Mamata Banerjee

বিএসএফ আই কার্ড দিলে নেবেন না, এনআরসি-তে পড়ে যাবেন, কোচবিহারে বার্তা মুখ্যমন্ত্রী মমতার

কোচবিহারের সভা থেকে সিএএ এবং এনআরসি নিয়ে বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে বিএসএফের বিরুদ্ধে এলাকার মানুষকে থানায় এফআইআর দায়ের করার কথাও বললেন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২৪ ১৪:৩১
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক।

সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-র তরফে কোনও পরিচয়পত্র দেওয়া হলে, তা নিতে বারণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই পরিচয়পত্র নিলে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি)-র আওতায় পড়ে যেতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে তিনি বিএসএফের অন্যায় কাজের বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর দায়ের করার কথাও বলেছেন। সোমবার কোচবিহারে সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠান ছিল। সেখানেই ওই বার্তা দেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement

বিএসএফ প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘‘গ্রামেগঞ্জে বিএসএফ ঢুকে আত্যাচার করলে সঙ্গে সঙ্গে এফআইআর করুন। বিপদে প়ড়লে আমি আছি, বাঘের বাচ্চার মতো আছি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘বিএসএফ ঢুকে আলাদা করে আইডেন্টিটি কার্ড (পরিচয়পত্র) দিতে চাইছে। ওই কার্ড একদম নেবেন না। ওই কার্ড নিলে এনআরসিতে পড়ে যাবেন। আর এনআরসি-র বিরুদ্ধে লড়াই করেছে কারা? রাজবংশী বন্ধুরা, আপনারা তো সকলেই নাগরিক।’’

২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের সময় কোচবিহারের শীতলখুচিতে ভোটগ্রহণের দিন বিএসএফের গুলিতে কয়েক জনের মৃত্যু হয়। সোমবার সে প্রসঙ্গও তুলেছেন মমতা। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘শীতলখুচির ঘটনায় জামিন পেয়ে গেল? আমার আপত্তি আছে। খুনি যদি জামিন পেয়ে যায় তা হলে কী হবে? তা হলে তো যে কেউ খুন করে জামিন পেয়ে যাবে।’’ এর পরেই তিনি বলেন, ‘‘মনে আছে শীতলখুচির ঘটনা? ভুলে যাননি তো? চারটে ছেলেকে বিএসএফ গুলি করে মেরে দিয়েছিল। ওরা যখন তখন যাকে তাকে গুলি করে মেরে দেয়। যেন জমিদারি পেয়ে গিয়েছে। আমি মুখ্যসচিব, ডিএম, এসপি-কে বলব নজর রাখতে।’’

Advertisement

সিএএ নিয়ে মমতার প্রতিবাদ

কোচবিহারের সরকারি অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) প্রসঙ্গও তোলেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘এখন ক্যা-ক্যা করে চিৎকার করছে। এটা ফ্যা-ফ্যা ভোটের রাজনীতি করার জন্য। আপনারা সবাই নাগরিক। আপনাদের সবাইকে নাগরিক হিসাবে আমরা স্বীকৃতি দিয়েছি। সমস্ত উদ্বাস্তু কলোনিকে স্থায়ী ঠিকানা দিয়ে দিয়েছি। তারা সবাই রেশন পায়, স্কুলে যায়, স্কলারশিপ পায়, কিসান বন্ধু পায়, শিক্ষাশ্রী পায়, ঐক্যশ্রী পায়, লক্ষ্ণীর ভান্ডার পায়। সে নাগরিক না হলে থোড়াই এ সব পেত। নাগরিক না হলে তারা ভোট দিতে পারত?’’ প্রসঙ্গত, রবিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপির নিশ্চিন্তপুরের সভায় কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর বলেন, ‘‘যাঁরা ১৯৭১ সালের পরে এসেছেন, তাঁদের নাগরিকত্ব দরকার। কারণ, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষিত করতে হবে। বিজেপি সরকার সিএএ চালু করলে আর কোনও সরকারের ক্ষমতা নেই, আমাদের যখন খুশি ঘাড় ধাক্কা দিয়ে দেশ থেকে বার করে দেয়। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার সিএএ চালু করবে।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, বিভিন্ন ভৌগোলিক, ধর্মীয় ও সামাজিক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যখন এই নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন কার্যকর করতে হবে, তার একটি রুল ফ্রেম করা প্রয়োজন। সব দিক মাথায় রেখে রুল ফ্রেম করতে হচ্ছে এবং সেই কারণে সময় লাগছে। এর জবাব দিতে গিয়েই সিএএ নিয়ে মোদী সরকারকে আক্রমণ করেন মমতা।

প্রসঙ্গ চোর চোর

বিরোধীদের তোলা ‘চোর’ প্রসঙ্গরও জবাব দিয়েছেন মমতা। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘রাস্তায় কয়েক জন লোক দাঁড় করিয়ে রেখে দিয়েছে টাকা দিয়ে। আমাকে দেখলেই চোর চোর বলছে। আমি কোথাও চা খেলেও দাম দিয়ে খাই। কারও কাছ থেকে টাকা নিই না। সরকারি সার্কিট হাউসে ভাড়া দিয়ে সেখানে থাকি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ডাকাতদের সব সর্দার। সবাইকে চোর বলে বেড়াচ্ছে। বিজেপি করলে সাদা আর তৃণমূল করলে কাদা। বিজেপি করলে চোরগুলোকে ঢুকিয়ে দিচ্ছে ওয়াশিং মেশিনে। সেই ওয়াশিং মেশিন থেকে সাদা হয়ে বেরিয়ে আসছে।’’

এজেন্সি দিয়ে ভোট!

সিবিআই-ইডির মতো কেন্দ্রীয় এজেন্সির উপর নির্ভর করে ভোটে লড়াই করতে চাইছে বিজেপি। কোচবিহারের সভায় এমনটাই বললেন মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণের সুর চড়িয়ে মমতা বলেন, ‘‘ওরা ভয় দেখিয়ে ভোট করতে চায়। এজেন্সি দিয়ে ভোট করতে চায়। ভয় দেখিয়ে বলে, তুই যদি আমাদের সঙ্গে না আসিস, তা হলে তোর বাড়িতে ইডি পাঠিয়ে দেব। ইডি কী করবে? সিবিআই কী করবে? আজ আছে কাল নেই।’’

স্কুলে রাজবংশী ভাষাকে স্বীকৃতি

উত্তরবঙ্গে রাজবংশী ও কামতাপুরীর ভাষার ২১০টি স্কুলের স্বীকৃতি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সোমবারের সভামঞ্চ থেকেই কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি জেলার মোট ২১০টি স্কুলকে সরকারি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হল। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এত দিন এই স্কুলগুলি একক ভাবে চালানো হচ্ছিল। সেগুলিতে কর্মরত শিক্ষকেরা এ বার থেকে সরকারি কাঠামো মেনে বেতন পাবেন। সরকারি স্কুলের সব রকম সুযোগ-সুবিধা তাঁদের দেওয়া হবে। উত্তরবঙ্গের রাজনীতির কারবারিরা মনে করেছেন, আগামী লোকসভা ভোটে রাজবংশী ভোট পেতেই এই কৌশল নিলেন মমতা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন