বন্ধুর মতো পড়াতে হবে, বলছে বোর্ড

‘আমি সব জানি’— এমন মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে শিক্ষকদের। পড়ুয়াদের থেকে প্রতি দিন নতুন কিছু শেখার ভাবনা নিয়েই যেতে হবে ক্লাসে। এ ভাবেই স্কুল শিক্ষকদের মানসিকতা গড়ে তুলতে পরামর্শ দিল সেন্ট্রাল বোর্ড অব সেকেন্ডারি এডুকেশন (সিবিএসই)।

Advertisement

সুপ্রিয় তরফদার

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৫২
Share:

‘আমি সব জানি’— এমন মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে শিক্ষকদের। পড়ুয়াদের থেকে প্রতি দিন নতুন কিছু শেখার ভাবনা নিয়েই যেতে হবে ক্লাসে। এ ভাবেই স্কুল শিক্ষকদের মানসিকতা গড়ে তুলতে পরামর্শ দিল সেন্ট্রাল বোর্ড অব সেকেন্ডারি এডুকেশন (সিবিএসই)।

Advertisement

সেই মতো শিক্ষকদের মধ্যে ভাবধারা প্রসারে উদ্যোগী হলেন সিবিএসই-র অধীনস্থ অভিনব ভারতী স্কুল কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি ৬০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে নিয়ে স্কুলে কর্মশালাও করলেন তাঁরা। ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক আরও মধুর করতে শিক্ষকদের কার্যত কাউন্সেলিংও করানো হল।

শিক্ষামহলের মত, বর্তমানে ক্লাসরুমের সংজ্ঞা বদলে গিয়েছে। ব্ল্যাকবোর্ড-চকের থেকে গ্রহণযোগ্যতা ও ব্যবহার বেড়েছে প্রোজেক্টরের। স্মার্ট হয়েছে ক্লাসরুম। কিন্তু, এখনও শিক্ষকদের একটা বড় অংশ পুরনো ধারণা থেকে বেরোতে পারেননি। সে কারণে প্রথমেই শিক্ষকদের মধ্যে থেকে ‘সব জানি’ মনোভাব দূর করতে সচেষ্ট হয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

অভিনব ভারতী স্কুলের অধ্যক্ষা শ্রাবণী সামন্ত জানান, ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ বি এড কলেজের অধ্যক্ষ ফাদার পল পুদুসেরাইকে ওই কর্মশালায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তিনি শিক্ষকদের বলেছেন, ক্লাসরুম তাঁদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা উপুড় করে দেওয়ার জায়গা নয়। বরং তা পড়ুয়াদের আনন্দের জগৎ। তাই সেখানে গুরু হিসেবে নয়, যেতে হবে বন্ধু হয়ে। বলার থেকে শুনতে হবে বেশি। সেই ফাঁকেই পড়ুয়াদের দিয়ে পঠনপাঠন করিয়ে নিতে হবে। জোর করে নয়, ভালবেসে পড়ুয়াদের মধ্যে জ্ঞানের প্রসার ঘটানোই প্রধান উদ্দেশ্য বলে জানান শ্রাবণীদেবী। তাঁর মত, এ ভাবে চললে পড়ুয়ারা আরও বেশি করে পড়াশোনায় মনোযোগী হবে।

শ্রাবণীদেবীর কথায়, এখনকার শিশুদের কাছে পরিবারের চিত্রটাই বদলে গিয়েছে। যে পরিবারে মা-বাবা দু’জনেই চাকরি করেন, সেখানে বাচ্চারা তাঁদের কাছে পায় না। সে কারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিশুদের মধ্যে মূল্যবোধের অভাব দেখা যায়। স্কুল স্তর থেকেই শিশু মনে যাতে সেই মূল্যবোধ গড়ে ওঠে, তার দায়িত্ব নিতে হবে শিক্ষকদেরই। তিনি বলেন, ‘‘স্কুলের শিক্ষকেরা সেই দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু কোথাও যেন খামতি না থাকে, সে জন্যই এই কর্মশালা।’’

শহরের একটি স্কুলের অধ্যক্ষা রেখা বৈশ্য বলেন, ‘‘দিন বদলের সঙ্গে সঙ্গে আমাদেরও বদলাতে হবে। উপর থেকে নয়, শিশুদের পড়াতে হবে তাদের স্তরে নেমে গিয়ে। তবেই শিক্ষা সম্পূর্ণ হবে। ওই স্কুলের এমন উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়।’’

অন্য এক স্কুলের ডিরেক্টর দেবী কর এই উদ্যোগকে সমর্থন করেছেন। পাশাপাশি তিনি বলছেন, ‘‘শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উচিত বাবা-মায়ের মতো করে পড়ানো। তবে ভালবাসা ও বন্ধুত্বের পাশাপাশি শিক্ষকদের প্রতি পড়ুয়াদের একটু ভয়ও থাকা প্রয়োজন। না হলে সব উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ হবে না।’’

বাংলা মাধ্যম স্কুলেও এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পড়ুয়াদের পড়ানোর আগে শিক্ষকদেরও ভালবাসার পাঠ দিতে উদ্যোগী হয়েছে স্কুলশিক্ষা দফতর। বিক্ষিপ্ত ভাবে হলেও বিভিন্ন জেলায় গিয়ে সেই কাজ শুরু করেছে বিশেষজ্ঞ কমিটি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন