সরকারি বাড়ি চাই? রয়েছেন লক্ষ্মণদা, শর্ত একটাই...

টাকা পেতে ব্যাঙ্কে ছোটাছুটিও তিনি করবেন। শর্ত একটাই— বাড়ি তৈরির ইট-বালি-সিমেন্ট নিতে হবে তাঁর থেকে।

Advertisement

অভিজিৎ চক্রবর্তী

চন্দ্রকোনা শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৮ ০৩:১৫
Share:

লক্ষ্মণ কামিল্যা। —নিজস্ব চিত্র।

সরকারি প্রকল্পে বাড়ি চান? ধরতে হবে কাউন্সিলরের স্বামীকে। উপভোক্তার হয়ে পুরসভায় তিনি তদ্বির করবেন। টাকা পেতে ব্যাঙ্কে ছোটাছুটিও তিনি করবেন। শর্ত একটাই— বাড়ি তৈরির ইট-বালি-সিমেন্ট নিতে হবে তাঁর থেকে।

Advertisement

রাজ্য জুড়েই ঘরবাড়ি তৈরি-সহ নানা ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট চালানোর অভিযোগ রয়েছে তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে। কয়েক দিন আগে খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও মেদিনীপুরের সভা থেকে সিন্ডিকেট প্রশ্নে বিঁধে গিয়েছেন এ রাজ্যের শাসক দলকে। পাল্টা জবাব দিয়েছেন তৃণমূল নেতারাও। তাঁদের দাবি, এ রাজ্যে সিন্ডিকেট রয়েছে। সে সিন্ডিকেট মানুষের, উন্নয়নের।

এ সবের মধ্যেই ইট-বালি-সিমেন্ট বিক্রির সিন্ডিকেট চালানোর অভিযোগে শোরগোল পড়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা পুরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডে। অভিযুক্ত লক্ষ্মণ কামিল্যা স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর রিনা কামিল্যার স্বামী। অভিযোগ, লক্ষ্মণদা পাশে না থাকলে ‘হাউস ফর অল’ প্রকল্পে বাড়ি পাওয়া প্রায় অসম্ভব। তৃণমূলের কাছেও এই অভিযোগ জমা পড়েছে। চন্দ্রকোনার তৃণমূল বিধায়ক ছায়া দোলই মানছেন, “অভিযোগ এসেছে। আমরা দলীয় স্তরে তদন্ত শুরু করেছি।”

Advertisement

কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের যৌথ এই প্রকল্পে নিয়ম মতো কাউন্সিলর এবং সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কমিটির উপভোক্তা তালিকা তৈরি করার কথা। পুরসভায় তালিকা জমা দেওয়া হলে তা পাঠানো হয় সুডা (স্টেট আরবান ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি)-র সদর দফতরে। নাম অনুমোদন হলে উপভোক্তার অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়ে। কয়েকটি ধাপে ৩ লক্ষ ৪৩ হাজার টাকা দেয় সরকার। ২৫ হাজার টাকা উপভোক্তাকে দিতে হয়।

অভিযোগ, রিনা কাউন্সিলর হলেও লক্ষ্মণই তালিকায় নাম ওঠা থেকে বাড়ি তৈরি— প্রতিটি ধাপ তদারক করেন। পেশায় ইমারতি দ্রব্যের ব্যবসায়ী লক্ষ্মণের থেকে যাঁরা বাড়ি তৈরির সরঞ্জাম নিতে রাজি হন না, তাঁরা বাড়িও পান না। এক উপভোক্তার কথায়, “প্রতিবাদ করলে এলাকায় টিকতে দেবে না।” আর এক উপভোক্তা বলেন, “চেকে সই করে রেখেছি। প্রকল্পের টাকা লক্ষ্মণদা-ই ব্যাঙ্কে গিয়ে তুলে নিয়ে আসেন।” পুরসভার তথ্য বলছে, এই প্রকল্পে ৩ নম্বর ওয়ার্ডে গত দু’বছরে একশোর কাছাকাছি বাড়ি তৈরি হয়েছে। তার সিংহ ভাগই হয়েছে লক্ষ্মণের দেওয়া ইট-বালি-সিমেন্টে।

অভিযোগ সত্যি?

তৃণমূল কাউন্সিলর রিনা মন্তব্য করতে রাজি হননি। লক্ষ্মণের বক্তব্য, “আমি তো ব্যবসা করি। আমার ওয়ার্ডে কোনও বাড়ি হলে যে কেউ বালি-সিমেন্ট নিতেই পারেন। এতে জোরাজুরির ব্যাপার নেই।” তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত হচ্ছে বলেই অভিযোগ লক্ষ্মণের।

বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক তথা চন্দ্রকোনার নেতা মধুসূদন কোলের কটাক্ষ, ‘‘কাউন্সিলরের স্বামী একা এত বড় দুর্নীতি করতে পারেন না। লাভের গুড় শাসক দলের সকলেই খায়।’’ বিরোধীশূন্য চন্দ্রকোনার পুরসভার চেয়ারম্যান অরূপ ধাড়া বলেন, “আমাকে লিখিত ভাবে কেউ কিছু জানায়নি। খোঁজ নেব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন