বালিকা বধূর জ্বালা বোঝো, সভা সুলেখাদের

তাশমিরা বিবি, সালমা খাতুন, সুলেখা বিবি, আসনারা বিবি। ছোট-ছোট সভায় গিয়ে তাঁরা শোনাচ্ছেন নিজেদের জীবনের কথা। বলছেন, “আমাদের দেখে শেখো, কম বয়সে বিয়ে করলে কী মাসুল দিতে হয়!”

Advertisement

বিমান হাজরা

সুতি শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৮ ০৩:৩০
Share:

প্রতীকী ছবি।

ওঁদের নিজেদের হাত পুড়েছে। ওঁরা চান, আর কেউ যেন জেনে-বুঝে আগুনে হাত না দেয়।

Advertisement

ওঁরা বালিকা বধূ।

কিন্তু বিমল করের গল্প আর তরুণ মজুমদারের ছবির দৌলতে যে শব্দবন্ধ বাঙালির কাঁচা-মিঠে রোমান্সের আর এক নাম, ওঁরা তার উল্টো পিঠ। কচি বয়সে বিয়ে করে ওঁদের শরীর ভেঙেছে, ভেঙে গিয়েছে ঘরও।

Advertisement

তাশমিরা বিবি, সালমা খাতুন, সুলেখা বিবি, আসনারা বিবি। ছোট-ছোট সভায় গিয়ে তাঁরা শোনাচ্ছেন নিজেদের জীবনের কথা। বলছেন, “আমাদের দেখে শেখো, কম বয়সে বিয়ে করলে কী মাসুল দিতে হয়!”

মুর্শিদাবাদে সুতি ২ ব্লক। সেখানেই বাজিতপুর পঞ্চায়েত এলাকায় বাড়ি তাশমিরার। বিয়ে হয়েছিল ১৫ বছরে, ১৬ বছরে মা। তাশমিরা বলেন, “তার পর থেকেই অসুস্থ। সংসারের কাজও ঠিক মতো করতে পারি না। আমি চাই না, কম বয়সে বিয়ে করে আর কেউ এই যন্ত্রণা ভোগ করুক।”

ওই বাজিতপুরেরই মেয়ে সালমা। ক্লাস টেনে পড়তে-পড়তে তাঁর বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। তাঁর আক্ষেপ, “স্বপ্ন ছিল পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াব। তা আর হল কই?’’ তাঁদের এলাকায় ৩৬ জনকে নিয়ে তাশমিরা-সালমারা চালাচ্ছেন ‘বালিকা বধূ গ্রুপ’। কমবয়সি মেয়েদের, তাদের বাড়ির লোকেদের বোঝাচ্ছেন।

মহেশাইল সুলেখা বিবির বিয়ে হয়েছিল চোদ্দোয় পা দিয়ে। সুলেখা বলেন, “তখন ক্লাস এইটে পড়ি। কী-ই বা বুঝতাম! শখ করে শ্বশুরবাড়ি গিয়ে দু’বছরের মধ্যে অসুস্থ। সেই যে স্বামী বাপের বাড়িতে রেখে গেল, আজও পড়ে আছি।’’ ওই পঞ্চায়েত এলাকারই আসনারার বিয়ে হয়েছিল ১৫ বছরে। তাঁর কথায়, “বছর ঘুরতে না ঘুরতেই শরীর ভাঙল। ওষুধ খেয়েও সারে না। বাপ-মায়ের ভুলের খেসারত দিতে হচ্ছে।’’ তাঁরাও গ্রুপ গড়ে সভা করে বেড়াচ্ছেন। পিছনে রয়েছেন ব্লক প্রশাসন, চাইল্ড লাইন ও একটি অসরকারি সংস্থার কর্তারা।

গত দু’তিন বছর ধরেই মুর্শিদাবাদে নাবালিকা বিয়ে বন্ধ করার কর্মকাণ্ড উল্লেখযোগ্য গতি পেয়েছে। স্কুলের উঁচু ক্লাসের ছাত্রীরা ‘কন্যাশ্রীযোদ্ধা’ হয়ে আনাচে-কানাচে নজর রাখছে, যাতে আঠারো বছরের আগে কোনও মেয়ের বিয়ে না হয়। অনেকে নিজেই বিয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে গোপনে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে মেয়েদের। কিন্তু সচেতনতা ছাড়া এই যুদ্ধে যে জেতা যাবে না, তা সকলের কাছেই পরিষ্কার। ভুক্তভোগী বালিকা-বধূরাই আপাতত প্রশাসনের তূণে নতুন অস্ত্র।

সভায়-সভায় তাশমিরা-সুলেখারা পইপই করে বলছেন, ‘‘আঠারোর আগে মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি পাঠিও না। আর মেয়েদের বলছি, বাবা-মায়েরা যদি কথা না শোনে, রুখে দাঁড়াও। বিয়ের পিঁড়িতে বোসো না।’’ সুতি ২-এর বিডিও সন্দীপ ভট্টাচার্য বলেন, “ওঁরাই এখন আমাদের বাল্যবিবাহ বিরোধী প্রচারের মুখ!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন