ছবি: সুব্রত জানা।
একাধিক দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে কয়েক মাস আগে নজরদারির জন্য কোনা এক্সপ্রেসওয়েতে বসানো হয় সিসি ক্যামেরা। এ বার সিসি ক্যামেরার নজরদারিতে মুড়ে দেওয়া হচ্ছে মুম্বই রোডকেও।
কয়েকমাস আগে সাঁতরাগাছিতে কোনা এক্সপ্রেসওয়ের উপরে পথ দুর্ঘটনায় অভিনেতা পীযূষ গঙ্গোপাধ্যায়ের মৃত্যু হয়। তারপরই এই রাস্তায় যান নিয়ন্ত্রণে বসানো হয় সিসি ক্যামেরা। মুম্বই রোডেও বেড়ে গিয়েছে দুর্ঘটনা। বিশেষ করে হাওড়ায় মুম্বই রোডের উপরে জনবহুল এলাকাগুলিতে দুর্ঘটনা যে ভাবে বাড়ছে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন জেলা প্রশাসনের কর্তারা। সম্প্রতি শরৎসদনে জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই বিষয়েও তাঁর উদ্বেগের কথা জানান।
মুম্বই রোড তথা ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে সিসি ক্যামেরা বসছে পরিবহণ দফতরের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে। পরিবহণ দফতরই প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা দেবে। গ্রামীণ জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, এ জন্য মোট ২২টি জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। ধূলাগড়ি, রানিহাটি, উলুবেড়িয়া চেকপোস্ট-এর মতো জায়গায় যেখানে পুলিশ বুথ আছে, সেখানে বসানো হবে সিসি ক্যামেরা ও টিভি। বাকি জায়গাগুলিতে বসানো হবে শুধুমাত্র ক্যামেরা। ২৪ ঘণ্টাই বুথ থেকে টিভির মাধ্যমে পুরো ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হবে।
পুলিশ ও জাতীয় সড়ক সংস্থার কর্তাদের বক্তব্য, মুম্বই রোডে দুর্ঘটনার মূল কারণ এক শ্রেণির চালকের বেপরোয়া মনোভাব। যত্রতত্র লেন ভেঙে অন্য লেনে চলে আসায় বিপরীত দিকের গাড়ির মুখোমুখি পড়ে যাওয়ায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়া বেপরোয়াভাবে বাইক চালানোর জন্যও ঘটছে দুর্ঘটনা। এ বার থেকে সবই পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হবে সিসি ক্যামেরার সাহায্যে। সেইমতো ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।
শুধু দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণই নয়। সম্প্রতি উলুবেড়িয়া থানা এলাকাতেই মাত্র চার দিনের ব্যবধানে মুম্বই রোডের ধারে পর পর দু’টি দেহ উদ্ধারের ঘটনাও চিন্তায় ফেলেছে পুলিশকে। প্রাথমিক তদন্তে অন্যত্র খুন করে দেহ ফেলে রাখার তথ্য উঠে এলেও মুন্বই রোডে দুষ্কৃতীমূলক কাজকর্ম ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার প্রশ্নে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের তদন্তে সিসি ক্যামেরা সহায়ক হবে বলে গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক পদস্থ কর্তা জানান। হাওড়া গ্রামীণ এলাকায় ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় বেশ কম। ফলে আলমপুর থেকে কোলাঘাট পর্যন্ত এই বিশাল এলাকায় এত কম সংখ্যক পুলিশ নিয়ে ২৪ ঘণ্টা নজরদারি সম্ভব নয়। সেই ফাঁক অনেকটাই পূরণ করবে সিসি ক্যামেরা।
কীভাবে?
গ্রামীণ জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, ধূলাগড়ি, রানিহাটি, উলুবেড়িয়া চেকপোস্ট এলাকায় রয়েছে ট্রাফিক পুলিশের বুথ। এই সব বুথে ক্যামেরা থাকবে। থাকবে ক্লোজ সার্কিট টিভিও। এছাড়া অপরাধপ্রবণ বলে চিহ্নিত এবং যেখানে গাড়িগুলি যত্রতত্র লেন ভাঙার জন্য দুর্ঘটনা ঘটে সেইসব এলাকাকে বেছে নিয়ে বসানো হবে সিসি ক্যামেরা। কোথাও কোনও বেচাল দেখলেই ওইসব জায়গায় কর্তব্যরত পুলিশকে সতর্ক করা হবে। ইতিমধ্যেই রানিহাটিতে সিসি ক্যামেরা ও টিভি বসানো হয়েছে। শুধু দিনে নয়, রাতেও যাতে সিসি ক্যামেরা কাজ করতে পরে সে জন্য বসানো হয়েছে হাইমাস্ক আলো। গ্রামীণ জেলা পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন বলেন, ‘‘বাকি জায়গাগুলিও চিহ্নিত হয়েছে। শীঘ্রই সর্বত্র সিসি ক্যামেরা বসানো হবে।’’
নয়া ব্যবস্থায় খুশি সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারাও। রানিহাটির বাসিন্দা মকসুদ আলমের কথায়, ‘‘এখানে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। আশা করি নতুন পদ্ধতিতে পুলিশের নজরদারিতে দুর্ঘটনা কমবে।’’