রোজ ভ্যালির মতো সারদা মামলার তদন্তও ওড়িশার ভুবনেশ্বরে সরিয়ে নিতে চাইছে সিবিআই। এতে ভিন্ রাজ্যের অপরিচিত পরিবেশে অভিযুক্তদের উপরে যেমন চাপ বাড়ানো যাবে, তেমনই আদালতে আসা-যাওয়ার পথে রাজনৈতিক কর্মী-সমর্থকদের বিক্ষোভ এড়ানো যাবে বলে মত তদন্তকারীদের।
ভুবনেশ্বরে সারদা সংস্থার বিরুদ্ধে মামলাও রয়েছে। সেই মামলাতেই সম্প্রতি ওই সংস্থার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন ও তাঁর একদা সঙ্গী দেবযানী মুখোপাধ্যায়কে আদালতের নির্দেশে কলকাতা থেকে ভুবনেশ্বরে তুলে নিয়ে গিয়ে জেরা করেছে সিবিআই। এখন অবশ্য দু’জনেই কলকাতার জেলে। সিবিআইয়ের এক কর্তা বলেন, ‘‘সারদা ও রোজ ভ্যালি কাণ্ডে আরও কয়েক জন প্রভাবশালী নেতা-মন্ত্রীকে হেফাজতে নেওয়ার দরকার পড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে না রেখে তাঁদের উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে ভুবনেশ্বরে। সেখানেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’’
অতীত অভিজ্ঞতা থেকে সিবিআই অফিসারেরা মনে করছেন, এই রাজ্যে বসে প্রভাবশালী নেতাদের গ্রেফতার করে নিজেদের হেফাজতে রেখে জেরা করার ক্ষেত্রে বিবিধ সমস্যা রয়েছে। এক তদন্তকারী বলেন, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী মদন মিত্রকে গ্রেফতারের পরে দিনের পর দিন তাঁর অনুগামীরা আদালতে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। সরকারি কাজে বাধা দিয়েছেন। সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রেফতারের পর কলকাতার রাস্তাঘাট অবরুদ্ধ করে দিয়েছিলেন শাসক দলের কর্মী-সমর্থকেরা। পরের দিন থেকে সেই যে সিজিও কমপ্লেক্সের সামনে বিক্ষোভ-অবস্থান শুরু হয়েছে, সোমবারও তা কমেনি। রাস্তা আটকে বিক্ষোভ হয়েছে সায়েন্স সিটির সামনেও।
এই পরিস্থিতি এড়াতে চায় সিবিআই। তদন্তকারীদের একাংশ বলছেন, সুদীপ ও তাপসকে কয়েক দিন ধরে যে ভাবে ভুবনেশ্বরের অফিসে বসিয়ে নিশ্চিন্তে জেরা করা গিয়েছে, তা এই রাজ্যে সম্ভব নয়। তা ছাড়া, এ রাজ্যে দায়ের হওয়া মামলায় রোজ ভ্যালি কাণ্ডে জড়িত অভিযুক্তদের গ্রেফতার করায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাই ভুবনেশ্বরে দায়ের হওয়া মামলার সূত্র ধরেই গ্রেফতার করা হয়।
তবে সারদা মামলার ক্ষেত্রে আদালতের এমন কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। তাই ওই মামলার তদন্তে এক সময়ে একের পর এক প্রভাবশালীকে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। আচমকাই গতি পেয়েছে সারদা ও রোজ ভ্যালি-সহ বিভিন্ন অর্থলগ্নি সংস্থার তদন্ত। সিবিআই সূত্রের খবর, কিছু দিনের মধ্যেই আইকোর ও প্রয়াগের মতো সংস্থার বিরুদ্ধে জমা পড়া অভিযোগ ধরে তদন্ত শুরু হবে। আজ, মঙ্গলবার এমপিএস নামে একটি সংস্থার মামলাতেও দিল্লি থেকে কলকাতায় আনা হচ্ছে বাছাই আইনজীবীদের। এ ভাবেই চার দিক থেকে চেপে ধরার কৌশল এঁটেছেন তদন্তকারীরা।
সংস্থা সূত্রের খবর, ভুবনেশ্বরে দায়ের হওয়া সারদা মামলার সূত্র ধরে সুদীপ্তকে ফের সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে। সারদা রিয়েলটি ও সারদা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস নিয়ে দু’টি পৃথক মামলা ছাড়াও সমস্ত শাখা সংস্থা নিয়ে অন্য একটি মামলা করেছে সিবিআই। তদন্তকারীদের কথায়, এক এক জন নেতার সঙ্গে একাধিক অর্থলগ্নি সংস্থার যোগ ছিল। তাঁদের অনেকেই পদ ও ক্ষমতা ভাঙিয়ে আত্মীয়স্বজনকে ওই সব সংস্থার কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন এবং সেই সুবাদে নানা সুবিধা নিয়েছেন।
তদন্তকারীদের একাংশ জানাচ্ছেন, শুধু রোজ ভ্যালি ও সারদা কাণ্ডে অসম, ত্রিপুরা ও ঝাড়খণ্ডেও মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। কারণ, ওই সব রাজ্যেও অর্থলগ্নি সংস্থাগুলো ব্যবসা ছড়িয়েছিল। এবং সেখানেও মানুষের টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ জমা পড়েছে সিবিআইয়ের কাছে।
গৌতমের মাকে ডাক ইডি-র
রোজ ভ্যালির কর্ণধার গৌতম কুণ্ডুর মা বিভাদেবী (৭২)-কে ডেকে পাঠাল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। সোমবার বিকেলে তাঁর দক্ষিণ কলকাতার ফ্ল্যাটে নোটিস পাঠিয়ে মঙ্গলবারেই সল্টলেকে ইডি-র দফতরে আয়কর ফাইল, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিবরণ-সহ যেতে বলা হয়েছে। রোজ ভ্যালি নিয়ে অভিযোগ ওঠার পরে নিজের হোটেল ব্যবসার নাম বদলে ‘চকোলেট হোটেলস’ করে মা-কে অন্যতম ডিরেক্টর করেন গৌতম।