লোডশেডিং কেন, বিদ্যুৎ দফতরকে ধমক মুখ্যমন্ত্রীর

প্রশাসনিক বৈঠকে লোডশেডিংয়ের কথা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি রয়েছি, তার পরেও চার বার বিদ্যুৎ চলে গেল! তা হলে সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে কী হয়? জেলার কোথায় কী হচ্ছে, তার খবর আপনারা কেউ কি রাখেন?”

Advertisement

অনির্বাণ রায়

টিয়াবন (জলপাইগুড়ি) শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:১৪
Share:

ক্ষুব্ধ: জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ার জেলা প্রশাসনিক সভায় বিদ্যুৎ দফতরের চিফ ম্যানেজিং ডিরেক্টর রাজেশ পান্ডের (বাঁ দিকে মাইক হাতে দাঁড়িয়ে) কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক

বিদ্যুৎ দফতরে কাজ হয়, নাকি শুধু ইউনিয়নবাজি— প্রশ্নকর্তা খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

বুধবার দুপুর। জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ার জেলার যৌথ প্রশাসনিক বৈঠক চলছে লাটাগুড়ির টিয়াবনে। সভার মধ্যে হঠাৎই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানতে চান, বিদ্যুৎ দফতরে জলপাইগুড়ি জেলার দায়িত্বে কে আছেন। রিজিওনাল ম্যানেজার কল্যাণকুমার মাইতি উঠে দাঁড়াতেই ওই প্রশ্ন ছুড়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। সভাস্থলে তখন পুরোপুরি নীরবতা।

মঙ্গলবার গরুমারা জঙ্গল ঘেরা টিলাবাড়ি পর্যটন কেন্দ্রে রাত কাটান মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার সন্ধের পর থেকে সেখানে চার বার লোডশেডিং হয়। জায়গাটি হাতি, চিতাবাঘের চারণভূমি বলে পরিচিত। একসময়ে কেএলও-রও যথেষ্ট প্রভাব ছিল। প্রশাসনিক বৈঠকে লোডশেডিংয়ের কথা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি রয়েছি, তার পরেও চার বার বিদ্যুৎ চলে গেল! তা হলে সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে কী হয়? জেলার কোথায় কী হচ্ছে, তার খবর আপনারা কেউ কি রাখেন?”

Advertisement

সভায় প্রায় চেঁচিয়ে বলেন, “এর আগেও বলেছি। যাঁরা নজরদারির দায়িত্বে রয়েছেন, তাঁরা কোনও কাজ করছেন না। আমি কড়া পদক্ষেপ নেব।” বিদ্যুৎ পর্ষদের চিফ ম্যানেজিং ডিরেক্টর রাজেশ পাণ্ডের সঙ্গে কথা বলতে বলতে উত্তেজিত হয়ে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “হয় দফতরে সর্বক্ষণ রাজনীতি চলছে, নয়তো চূড়ান্ত গাফিলতি চলছে। এ আর মেনে নেব না।”

রাজ্য সরকার দীর্ঘদিন ধরে দাবি করছে, রাজ্যে বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত হয় এবং সেই বিদ্যুৎ অন্য রাজ্য ও পড়শি দেশে রফতানি করা হয়। এই পরিস্থিতিতে জলপাইগুড়ির এই পর্যটন কেন্দ্রে কেন বারবার লোডশেডিং হল, তার কারণ খুঁজতে শুরু করেছেন সংশ্লিষ্ট সকলেই। এখন শীতের মুখে ঘরে ঘরে বাতানুকূল যন্ত্রও চলছে না। তা হলে বিদ্যুৎ ঘাটতি কেন? এ দিন বৈঠকে এই প্রসঙ্গ তুলে বিস্ময় প্রকাশ করেন মুখ্যসচিব মলয় দে-ও। তার পরেই তাঁকে বিদ্যুৎ দফতরের সচিব থেকে আধিকারিক, সকলকে নিয়ে বৈঠক করতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী।

মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠমহল সূত্রে বলা হয়েছে, টিলাবাড়ি পর্যটন কেন্দ্রে জেনারেটর ছিল। তাই বিদ্যুৎ চলে গেলেও এক থেকে দেড় মিনিটের মধ্যে লাইন চালু হয়েছে। কিন্তু লোডশেডিং হতেই ক্যামেরা, জ্যামার, নজরদারির স্বয়ংক্রিয় সরঞ্জাম অকেজো হয়ে যায়। বিদ্যুৎ ফিরে আসার পরে সেগুলি কার্যকর হতে কিছু সময় লাগেই। মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা বেষ্টনীতে এই ফাঁকও যথেষ্ট আশঙ্কার।

এই নিয়ে পর্ষদের কাছ থেকে সদুত্তর মেলেনি। তবে বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যে সমস্যার কথা বলেছেন, তা অবশ্যই তদন্ত করে দেখা হবে।’’ ইউনিয়ন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যে অভিযোগ করেছেন, তা মেনে নিয়ে বিদ্যুৎমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘ইউনিয়নের ফলেই অনেক সময়ে কাজ বিঘ্নিত হচ্ছে। এই অবস্থা কাটাতে প্রশাসনিক পদক্ষেপ করা হবে।’’ একই সঙ্গে তিনি এ-ও বলেন, ‘‘তবে কয়েকটি জায়গায় আর্থিক সমস্যা রয়েছে বলে প্রয়োজনীয় অনেক পদক্ষেপই করা যায়নি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন