সিদ্ধান্ত উড়িয়ে দিনভর কাজ বন্ধ, ক্ষুব্ধ চেল্লুর

কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির অনুরোধ-উপরোধ, ক্ষোভ-উষ্মাতেও যখন-তখন কাজ বন্ধের ‘সংস্কৃতি’ থেকে টলানো যাচ্ছে না এক শ্রেণির কৌঁসুলিকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৫ ০৩:৪৫
Share:

কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির অনুরোধ-উপরোধ, ক্ষোভ-উষ্মাতেও যখন-তখন কাজ বন্ধের ‘সংস্কৃতি’ থেকে টলানো যাচ্ছে না এক শ্রেণির কৌঁসুলিকে। এমনকী শোকপালনের জন্য তাঁরা নিজেরাই দিনের যেটুকু সময় কর্মবিরতি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তা-ও মানছেন না। আংশিক কাজ বন্ধ রাখার বদলে সারা দিনই কর্মবিরতি পালন করা হচ্ছে।

Advertisement

মঙ্গলবার এক প্রাক্তন বিচারপতির মৃত্যুতে সকাল থেকেই কাজ বন্ধ রাখা হয় কলকাতা হাইকোর্টে। ক্ষুব্ধ প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর মন্তব্য করেন, আইনজীবীদের সংগঠন নিজেদের গৃহীত প্রস্তাবই মানছে না। হাইকোর্টের প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সমীর মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে এ দিন বেলা সাড়ে ১০টা থেকে কর্মবিরতি পালনের সিদ্ধান্ত নেয় আইনজীবীদের তিনটি সংগঠন। বেলা ১১টা নাগাদ সেই সিদ্ধান্তের কথা প্রধান বিচারপতিকে জানাতে আসেন কয়েক জন আইনজীবী। কর্মবিরতির কথা জেনে প্রধান বিচারপতি তাঁদের উদ্দেশে মন্তব্য করেন, ‘‘বার অ্যাসোসিয়েশন তো তাদের ১৯৯০ সালের গৃহীত সিদ্ধান্তই মানছে না।’’ আইনজীবীদের সংগঠন সূত্রের খবর, ওই বছর সিদ্ধান্ত হয়েছিল কোনও বিচারপতি বা আইনজীবীর মৃত্যুতে বেলা সাড়ে ৩টের পরে কর্মবিরতি হতে পারে। অর্থাৎ তার আগে পর্যন্ত যথারীতি কোর্টের কাজ হওয়ার কথা।

কর্মবিরতি শুরু করে দেওয়ার পরে তাঁকে সে-কথা জানানো হচ্ছে কেন, সেই প্রশ্ন তুলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি। আইনজীবীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যদি ধরে নেওয়া হয় যে, কর্মবিরতি বেলা সাড়ে ১০টায় শুরু হবে, তা হলে সেই সিদ্ধান্ত বেলা ১১টায় তাঁকে জানানো হচ্ছে কেন? আদালতের কাজ শুরু হয় বেলা সাড়ে ১০টায়। প্রধান বিচারপতি নিজে এবং তাঁর ডিভিশন বেঞ্চের অন্য বিচারপতি তত ক্ষণে এজলাসে বসে পড়েছেন। অন্য সব এজলাসেও দিনের কাজ শুরু করে দিয়েছেন বিচারপতিরা। এই অবস্থায় প্রধান বিচারপতি চেল্লুর জানিয়ে দেন, তাঁর ডিভিশন বেঞ্চ আদালতের কাজ চালিয়ে যাবে। তবে কোনও আইনজীবীর গরহাজিরায় একতরফা রায় তাঁরা দেবেন না। কোনও মামলা খারিজও করা হবে না।

Advertisement

এর আগে বিভিন্ন সময়ে আইনজীবীদের হুটহাট কর্মবিরতি পালনের সমালোচনা করেছেন প্রধান বিচারপতি। হাইকোর্টে ঘনঘন কর্মবিরতির সমালোচনা করেছেন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল জয়ন্ত মিত্রও। সুপ্রিম কোর্টের নিয়ম মেনে হাইকোর্টে বছরে কমপক্ষে ২১০ দিন যাতে স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়, সেটা নিশ্চিত করার জন্য আইনজীবীদের একাধিক বার অনুরোধ করেছেন প্রধান বিচারপতি। তিনি জানিয়েছেন, প্রয়োজনে শনিবারের ছুটিতেও তাঁর ডিভিশন বেঞ্চ মামলার কাজ চালাবে। এই ব্যাপারে বেশ কয়েক জন বিচারপতিকে পাশে পেয়েছেন তিনি। বিচারপতিরা ছুটির দিনেও কাজ করে মামলার পাহাড় কাটতে রাজি। অথচ কৌঁসুলিরা ছুতোনাতায় কর্মবিরতি পালন করতে ব্যস্ত। প্রধান বিচারপতির ক্ষোভ সেই কারণেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন