দর্শক কম, চিড়িয়াখানায় মন খারাপ বৃদ্ধ বাবুর

দর্শক না দেখলেই মাথা গরম বৃদ্ধ বাবুর। বছর দশেক আগে সঙ্গিনী বিয়োগ ঘটে তার। অনেক চেষ্টার পরেও নতুন কোনও সঙ্গিনী জোটেনি তার কপালে। ব্যথা ভুলে একা থাকতেই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে সে। কিন্তু সমবেত মানুষ না দেখতে পেলে তার মন খারাপ হয়ে যায়। তাই ছুটির দিনে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তার মেজাজ খারাপ হয়ে থাকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৭:১৭
Share:

দর্শক না দেখলেই মাথা গরম বৃদ্ধ বাবুর। বছর দশেক আগে সঙ্গিনী বিয়োগ ঘটে তার। অনেক চেষ্টার পরেও নতুন কোনও সঙ্গিনী জোটেনি তার কপালে। ব্যথা ভুলে একা থাকতেই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে সে। কিন্তু সমবেত মানুষ না দেখতে পেলে তার মন খারাপ হয়ে যায়। তাই ছুটির দিনে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তার মেজাজ খারাপ হয়ে থাকে।

Advertisement

সূ্ত্রের খবর, সাতাশ বছরের বৃদ্ধ শিম্পাঞ্জি ‘বাবু’ গত কয়েক বছর ধরে আলিপুর চিড়িয়াখানার এক মাত্র ‘ক্রাউড পুলার’। বৃহস্পতিবার বছর শেষের দিনেও সবচেয়ে বেশি ভিড় বাবুকে দেখার জন্যই হয় বলে কর্তৃপক্ষ জানান। তাঁদের বক্তব্য, মরসুমে বা অন্য সময়ে সারা বছরই বাবুর খাঁচার সামনেই দর্শকদের ভিড় বেশি থাকে। দর্শকরাও তাকে কোনও কারণে না দেখতে পেলে চিড়িয়াখানা ছাড়ার সময় মন খারাপ করে বের হন।

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে খাঁচার সামনে কোনও দর্শক দেখতে না পাওয়ার বৃদ্ধ বাবুর মেজাজ খুব খারাপ থাকে। তাকে স্নান করাতে, খাওয়াতে কালঘাম ছুটে যায় বলে জানান তার পরিচর্যাকারীরা।

Advertisement

আলিপুর চিড়িয়াখানা সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি মরসুমে বাবুর দর্শকদের সামনে থাকার সময়ের মেয়াদে কোপ পড়েছে। দুপুর একটার আগে তাকে দর্শকদের সামনে আসতে দেওয়া হয় না। সঙ্গিনীর মৃত্যুর পর থেকে চিড়িয়াখানা খোলা থেকে বন্ধ পর্যন্ত দর্শকদের বিনোদনেই ব্যস্ত থাকতেন বাবু। কর্তৃপক্ষ জানান, এখন তার বদলে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দর্শকদের মনোরঞ্জনে ব্যস্ত থাকে বছর খানেক আগে বাগুইআটি থেকে উদ্ধার হওয়া তিনটি নাবালক শিম্পাঞ্জি।

আরও খবর:
পোষ্য হয়েও সঙ্গিহীন, রাতুল-বাবুর মন খারাপ

তাই মন খারাপ দিয়েই দিন শুরু হয় বাবুর। ঘড়ির কাটার সঙ্গে চড়তে থাকে মেজাজের পারদ। অধিকাংশ দিনই প্রাতঃরাশ ছুড়ে ফেলে দেয়। পরিচর্যাকারীরা কাছে গেলেই ভেংচি কাটতে শুরু করে। কখনও আকাশের দিকে তাকিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকে দীর্ঘ ক্ষণ। কখনও আবার দেওয়ালে মাথা ঠেকিয়ে বসে থাকে। আচমকাই শুরু করে দেয় দাপাদাপি। অথচ দুপুরের পর থেকে তার সব রাগ উধাও হয়ে যায় বলে জানান বাবুর পরিচর্যাকারীরা।

দর্শকদের সামনে এসেই বৃদ্ধ বাবু শুরু করেন একের পর এক পোজ দিতে। শুরু হয় নানারকমের অঙ্গভঙ্গিও।

নাবালক শিম্পাঞ্জিদের সঙ্গে কেন বাবুকে সকাল থেকে দর্শকদের সামনে আনা যায় না? এই প্রশ্নের উত্তরে চিড়িয়াখানার পশুরোগ বিশেষজ্ঞরা জানান, কোনও বন্য প্রাণী তার আধিপত্যে ভাগ বসানো পছন্দ করে না। বৃদ্ধ বাবুর এই মানসিকতা থেকে নাবালক শিম্পাঞ্জিগুলোকে আক্রমণ করতে পারে। নিদ্বির্ধায় সে তাদের যে কোনও ক্ষতি করতে পারে। তাই নাবালক শিম্পাঞ্জিদের সঙ্গে বাবুকে দর্শকদের সামনে ছাড়ার ঝুঁকি নেওয়া সম্ভব নয় বলে তাঁরা জানান।

চিড়িয়াখানা সূত্রে খবর, বাবুর জন্ম ১৯৮৮ সালে। ১৯৯৮ সালে তাকে চেন্নাই থেকে কলকাতায় আনা হয়েছিল।

পশুরোগ বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সাধারণত ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশ বছর বাঁচে শিম্পাঞ্জিরা। তবে চিড়িয়াখানায় যত্ন, নিয়মিত খাবার চিকিৎসা মেলায় সেই আয়ুর মেয়াদটা কয়েক বছর বে়ড়ে যায়। আলিপুর চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আশিসকুমার সামন্ত বলেন, ‘‘বাবু এখন বার্দ্ধক্যে পৌঁছে গিয়েছে। তাঁর বিশ্রাম প্রয়োজন। তাই তাঁকে আর সারা দিন দর্শকদের সামনে ছাড়া যাবে না।’’

চিড়িয়াখানার কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, তিন নাবালক শিম্পাঞ্জির দুটো পুরুষ, এক জন মহিলা। এরাও খুব দুষ্টু। প্রতি দিন সকালে দর্শকদের মনোরঞ্জন করতে এক সঙ্গে তিন জন তিন জনের কাধে হাত রেখে মাঠে নামে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন