আবার আটকে উপাচার্য, আবার অশান্ত যাদবপুর

কলরব মুছে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ সমাবর্তন হয়েছিল কয়েক দিন আগেই। কিন্তু ছাত্র সংসদের নির্বাচন নিয়ে সরকারি হস্তক্ষেপের জেরে ফের অচলাবস্থার সম্মুখীন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। ফিরে এল ঘেরাও, স্লোগানের দিন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:১৮
Share:

বাইরে চলছে বিক্ষোভ। নিজের ঘরে যাদবপুরের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। রয়েছেন রেজিস্ট্রার প্রদীপ ঘোষও।—নিজস্ব চিত্র।

কলরব মুছে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ সমাবর্তন হয়েছিল কয়েক দিন আগেই। কিন্তু ছাত্র সংসদের নির্বাচন নিয়ে সরকারি হস্তক্ষেপের জেরে ফের অচলাবস্থার সম্মুখীন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। ফিরে এল ঘেরাও, স্লোগানের দিন।

Advertisement

নির্দিষ্ট সময়ে ছাত্র নির্বাচনের দাবিতে শুক্রবার সন্ধে থেকে অরবিন্দ ভবনের সামনে অবস্থানে বসেন ছাত্রছাত্রীদের এক অংশ। নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচনের দাবি না মিটলে তাঁরা অবস্থান তুলবেন না বলেও জানান। ফলে অনেক রাত পর্যন্ত উপাচার্য

এবং অন্য কর্তারা আটকে থাকেন অরবিন্দ ভবনে।

Advertisement

মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতি ছাত্রদের দাবি মতো নির্দিষ্ট সময়ে (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে) ছাত্র সংসদ নির্বাচন করারই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। রাজ্য সরকারের কাছে তারা চিঠি লিখে এ ব্যাপারে মতামত জানতে চায়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই চিঠি পৌঁছনোর আগেই বুধবার উচ্চশিক্ষা দফতর সটান উপাচার্যকে চিঠি দিয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে কমর্সমিতির সিদ্ধান্ত কার্যকর না-করার নির্দেশ দেয়। চিঠির সঙ্গে গত নভেম্বর মাসে প্রকাশিত সরকারি বিজ্ঞপ্তিটিও জুড়ে দেওয়া হয়।

ওই চিঠি পাওয়ার পরেই শুক্রবার ফের কর্মসমিতির জরুরি বৈঠক ডাকা হয়। কর্মসমিতির সিদ্ধান্ত জানতে এ দিন দুপুর থেকেই অরবিন্দ ভবনের সামনে জড়ো হয়েছিলেন ছাত্রছাত্রীরা। নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন না-হলে তারা যে আন্দোলনে নামবে, সে কথা আগেই ঘোষণা করেছিল ছাত্র সংগঠনগুলি। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে চাপা উত্তেজনা ছিলই। রাজ্য সরকারের নির্দেশ মেনে নির্বাচন পিছিয়ে দিলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফের অচলাবস্থা শুরু হবে, তা জানতেন কর্মসমিতির সদস্যরাও। ফলে এ দিন ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি কর্মসমিতি। তারা বল ঠেলে দিয়েছে আচার্যের কোর্টে। এ দিন বৈঠকের পরে কর্মসমিতির তরফ থেকে জানানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে তা আচার্য রাজ্যপালকে গিয়ে জানিয়ে আসবেন তাঁরই মনোনীত সদস্য বিমল রায় ও সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) আশিস বর্মা। আচার্য রাজ্যপাল যা সিদ্ধান্ত নেবেন সেটাই হবে কর্মসমিতির সিদ্ধান্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ের আটকে থাকা অবস্থাতেই উপাচার্য সুরঞ্জন দাস বলেন, ‘‘আমি বরাবরই মনে করি, আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান সম্ভব। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরা রাজ্যপালের কাছে গিয়ে সব পক্ষের বক্তব্যই জানাবেন। আশা করি, ছাত্রছাত্রীরা এটা বুঝবে!’’

কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের অনড় দাবি, নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন করতেই হবে। পড়ুয়াদের বক্তব্য, গত অক্টোবরে খোদ শিক্ষামন্ত্রী ভোট পিছিয়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। ২৬ নভেম্বর উচ্চশিক্ষা দফতর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের কথা তুলে ভোট স্থগিত রাখার কথা জানায়। তার পর থেকে দফায় দফায় একাধিক ছাত্র সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে ভোট করানোর দাবি করে আসছে। ‘‘কর্তৃপক্ষ এখন চাপে পড়ে রাজ্যপালের কাছে যেতে চাইছেন। আগে থেকে কেন তা করা হল না? নির্বাচনের দাবি থেকে সরছি না,’’ বললেন এক ছাত্র নেতা। ছাত্র নেতা স্বর্ণেন্দু বর্মন বলেন, ‘‘আমরা অবস্থান করছি, ঘেরাও নয়। উপাচার্য যদি যেতে চান আমাদের মাড়িয়ে যাবেন।’’

রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ ডিন অব স্টুডেন্টস আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের কাছে এসে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ তাঁদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। অবস্থান-মঞ্চ থেকে স্লোগান ওঠে, ‘‘খাবার নয়। আমরা নির্বাচন চাই।’’ ডিন অব স্টুডেন্টস নিজের ঘরে চলে যান। রাত বারোটা নাগাদ উপাচার্য সা‌‌ংবাদিকদের বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকারের পক্ষে আমরা সকলেই। আমার বিশ্বাস, আচার্যের সঙ্গে কথা বললে একটা সমাধান বেরোবে।’’ প্রয়োজনে সারা রাত বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকবেন বলে জানিয়ে সুরঞ্জনবাবু বলেন, ‘‘পুলিশ সহায়তা চাওয়ার প্রশ্ন নেই। পড়ুয়ারাও আছে, আমরাও আছি।’’

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীরা যদিও ফের সিঁদুরে মেঘ দেখছেন। এক শিক্ষকের মন্তব্য, ‘‘আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের উচিত শিক্ষামন্ত্রী বা রাজ্যপালের কাছে গিয়ে তাঁদের দাবি জানানো। কর্মসমিতি ভোট নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়নি। তারা আচার্যের উপরেই সিদ্ধান্তের ভার দিয়েছে।’’ উপাচার্য ও অন্য কর্তাদের আটকে রাখার যুক্তি খুঁজে পাচ্ছেন না শিক্ষকরা। ফের বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন শুরু হওয়ায় ভয় পাচ্ছেন ছাত্রছাত্রীদের অনেকেও। উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে আসা এক ছাত্রীর মন্তব্য, ‘‘মাঝে একটা বছর নির্বিঘ্নে পড়াশোনা হয়েছে। ফের বোধহয় অশান্তি শুরু হল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন