদের নাম প্রথম বার সারদা কাণ্ডে উঠে এল বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীদের একাংশ।

Advertisement

আরও পড়ুন: নেতাদের জানিয়েই টাকা নিয়েছি, দাবি শঙ্কুর

চলতি মাসের শুরুতেই সিবিআই দফতরে হাজির হয়েছিলেন শঙ্কুদেব। সে বার প্রায় ঘণ্টা আড়াইয়ের জেরার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। কয়েক দিনের মধ্যেই নথি-সহ বেশ কিছু প্রশ্নের জবাব দেওয়ার আশ্বাস দিয়েও ১৩ দিন বাদে সোমবার সিবিআই দফতরে হাজির হন শঙ্কু।

এ দিন দুপুর সাড়ে ১২টার কিছু আগে শঙ্কুদেব হাজির হন সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআই দফতরে। নথি জমা দেওয়া এবং জিজ্ঞাসাবাদের পরে দুপুরে আড়াইটের কিছু আগে সিবিআই দফতর থেকে বেরিয়ে যান তিনি।

সূত্রের দাবি, সারদার একটি চালু না হওয়া বৈদ্যুতিন চ্যানেল থেকে দু’বছরে প্রায় ৫৫ লক্ষ টাকা পেয়েছেন ওই তৃণমূল নেতা। তার আগে যে সব বৈদ্যুতিন চ্যানেলে শঙ্কু কাজ করতেন, তার তুলনায় কয়েকশো গুণ বেশি বেতন সারদার চ্যানেলে পেয়েছিলেন তিনি। কীসের ভিত্তিতে তিনি ওই পরিমাণ বেতন পেতেন? ওই বেতনের বদলে তিনি কী ধরনের পরিষেবা সেই সংস্থাকে দিয়েছেন? যে টাকা পেয়েছিলেন তা কী ভাবে খরচ করেছেন শঙ্কু।

প্রথম বার জিজ্ঞাসাবাদে ওই সব প্রশ্নে শঙ্কু কার্যত বেকায়দায় পড়েছিলেন। তাঁর জবাবে একাধিক অসঙ্গতি দেখা দিয়েছিল। সে সব প্রশ্নের নথি-সহ ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছিল শঙ্কুকে। কিন্তু এ দিনের জমা পড়া নথি থেকে সেই সব প্রশ্নের স্পষ্ট জবাব মেলেনি বলেই সিবিআই সূত্রের খবর।

পাশাপাশি ব্যক্তিগত ও পারিবারিক স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি সংক্রান্ত প্রশ্নেও শঙ্কু প্রথম বার সন্তুষ্ট করতে পারেননি তদন্তকারীদের। সূত্রের দাবি, পূর্ব মেদিনীপুরের আঠিলাগোড়ির সাতমাইলের বাসিন্দা শঙ্কুদেবের বাবা এক জন অবসরপ্রাপ্ত বেসরকারি পরিবহণ কর্মী, মা গৃহবধূ। এমন আর্থিক অবস্থা থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে শঙ্কুদের বিলাসবহুল বাড়ি তৈরি হল। সেই অর্থ এল কোথা থেকে? সিবিআইয়ের এক কর্তা জানান, ওই বাড়ি তৈরিতে যে সব ইমারতি দ্রব্যের সরবরাহ হয়েছিল, সে সব জানতে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতে এসেছে। ফলে শঙ্কুদেবের কাছে তাঁর সম্পত্তি সংক্রান্ত তথ্যের প্রয়োজন ছিল।

এ দিন শঙ্কুর জমা করা নথিতে অসঙ্গতি দূর হয়নি বলেই সূত্রের দাবি। যেমন বিভ্রান্তি দূর হয়নি শঙ্কুদেবের কলকাতার ঠিকানা নিয়েও। কলকাতার স্থায়ী ঠিকানা জানতে চাওয়ায় শঙ্কুর জবাব ছিল, “তৃণমূল ভবন”। তদন্তকারীদের একাংশের দাবি, তৃণমূল ভবন কী ভাবে কোন তথ্যের ভিত্তিতে তাঁর স্থায়ী ঠিকানা হল, সেই নথিও চাওয়া হয়েছিল। এ শঙ্কুর জমা করা নথিতে সেই প্রশ্নের ব্যাখ্যা মেলেনি।

তবে শঙ্কুদেব সিবিআইকে একেবারে নিরাশ করেননি। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে ইডির জিজ্ঞাসাবাদের মুখেও শঙ্কু ঘুরপথে দলের অনেক প্রভাবশালী নেতার নাম টেনে এনেছিলেন বলে সূত্রের খবর। সিবিআইয়ের প্রশ্নের মুখেও তিনি দলের নেতাদের টেনে এনেছেন। বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম বিভিন্ন প্রসঙ্গে শঙ্কুর বয়ানে উঠে এসেছে বলে সিবিআই সূত্রের দাবি।

তদন্তকারীদের বক্তব্য, মুখে কারও নাম বললেই সেটা গ্রহণযোগ্য হবে না। শঙ্কুর এ দিনের জমা করা নথিতে অবশ্য সে সংক্রান্ত কোনও তথ্য ছিল না। তবে যেটুকু নথি তিনি দিয়েছেন। তার সঙ্গে নিজেদের সংগ্রহ করা তথ্যের ভিত্তিতে শাসক দলের আরও এক রাজ্যসভার সাংসদকে ফোন করে আসতে বলা হয়েছে। যদিও শীতকালীন অধিবেশন শেষ হলেই যোগাযোগ করবেন বলে জানিয়েছেন সেই সাংসদ— এমনটাই সূত্রের দাবি। একটি বৈদ্যুতিন চ্যানেলের বিষয়ে খোঁজখবর করতে গিয়ে শঙ্কুর পাশাপাশি সেই সাংসদের নামও তদন্তে উঠে এসেছে।

তবে সাংবাদিকদের যাবতীয় প্রশ্নের জবাব দেওয়ার আশ্বাস দিয়েও এ দিন সিবিআই দফতরে থেকে বেরিয়ে শঙ্কুর জবাব ছিল ‘নো কমেন্টস’।

শঙ্কুকে জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি এ দিন সিবিআই অ্যাঞ্জেল অ্যাগ্রিটেক নামে একটি অর্থলগ্নি সংস্থার ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা ও এ রাজ্য মিলিয়ে মোট ২০টি জায়গায় অফিস ও শেখ নাজিবুল্লা, হাসিবুল হক, সুনির্মল গোস্বামী, অরিন্দম পাল, বাসুদেব ঘোষ, ফাল্গুনী চট্টোপাধ্যায় -সহ একাধিক কর্তাব্যক্তিদের বাড়িতে হানা দিয়েছে সিবিআই। তাঁদের মধ্যে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বহু গুরুত্বপূর্ণ নথি। সেই সূত্রেই ফের একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে। তার মধ্যে শাসক দলের প্রাক্তন এক মন্ত্রীর নামও রয়েছে বলে সিবিআই সূত্রের খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন