তিওড়ের হোমে ধর্ষণের নালিশ

মিলিয়ে গিয়েছে মুখের হাসি, ত্রস্ত শিশুরা

কারও বাবা মা দিনমজুর। ছোটবেলা থেকে কারও বাবা মা ভিনরাজ্যে শ্রমিকের কাজে গিয়ে ফেরেননি। থাকা খাওয়া ও লেখাপড়ার সুযোগ পেয়ে অসহায় ওই বালিকা-কিশোরীদের নতুন শিক্ষার আঙিনায় ঢুকে মুখে হাসি ফুটেছিল। সোমবার দুপুরের পর থেকে তাদের মুখের হাসি যেন কেউ কেড়ে নিয়েছে। হাসি ঠাট্টার কলরবে মুখর দক্ষিণ দিনাজপুরের তিওড় এলাকার একতালা ছোট ছোট দালান ঘরের ওই হোমে আবাসিক অধিকাংশ ছাত্রীকে আতঙ্ক গ্রাস করেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হিলি শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৫ ০২:৩০
Share:

বালুরঘাটে অভিযুক্ত দিলীপ মোহন্তের বাড়ি।—নিজস্ব চিত্র।

কারও বাবা মা দিনমজুর। ছোটবেলা থেকে কারও বাবা মা ভিনরাজ্যে শ্রমিকের কাজে গিয়ে ফেরেননি। থাকা খাওয়া ও লেখাপড়ার সুযোগ পেয়ে অসহায় ওই বালিকা-কিশোরীদের নতুন শিক্ষার আঙিনায় ঢুকে মুখে হাসি ফুটেছিল।

Advertisement

সোমবার দুপুরের পর থেকে তাদের মুখের হাসি যেন কেউ কেড়ে নিয়েছে। হাসি ঠাট্টার কলরবে মুখর দক্ষিণ দিনাজপুরের তিওড় এলাকার একতালা ছোট ছোট দালান ঘরের ওই হোমে আবাসিক অধিকাংশ ছাত্রীকে আতঙ্ক গ্রাস করেছে। দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির আবাসিকেরা স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলেও বেশির ভাগ খুদে ছাত্রী ঘটনার পর ভয়ে সিঁটিয়ে গিয়েছে।

তিওড়ে ধীরেন মোহান্ত চ্যারিটেবল পাবলিক সোসাইটি নামে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি গড়ে ওই অনাথ ও দুঃস্থ বালিকাদের হোম পরিচালিত হতো। জেলা সমাজকল্যাণ দফতর থেকে ভরণপোষণ বাবদ ওই সংস্থাকে আবাসিক পিছু মাসে ১২০০ টাকা অর্থ সাহায্য দেওয়া হতো।

Advertisement

এ দিন হোমের দায়িত্বপ্রাপ্ত সুপার ভক্তি সরকার হিলি থানায় অভিযোগ দায়ের করে জানান, হোমের সম্পাদক তথা মালিক দিলীপ মোহান্ত প্রতি রবিবার হোমে এসে মেয়েদের তাঁর বালুরঘাটের শিবতলির বাড়িতে পাঠানোর জন্য চাপ দিতেন। তার আগে প্রাক্তন হোম সুপার খুশি মণ্ডল রাতে গাড়ি করে কিশোরীদের তুলে নিয়ে গিয়ে সম্পাদক দিলীপের বাড়িতে নিয়মিত পৌঁছে দিতেন। সে মেয়েদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌন সংসর্গে লিপ্ত হয়ে এক দিন পরে তাদের হোমে ফিরিয়ে দিতেন বলে অভিযোগ।

এর পর জেলা জুড়ে আলোড়ন পড়ে গেলেও ওই ঘটনায় সমাজকল্যাণ দফতরের বিরুদ্ধে ঔদাসীন্যের অভিযোগ উঠেছে। সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত ওই হোমে নিয়মিত পরিদর্শন হতো না বলে বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন। তাঁদের আরও অভিযোগ, দিলীপ ছাড়া তাঁরা ওই হোমে অন্য কোনও সদস্যকে দেখেননি। ভুয়ো কমিটি দেখিয়েই কি দিলীপ ওই হোমের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে ছিল? কেননা হোমের সম্পাদকের চেয়ে হোমের মালিক বলেই সে কর্মীদের কাছে বেশি পরিচিত ছিল। এ কথা বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত সুপার ভক্তিদেবী জানিয়েছেন।

জেলা সমাজকল্যাণ আধিকারিক সনৎ ঘোষের আত্মীয় বিয়োগের জন্য এ দিন তাঁর বক্তব্য মেলেনি। তবে সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর ডিসেম্বরে সমাজকল্যাণ দফতর থেকে শেষ পরিদর্শন হয়েছিল ওই হোমে। সে সময় আবাসিকে শিশুদের পানীয় জলের ব্যবস্থা ঠিক মতো নেই এবং শিশুদের ভরনপোষণও নিয়ম মেনে হচ্ছে না বলে অভিযোগ করে কর্ণধার দিলীপকে শো-কজ করা হয়েছিল।

মাস ছয়েক আগে পঞ্চম শ্রেণির এক আবাসিকের যৌন হেনস্থার অভিযোগ আঁচ করে তার অভিভাবক বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যান। ৩ মাস আগে ওই হোমের একটি বালিকা জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। সে সময় সমাজকল্যাণ অফিসারেরা হোমে গিয়ে খোঁজ খবর নেন। কিন্তু গত বছর করা শো-কজের বিষয়টি নিয়ে তারা কেন নির্বিকার ছিলেন, এই প্রশ্ন বিভাগীয় স্তর উঠতে শুরু করেছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, শিশুদের অভিবাবকদের টাকা দিয়ে দিলীপ মুখ বন্ধ করেছিলেন। সমাজকল্যাণ দফতরেও মধ্যেও কী প্রভাব ছিল দিলীপবাবুর। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন