প্রতীকী ছবি।
বাড়ির মহিলারা তেল মালিশ করার সময়ে পা-টা নড়ে উঠেছিল যেন! মুহূর্তে রটে যায়, বেঁচে আছেন জসিম শেখ (২৭)। আর, হইহই করে কিছু লোক গিয়ে মারধর করলেন চাপড়া গ্রামীণ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসককে।
শনিবার বাড়িতে বিদ্যুতের কাজ করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছিলেন নদিয়ার চাপড়া থানার বাঙ্গালঝি এলাকার জসিম। তাঁকে কাছেই চাপড়া গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। চিকিৎসক পরীক্ষা করে জানান, তিনি আগেই মারা গিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে ময়না-তদন্ত করানোই বিধি। কিন্তু হাসপাতালের দাবি, পরিবারের লোকজন তা করতে দিতে চাননি। তাঁরা দেহটি বাড়িতে নিয়ে যান।
স্থানীয় সূত্রের খবর, দেহ ফিরিয়ে নিয়ে গিয়ে বাড়ির মহিলারা তেল মালিশ করতে শুরু করেন। মৃতের ভাই সবুজ শেখের দাবি, “মালিশের সময় চোখের সামনে দাদার একটা পা নড়ে উঠল। দাদা বেঁচে ছিল!” তাঁরা ফের দেহ নিয়ে হাজির হন চাপড়া গ্রামীণ হাসপাতালে। পরীক্ষা করে কর্তব্যরত চিকিৎসক ফের জানান, জসিম আগেই মারা গিয়েছেন।
তাতেই খেপে ওঠেন পরিজনেরা। চিৎকার করতে থাকেন, “অসম্ভব! আমরা নিজেরা দেখেছি, পা নড়ছে!” হাসপাতালের কাছেই তাঁদের বাড়ি। খবর পেয়ে জড়ো হন পড়শিরাও। তাঁদের বেশির ভাগই বলতে থাকেন, প্রথম বার ‘মৃত’ বলে ছেড়ে না দিয়ে চিকিৎসা করলে জসিম বেঁচে যেতেন।
এর পরেই কয়েক জন উত্তেজিত হয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক দেবব্রত ভট্টাচার্যের উপরে চড়াও হন। তাঁকে মারধরও করা হয় বলে অভিযোগ। রুখতে গিয়ে নিগৃহীত হন হাসপাতালের সুপার এবং আরও এক চিকিৎসক। জনতার তাড়া খেয়ে তাঁরা একটা ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন। সুপার রণবীর সাহা বলন, “সহকর্মীকে মারতে দেখেই বাঁচাতে গিয়েছিলাম। ওরা আমাদের উপরেও চড়াও হল। ঘরে ঢুকে বেঁচেছি।” চাপড়া থানার পুলিশও পরিস্থিতি সামলাতে বেগ পায়। অনেকে হাসপাতালের গ্রিল ভেঙেও ঢোকার চেষ্টা করে। পরে পরিবারের লোকজনকে বুঝিয়ে পুলিশ দেহটি ময়না-তদন্তের জন্য পাঠায়।
কারণে-অকারণে ডাক্তারদের পেটানো নতুন নয়। সুরক্ষা না-পেয়ে সরকারি চাকরি ছাড়ার নজিরও আছে। তবু এমন ঘটনা রোখা যাচ্ছে না। নদিয়ার জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায় বলেন, “যুবকটি মারা গিয়েছে জানানোই ওই চিকিৎসকের অপরাধ হয়েছিল। তাই ওঁকে মার খেতে হল।” নদিয়ার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, ‘‘এই ঘটনায় কড়া পদক্ষেপ করা হবে।’’ যদিও রাত পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি।