ঘাটালের সাংসদ দেব। এখনও অবধি একবারও পুরভোটের প্রচারে ঘাটাল যাননি। সাংসদ সন্ধ্যা রায়কে দেখা যায়নি মেদিনীপুরে।
রায়গঞ্জের সাংসদ মহম্মদ সেলিম। দীপা দাশমুন্সি এলাকা চষে ফেললেও, দুটি দিন বই দেখা মেলেনি বাম সাংসদের।
বাঁকুড়ায় পুরভোট, কিন্তু তৃণমূল সাংসদ মুনমুন সেন প্রচারে কই?
কলকাতার প্রচারে দেখা গেলেও, শিলিগুড়িতে নেই বিজেপি সাংসদ সুরিন্দর সিংহ অহলুওয়ালিয়া।
দলের বড় নেতাদের ‘ডেট’ না পেয়ে রীতিমতো অভিমানী হয়ে পড়ছেন জেলার নেতারা। বড় নেতার খোঁজে চাতকের মতো অপেক্ষায় জেলার ভোট ম্যানেজাররা। নিজের দলের প্রচারে নামী-দামী হেভিওয়েটদের এলাকায় আনতে নিয়ম করে কলকাতার নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন জেলার নেতারা। ডান, বাম কমবেশি সব দলেরই এখন ছবি এক। কিন্তু কলকাতার ভোট মেটার আগে জেলায় তারকারা যাবেন, সেই আশা কম। কিন্তু ততদিনে প্রচারের সময় আর কতটুকুই বা বাকি থাকবে জেলায়? কলকাতার ভোট শেষ ১৮ এপ্রিল, আর জেলার প্রচার শেষ ২৩ এপ্রিল। দুয়ের মাঝে থাকছে সাকুল্যে পাঁচ দিন। অগত্যা ছোট ছোট সভা করে নির্বাচনের প্রচারে জোর দিচ্ছেন জেলার নেতারা।
কিন্তু বাড়ি বাড়ি গিয়ে কতটাই বা কাজ হয়? বড় নেতা না হলে তেমন ধামাকাদার প্রচার হয় না। কলকাতার নেতাদের তালিকায় শাসকদলের পার্থ চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, শুভেন্দু অধিকারী, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, সুব্রত মুখোপাধ্যায়দের জেলায় পেতে মরিয়া শাসকদল। তেমনই, বাবুল, শমীক ভট্টাচার্য, রাহুল সিংহের ডেট পেতে আর্জি আসছে থেকে জেলা বিজেপি কর্মীদের থেকে। বামেদের তালিকায় সুজন, সেলিম আর সূর্যকান্ত মিশ্রের ডাক আসছে ঘনঘন।
গঙ্গাপারের জেলা হুগলি লোকসভা নির্বাচনের পর ফের পুরভোট নিয়ে সরগরম। হুগলিতে এবার মোট ১৩টি পুরসভায় ভোট। হাওড়া থেকে নেতাদের উজিয়ে আনছেন হুগলির নেতারা। কেন না এবার হাওড়াতে একমাত্র উলুবেড়িয়া ছাড়া অন্যত্র কোথাও ভোট নেই। হাওড়ার মাঝারি মাপের নেতারা তাই প্রচার চালাচ্ছেন হুগলিতে। তবে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, রত্না দে নাগ, বেচারাম মান্নারা নিয়মিত প্রচার চালাচ্ছেন। তৃণমূলের জেলার কার্যকারী সভাপতি দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘কলকাতায় নির্বাচন বলে বড় নেতারা ব্যস্ত। অথচ জেলাজুড়ে এতগুলো পুরসভায় নির্বাচন। আপাতত জেলার নেতারাই চালাচ্ছেন। পার্থবাবু, ফিরহাদ, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়দের নিয়ে তারপর পথে নামব বলে ঠিক রয়েছে। তবে কোনওটাই এখনও নিশ্চিত নয়।’’ নানা জায়গা থেকে প্রার্থীদের আর্জি সামলাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে দিলীপবাবুকে। ‘‘সব এলাকায় শেষ অবধি বড় মাপের প্রচার হবে না। সবার ক্ষোভ সামাল দিতে পারব না, তা বুঝতেই পারছি।’’
পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালে সেখানে পাঁচটি পুরসভার ভোট। অথচ শাসকদল তৃণমূল, বিজেপি বা কংগ্রেসের কোনও বড় নেতার দেখা নেই। ঘাটাল লোকসভার সাংসদ অভিনেতা দেব। তিনি পুরভোটের আগে এখনও শহরে পা রাখেননি। ঘটালের বিধায়ক শঙ্কর দলুই অবশ্য বলেন,‘‘কলকাতার ভোট মিটলেই ঘাটালে আমাদের দলের মন্ত্রী এবং অন্য নেতারা আসবেন। আমাদের সাংসদ দেব নিশ্চিত আসবেন।’’ ক্ষোভ বিজেপি প্রার্থীদের মধ্যেও। এক প্রার্থী বলেন,‘‘প্রতিদিনই দলের পতাকা ছিঁড়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রচারে বাধা যথারীতি চলছে। অথচ নেতারা পাশে নেই।’’ দলের জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় অবশ্য আশ্বাস দিচ্ছেন, ‘‘এ বার নিয়মিত যাব। কিছু ঘটলে আমরা পুলিশকেও বলছি।’’
উত্তরবঙ্গেও ছবিটা খুব আলাদা নয়। কালিয়াগঞ্জ জোনাল সম্পাদক দেবব্রত সরকার বলেন, ‘‘সাংসদ সেলিম সাহেব এপ্রিলের চার এবং সাত তারিখ প্রচার করে গিয়েছেন। সিপিএমের কর্মী-সমর্থকরা প্রতিদিনই তাঁকে প্রচারে চাইছে, তা অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু পার্টি কংগ্রেস নিয়ে তিনি ব্যস্ত।’’ আদৌ সেলিম আসবেন কি ভোট প্রচারে? ‘‘এখনও ডেট নিশ্চিত হয়নি,’’ বললেন দেবব্রতবাবু।
আজ, বৃহস্পতিবার শিলিগুড়িতে আসছেন অহলুওয়ালিয়া। সময়মতো পৌঁছতে পারলে এ দিন বিকেলেই সভা করবেন। নইলে ১৭ এপ্রিল থেকে টানা প্রচার করবেন। কলকাতার ভোট মিটলে আসতে পারেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, লকেট চট্টোপাধ্যায়ও। তবে তাতে ক্ষোভ থামছে না স্থানীয় নেতা-কর্মীদের। এক বিজেপি প্রার্থীর বক্তব্য, ‘‘তৃণমূলের জন্য উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব, সিপিএম-এর জন্য প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের মতো হেভিওয়েট নেতারা দিনের পর দিন প্রচার করে চলেছেন। সেখানে আমাদের প্রচারে একটাও বড় মুখ নেই। প্রচার শেষের দিনকয়েক আগে বড় নেতাদের এনে কতটা শেষরক্ষা করা যাবে?’’
ছবিটা একটু আলাদা উত্তর ২৪ পরগনায়। ওই জেলায় সদ্য গিয়েছে উপনির্বাচন। রাজ্যের শাসকদল সেখানে সসম্মানে উত্তীর্ণ। সবে শেষ হয়েছে তাঁদের পরীক্ষা। হাতেগরম ফল পেয়ে উজ্জীবিত জেলা নেতারা তাই যেন তুলনায় কিছুটা নিশ্চিত। প্রচারে যেন একটু ঢিলেঢালা ভাব তাঁদের। বড় জনসভা তো দূরে থাক, এখনও মাইক বেঁধে ওর্য়াডে ওয়ার্ডে তেমন প্রচার সভাই শুরু হয়নি বনগাঁ, গোবরডাঙা বা অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভায়। হেভিওয়েট নেতা অথবা তারকাদের পাবেন না ধরে নিয়েই স্থানীয় নেতাদের দিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন জেলার নেতারা।
বসিরহাট মহকুমায় এ বার ভোট হচ্ছে বাদুড়িয়া, টাকি ও বসিরহাট পুরসভায়। সেখানেও বাড়ন্ত সব দলের বড় নেতারা। এই পরিস্থিতি কী ভাবে দেখছেন স্থানীয় নেতারা? শাসকদলের এক স্থানীয় নেতার অবশ্য ব্যাখ্যা, ‘‘সম্প্রতি বসিরহাট বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের কোনও বড় নেতা ওই এলাকায় যেতে বাদ রাখেননি। সেই সব জনসভায় প্রচুর ভিড়ও হচ্ছিল। কিন্তু ভোটের বাক্সে তার প্রতিফলন কোথায় হয়েছিল ?’’ নেতারা নানা যুক্তির জাল বুনলেও অবশ্য সব দলের প্রার্থীদের মধ্যে এ নিয়ে যথেষ্ট ক্ষোভ রয়েছে। যদিও সেই ক্ষোভের কথা বলে পুরভোটের মুখে প্রার্থীরা নেতাদের বিরাগভাজন হতে চাননি। মধ্যমগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক রথীন ঘোষ বলেন, ‘‘পুরভোট বা পঞ্চায়েতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরই কিন্তু মানুষ বেশি করে চান।’’