বাংলা আবাস যোজনায় ফের মিলল স্বীকৃতি

বাংলা আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরি নিয়ে যেখানে প্রায়ই অভিযোগ ওঠে, সেখানে এই সাফল্যের কারণ কী? স্থানীয় বাসিন্দা, উপভোক্তাদের প্রায় সকলেরই দাবি, ব্লক প্রশাসনের সক্রিয়তায় এটা সম্ভব হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঘাটাল শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:০৮
Share:

—প্রতীকী ছবি।

বাংলা আবাস যোজনায় পরপর তিন বছর রাজ্যের সেরা হল চন্দ্রকোনা-২ ব্লক। গত তিন বছরে ব্লক এলাকায় যতগুলি ঘর তৈরির কথা ছিল, নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট সময়েই প্রশাসন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে বলে দাবি।

Advertisement

বাংলা আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরি নিয়ে যেখানে প্রায়ই অভিযোগ ওঠে, সেখানে এই সাফল্যের কারণ কী? স্থানীয় বাসিন্দা, উপভোক্তাদের প্রায় সকলেরই দাবি, ব্লক প্রশাসনের সক্রিয়তায় এটা সম্ভব হয়েছে।

স্থানীয়দের একাংশের দাবি, এলাকার অনেকেই দেখেছেন, কাকভোরে বাড়ির দোরগোড়ায় হাজির হয়েছেন বিডিও। তারপর বাড়ি তৈরি প্রসঙ্গে একের পর এক প্রশ্ন করে চলেছেন। কোথায় অসুবিধা, সমস্যা হচ্ছে কি না কিংবা ওই টাকায় কী ভাবে ঘর করলে ভাল হবে সেই উপদেশও দিয়েছেন। এক উপভোক্তার দাবি, “আমি টাকা পেয়ে মেয়ের বিয়ে দেওয়ার কথা ভেবেছিলাম। উনি কী ভাবে সেটা জানতে পেরে গিয়েছিলেন। সোজা বাড়ি চলে এসেছিলেন। বলেছিলেন, প্রকল্পের টাকায় অন্য খরচ করলে তিনি পুলিশে ধরিয়ে দেবেন। আর দ্বিতীয় বার ভাবিনি।”

Advertisement

২০১৬-১৭ আর্থিক বছর থেকে রাজ্যে চালু হয় বাংলা আবাস যোজনা প্রকল্প। মূলত বাড়ি না থাকলে বা মাটির বাড়ি থাকলেই প্রকল্পটির সুবিধা পান উপভোক্তরা। প্রকল্পের নিয়ম হল, মোট চার কিস্তিতে প্রকল্পের টাকা পান উপভোক্তারা। মোট প্রকল্প ব্যয় এক লক্ষ ৩০ হাজার টাকা। সঙ্গে একশো দিনের প্রকল্পে ১৭ হাজার ২০০ টাকা দেওয়া হয়। মোট ১ লক্ষ ৪৭ হাজার টাকা করে পান উপভোক্তারা। কেন্দ্র সরকার দেয় মোট ৬০ শতাংশ টাকা। অর্থাৎ ৭৮ হাজার টাকা। আর রাজ্য দেয় ৫২ হাজার টাকা। বাকি একশো দিনের প্রকল্পে।

আগে ইন্দিরা আবাস যোজনায় গ্রামীণ এলাকায় এমন বাড়ি তৈরি হত। জেলা প্রশাসনের অভিজ্ঞতা বলছে, ইন্দিরা আবাস যোজনায় টাকা হাতে পেয়ে উপভোক্তাদের একাংশ সোনার গয়না কিংবা বাইক কিনেই টাকা খরচ করে ফেলত। কেউ কেউ বেড়াতে গিয়েও টাকা শেষ করে ফেলতেন। কেউ আবার মেয়ের বিয়েতেও খরচ করে ফেলতেন। বাংলা আবাস যোজনা শুরুতেও এমন প্রবণতা দেখা যাচ্ছিল জেলা জুড়ে। তবে প্রচার, বিডিওদের কড়া নজরদারি এবং সচেতনতা শিবিরের মাধ্যমে এখন সেই প্রবণতায় কিছুটা দাঁড়ি পড়েছে।

২০১৬-’১৭ অর্থবর্ষে চন্দ্রকোনা-২ ব্লক প্রশাসন নির্দিষ্ট সময়ে ৪২৪টি বাড়ি তৈরি করে রাজ্যের প্রথম হয়েছিল। পরের ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে ৩৩১টি বাড়ি তৈরি করে একই ভাবে সবার প্রথম লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে সক্ষম হয়েছিল ওই ব্লক। চলতি আর্থিক বছরেও বাংলা আবাস যোজনায় নির্দিষ্ট সময়ে ৫০৩টি বাড়ি তৈরি করে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করে ফেলেছে চন্দ্রকোনা-২ ব্লক। কাজে খুশি হয়ে ফের বাড়তি কিছু ঘর তৈরির দায়িত্ব পেয়েছে চন্দ্রকোনা। সেগুলির কাজ অবশ্য এখনও চলছে।

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সচিব প্রবীর ঘোষ বলছিলেন, “পরপর তিন বছর বাংলা আবাস যোজনায় একশোয় একশো চন্দ্রকোনা। বাকিরাও যাতে চন্দ্রকোনাকে অনুসরণ করে এমন সাফল্য পায় তার কথা বলছি। রাজ্যের মধ্যে সেরা হওয়ায় জেলারও অহঙ্কার চন্দ্রকোনা-২ ব্লক।”

আর বিডিও শাশ্বতপ্রকাশ লাহিড়ী বলছেন, “আমি যা করেছি এটা আমার দায়িত্ব ছিল। প্রকল্পের টাকা যাতে সেই প্রকল্পের কাজেই ব্যয় হয় সে জন্য যথাসাধ্য করেছি। আগামী দিনেও করব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন