রাজ্যকে চিঠি। নিজস্ব চিত্র
প্রিসাইডিং অফিসার রাজকুমার রায়ের মৃত্যু নিয়ে সিবিআই তদন্তের দাবি খতিয়ে দেখতে রাজ্য সরকারকে কেন্দ্রীয় সরকার চিঠি দিয়েছে বলে জানাল ওই অফিসারের মৃত্যুর বিচার চেয়ে আন্দোলনরত একটি সংস্থা। রাজকুমার হত্যার বিচার চাই মঞ্চ নামে ওই সংগঠনের আহ্বায়ক ভাস্কর ভট্টাচার্যের দাবি, গত ২৪ নভেম্বর কেন্দ্রের মানবাধিকার কমিশনের কাছে সিবিআই তদন্ত অথবা বিচারবিভাগীয় তদন্ত চেয়ে আবেদন করেছিলেন তাঁরা। সেই চিঠির জবাবেই গত ২৮ নভেম্বর কেন্দ্রীয় সরকার ওই চিঠি পাঠিয়েছে নবান্নে মুখ্য সচিবকে। তার প্রতিলিপি দিন কয়েক আগে হাতে পেয়েছেন ভাস্করবাবুরা।
আইন শৃঙ্খলার বিষয়টি রাজ্যের এক্তিয়ারে। সেই মতো সিবিআই তদন্তের জন্য রাজ্যের মত প্রয়োজন। তার উপর ইদানিং রাজ্য আরও কড়া ভাবে জানিয়েছে, সিবিআই রাজ্য সরকার মত ছাড়া এ রাজ্যে কোনও ঘটনার তদন্তে আসতে পারবে না। সে কারণে রাজ্যের হাতেই সেই বিষয়টি বিবেচনার জন্য দেওয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর কলকাতায় রাজকুমার হত্যার বিচার চাই মঞ্চের তরফে প্রতিবাদ সভা হয়। সেখান থেকেই সিদ্ধান্ত হয় কেন্দ্রীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে আবেদন করা হবে। ভাস্করবাবু বলেন, ‘‘রাজ্য মানবাধিকার কমিশন কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় আমরা চেয়েছিলাম ওই প্রিসাইডিং অফিসারের মৃত্যুতে সিবিআই তদন্ত হোক। বা বিচারবিভাগীয় তদন্ত হোক। সিবিআই তদন্তের উপরেই জোর দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের প্রতিশ্রুতি মতো কোনও ভোটকর্মীর মৃত্যু হলে ২০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক রাজকুমারবাবুর পরিবারকে। এখন ওই চিঠি পেয়ে রাজ্যের উচিত বিষয়টি খতিয়ে দেখা।’’
রাজকুমারবাবুর মৃত্যুর পরে তাঁর স্ত্রীকে রাজ্য সরকার পাঁচ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়। জেলাশাসকের দফতরে তিনি কাজও পান। রাজকুমারবাবুর শাশুড়ি দীপালি বর্মন ঘটনার সিবিআই তদন্ত চান। অর্পিতাদেবী বলেন, ‘‘ঘটনার তদন্ত হোক। কী ঘটেছে সেটা সামনে আসুক। দোষীরা শাস্তি পাক সেটা তো আমরা সকলেই চাইছি।’’
গত ১৪ মে ইটাহারের সোনাপুর বেসিক স্কুলের বুথে প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্বে ছিলেন রহতপুর হাই মাদ্রাসার ইংরেজির শিক্ষক রাজকুমারবাবু। ভোট পর্ব চলাকালীন ফোন এলে তিনি বুথ থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন বলে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়। পরদিন সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা নাগাদ রায়গঞ্জের সুদর্শপুর এলাকায় বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে রেল লাইনের উপর থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। রাধিকাপুর এক্সপ্রেসের চালক ট্রেনের ধাক্কায় এক জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছিলেন। এর পরেই আন্দোলনে নামেন শিক্ষক এবং ভোটকর্মীরা। রাজকুমারবাবুর দেহ দাহ না করে মাটিতে পুঁতে রাখা হয়। যাতে পরে সিবিআই বা বিচারবিভাগীয় তদন্ত হলে দেহের ফের পরীক্ষা করা যায়।
রহতপুর হাইমাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক সাহিদুর রহমনান বলেন, ‘‘ওই মৃত্য নিয়ে অনেক রহস্য। তাঁকে পাওয়া যাচ্ছে না শুনে পুলিশ তখনই ব্যবস্থা নিল না কেন? কোনও ভোটকর্মী এ ভাবে বেরিয়ে গেলে এফআইআর হয়েছে কী? যে অবস্থায় তাঁর দেহ রেল লাইন থেকে পাওয়া গিয়েছে, তা দেখে মনে হয় না তিনি আত্মহত্যা করেছেন। তাই সিবিআই তদন্ত চাওয়া হয়েছিল।’’