খসড়ায় বদল, কেন্দ্রের হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত স্কুলে

নতুন খসড়ায় স্কুলশিক্ষায় কেন্দ্রের হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়ে বলা হয়েছে, রাজ্যের স্কুলগুলির কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রতিটি রাজ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা তৈরি করা হবে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৯ ০৪:০৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

পশ্চিমবঙ্গ তো বটেই, আপত্তি তুলেছিল অন্য অনেক রাজ্যও। এই পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় শিক্ষানীতির খসড়ায় কিছু পরিবর্তন করল কেন্দ্র। কিন্তু চিন্তা মোটেই কাটছে না শিক্ষা শিবিরের। তার বেশ কয়েকটি কারণ আছে। মূল কারণ, নতুন খসড়ায় স্কুলশিক্ষায় কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপেরই আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

Advertisement

বিভিন্ন রাজ্য বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানানোর পরে জাতীয় শিক্ষানীতির যে-চূড়ান্ত খসড়া তৈরি করা হয়েছে, তাতে আগের কিছু বিষয়ে রদবদল হয়েছে ঠিকই। কিন্তু নতুন খসড়ায় স্কুলশিক্ষায় কেন্দ্রের হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়ে বলা হয়েছে, রাজ্যের স্কুলগুলির কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রতিটি রাজ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা তৈরি করা হবে। স্কুলের পরিকাঠামো থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা— সব কিছুর উপরেই কড়া নজর থাকবে সেই সংস্থার।

জাতীয় শিক্ষানীতির প্রাথমিক খসড়ায় দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে সর্বজনীন শিক্ষার কথা বলা হয়েছিল। নতুন খসড়ায় জানানো হয়েছে, বিষয়টি ভাবনাচিন্তার স্তরে রয়েছে। আগের খসড়ায় প্রধানমন্ত্রীকে শীর্ষে রেখে রাষ্ট্রীয় শিক্ষা আয়োগ (আরএসএ) তৈরির প্রস্তাব ছিল। নতুন খসড়া বলছে, আরএসএ গড়া হবে, তবে তাতে প্রধানমন্ত্রী থাকছেন না। আগের ‘সেন্ট্রাল অ্যাডভাইসরি বোর্ড অব এডুকেশন’ বিলুপ্ত করে যে-আরএসএ গড়া হবে, তার মাথায় থাকবেন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী। তাতে ঠাঁই পাবেন অন্য কয়েক জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও। পালা করে কয়েক জন মুখ্যমন্ত্রীকেও রাখা হবে। থাকবেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও গবেষকেরা। কিন্তু তাঁদের কী ভাবে মনোনয়ন করা হবে, খসড়ায় সেটা স্পষ্ট নয়। রাজ্য স্তরেও শিক্ষা আয়োগ গড়া হবে। তার মাথায় থাকবেন সংশ্লিষ্ট রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী।

Advertisement

চিন্তার দ্বিতীয় কারণ, শিক্ষায় অর্থের যৎসামান্য জোগান। আগের খসড়া নীতিতে শিক্ষার জন্য বরাদ্দ অর্থ সম্পর্কে কিছুই বলা ছিল না। কেন এই বিষয়ে কিছু বলা হল না, সেই প্রশ্ন বড় হয়ে উঠছিল। চূড়ান্ত খসড়ায় বলা হয়েছে, জিডিপি-র মাত্র ৩% বা মোট সরকারি খরচের ১০% শিক্ষায় ব্যয় করা হবে। শিক্ষা শিবিরের মতে, এটা খুবই সামান্য। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের বক্তব্য, শিক্ষায় জিডিপি-র অন্তত ৬% বরাদ্দ না-করলেই নয়।

উদ্বেগের তৃতীয় কারণ, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিককে মিশিয়ে একটাই ‘সেকেন্ডারি স্টেজ’ তৈরির কথা বলা হয়েছে চূড়ান্ত খসড়ায়। এর ফলে দশম শ্রেণির পরে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে গরিব পরিবারের পড়ুয়ারা চাকুরির যে-চেষ্টা করত, সেটা আর সম্ভব হবে না বলে শিক্ষা শিবিরের আশঙ্কা। কেননা একটি স্তর চালু হলে বাড়তি এক বা দু’বছর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে। অনেক গরিব পড়ুয়ার পক্ষে সেটা সম্ভব না-ও হতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রথমে যা বলা হয়েছিল, চূড়ান্ত খসড়ায় তার পরিবর্তন হয়নি। বলা হয়েছে, ‘সতর্কতার সঙ্গে মনোনীত’ ব্যক্তিদের দিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে হবে। নতুন খসড়ায় সংস্কৃত শিক্ষার উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে ত্রিভাষা নীতির কথা।

এসইউসি-র শিক্ষক-নেতা তরুণ নস্কর মঙ্গলবার বলেন, ‘‘দেশ জুড়ে আন্দোলনের চাপে প্রথম খসড়ায় কিছু পরিবর্তন করা হলেও শিক্ষার সম্পূর্ণ আর্থিক দায়িত্ব গ্রহণ বা শিক্ষার গৈরিকীকরণের প্রশ্নে কোনও পরিবর্তনই করা হয়নি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন