দোষীদের চরম শাস্তি দাবি মায়ের, কৌশিক-খুনে ১২ জনের নামে চার্জশিট

মোষ-চোর অপবাদে মাস দুয়েক আগে ডায়মন্ড হারবারে পিটিয়ে খুন করা হয়েছিল এক আইটিআই ছাত্রকে। সেই ঘটনায় জড়িত অভিযোগে শাসকদলের শ্রমিক নেতা তাপস মল্লিক-সহ ১২ জনের বিরুদ্ধে শুক্রবার ডায়মন্ড হারবার মহকুমা আদালতে চার্জশিট পেশ করল সিআইডি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ডায়মন্ড হারবার শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৬ ০১:৫৭
Share:

কৌশিকের ছবিতে মায়ের আদর।

মোষ-চোর অপবাদে মাস দুয়েক আগে ডায়মন্ড হারবারে পিটিয়ে খুন করা হয়েছিল এক আইটিআই ছাত্রকে। সেই ঘটনায় জড়িত অভিযোগে শাসকদলের শ্রমিক নেতা তাপস মল্লিক-সহ ১২ জনের বিরুদ্ধে শুক্রবার ডায়মন্ড হারবার মহকুমা আদালতে চার্জশিট পেশ করল সিআইডি। খুনের ঘটনার ৮০ দিনের মাথায় চার্জশিট পেশ হওয়ায় খুশি কৌশিকের পরিবার। তাঁরা দোষীদের চরম শাস্তি দাবি করেছেন।

Advertisement

চার্জশিটে সিআইডি-র তদন্তকারী অফিসার আতিবুর রহমান জানিয়েছেন, কৌশিক পুরকাইত নামে ওই ছাত্রের মা ও মাসির কাছ থেকে তোলাবাজির পরিকল্পনা করেছিল তাপস। তাপসের নেতৃত্বেই মোষ চুরির অপবাদে কৌশিককে খুন করা হয়। খুনে ব্যবহৃত একটি বড় টর্চ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ঘটনার ৮ জন সাক্ষী রয়েছেন।

মন্দিরবাজারের গুমকি গ্রামের বাসিন্দা কৌশিক গত ১০ মে নিমন্ত্রণ খেতে ডায়মন্ড হারবার থানার বাহাদুরপুর গ্রামের পূর্বপাড়ায় মাসির বাড়িতে যান। ওই দুপুরে কালীপুজো উপলক্ষে গ্রামবাসীদের চাঁদায় কেনা একটি মোষ বেপাত্তা হয়ে যায়। রাতে একটি গাছতলায় বসে ফোনে কথা বলছিলেন কৌশিক। তখনই পাশের পশ্চিমপাড়া থেকে একদল লোক এসে তাঁকে মোষ-চোর সন্দেহে পেটাতে শুরু করে। পরে জখম অবস্থায় কৌশিককে ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন।

Advertisement

শোকার্ত মা।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, গাছের ডাল, লাঠি ও বড় টর্চ দিয়ে মারধর করা হয়েছিল কৌশিককে। তাপসের দুই অনুগামী দেবরাজ মাঝি এবং যুবরাজ মাঝি তাদের স্ত্রী পঞ্চমী ও গৌরীকে নিয়ে হামলায় সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিল। দেবরাজ নিজের বড় টর্চ দিয়ে কৌশিকের মাথায় একাধিক বার মেরেছিল। মাথায় গুরুতর চোটের কারণেই কৌশিকের মৃত্যু হয় বলে চিকিৎসকদের অভিমত। হামলার সময়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল তাপস মল্লিক। কৌশিকের মা ও মাসি তার পা জড়িয়ে কাকুতি-মিনতি করেছিলেন। কিন্তু তখন মারধর বন্ধ করেনি তাপস। কৌশিকের মা ও মাসির থেকে ৬০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণের আশ্বাস পাওয়ার পরেই তাপস মারধর বন্ধ করে।

তদন্তকারীদের দাবি, গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, চাঁদা তুলে দু’হাজার টাকায় মোষটি কেনা হয়েছিল। কিন্তু তাপস প্রথমে কৌশিকের মা ও মাসির থেকে ২ লক্ষ টাকা দাবি করে। পরে সেই অঙ্ক ৬০ হাজার টাকায় নামে। ওই রাতেই মোষটির খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল। ঘটনার পরেই তাপস ফেরার হয়ে যায়। পরে তাকে ধরা হয়। ঘটনার পিছনে তোলাবাজিই মূল উদ্দেশ্য ছিল বলে চার্জশিটে বলা হয়েছে।

এ দিন চার্জশিট পেশের কথা শুনে সন্তোষ প্রকাশ করেন কৌশিকের পরিবারের লোকজন এবং পড়শিরা। গুমকি গ্রামে ওই বাড়িতে সে দিনের পর কৌশিকের ছবি লাগানো হয়েছে ঠাকুরঘরের দেওয়ালে। দুই বোন তাতে রোজ রজনীগন্ধার মালা ও চন্দনের টিপ পরায়। ছবির সামনে রাখা হয় সন্দেশের থালা। সন্দেশ যে বড় প্রিয় ছিল কৌশিকের। সে কথা বলতে বলতে তাঁর মা চন্দ্রাদেবীর চোখের কোলে জল জমে। তিনি বলেন, ‘‘সে দিন ওদের কাছে হাত জোড় করে ছেলের প্রাণভিক্ষা চেয়েছিলাম। কেউ শোনেনি। ওদের চরম শাস্তি চাই।’’

ওই পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ছেলেবেলা থেকেই ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন ছিল কৌশিকের। উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পরে তিনি স্পোকেন ইংলিশ শিখেছিলেন। কম্পিউটার প্রশিক্ষণও নেন। তাঁর বাবা মেলায় মিষ্টির দোকান চালিয়ে উপার্জন করতেন। সংসারের অনটন মেটানোর জন্য প্রাণপাত করছিলেন কৌশিক। কিন্তু চুরির অপবাদে মাত্র ২৩ বছর বয়সেই থেমে যায় তাঁর লড়াই।

ছবি: দিলীপ নস্কর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন