খুশি সাবেক ছিটবাসী

ভোটের আনন্দে অকাল হোলি

এক জনের বয়স একশো পেরিয়েছে। চলাফেরা করতে পারেন না একা। অশক্ত শরীরেও মস্তিষ্ক অবশ্য সজাগ। দেশ পাওয়ার পর, জীবদ্দশায় ভোট দিতে পারবেন কিনা সে প্রশ্নের উত্তর জানতে চেয়েছেন বারবার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৬ ০২:২০
Share:

আবির খেলছেন সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দারা।—নিজস্ব চিত্র।

এক জনের বয়স একশো পেরিয়েছে। চলাফেরা করতে পারেন না একা। অশক্ত শরীরেও মস্তিষ্ক অবশ্য সজাগ। দেশ পাওয়ার পর, জীবদ্দশায় ভোট দিতে পারবেন কিনা সে প্রশ্নের উত্তর জানতে চেয়েছেন বারবার।

Advertisement

অন্যজন সত্তরোর্ধ্ব। স্বাধীনতার ছয় দশক পরেও যিনি কখনও ভোট দিতে পারেননি। তাই নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার সময় শুক্রবার আগাগোড়াই নজর রেখেছিলেন টিভির দিকে।

দিনের শেষে দু’জনের মুখেই ফুটল স্বপ্ন পূরণের হাসি। একশো পেরোনো মশালডাঙার অজগর আলি কিংবা পোয়াতেরকুঠির সত্তরোর্ধ্ব মনসুর মিঁয়া শুধু নয় সাবেক ছিটমহলের অন্য বাসিন্দাদের মধ্যেও খুশির আমেজ ছড়িয়েছে। প্রথম ভোটাধিকার প্রয়োগের আগে তাঁদের কেউ মিষ্টি বিলি করলেন, কেউ আবার অকাল হোলিতে রঙিন হলেন। সাবেক ছিটমহল বাসিন্দাদের সংগঠন নাগরিক অধিকার রক্ষা সমন্বয় কমিটির মুখ্য সমন্বয়ক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, “ভারতীয় সংবিধানের প্রতি আমাদের আস্থা ছিল। এ দিন সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দাদের ভোটদান নিশ্চিত হওয়ায় আমাদের সেই আস্থার জয় হয়েছে। ৫১টি সাবেক ছিটে তাই খুশির হাওয়া।”

Advertisement

গত ৩১ জুলাই ছিটমহলগুলি দেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হলেও নানা আইনী জটিলতায় যাঁরা এদেশের নাগরিকত্ব নিয়েছেন তাঁদের অনেকেই এবার বিধানসভা নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন কিনা সে ব্যাপারে সংশয়ে ছিলেন। এ দিন নির্বাচন কমিশনের ঘোষণার পর তাঁদের ওই উদ্বেগ কমেছে। সাবেক ছিটমহল মশালডাঙার বাসিন্দা অজগর আলির নাতি জয়নাল আবেদিন বলেন, “দাদুর এখন ১০৬ বছর বয়স। ছোটবেলা থেকেই দেখেছি ভোটের দিন তিনি মন খারাপ করে থাকতেন। এ দিন টিভিতে সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দাদের ভোটাধিকার নিয়ে কমিশনের তৎপরতার কথা জানার পরেই আবেগে চোখ মুছেছেন। দাদুর সঙ্গে ভোটাধিকার প্রয়োগের ভাবনাটাই আমাদের কাছে স্বপ্নপূরণের মত লাগছে।”

পোয়াতেরকুঠির বাসিন্দা মনসুর আলি জানিয়েছেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, পাকিস্তানের স্বাধীনতা, ভারতের স্বাধীনতা সবই দেখেছেন। কিন্তু তারপরেও ভোট দিতে পারেননি বলে আক্ষেপ ছিল। বেঁচে থাকতে সেই স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে এটাই বড় প্রাপ্তি। তিনি বলেন, “৭৭ বছর বয়স চলছে। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের ভোটাধিকার দেখে যেতে পারছি এটাও দারুণ স্বস্তি দিচ্ছে।’’

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দাদের মধ্যে ১০ হাজারের বেশি বাসিন্দা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন বলে প্রাথমিক সমীক্ষায় তথ্য মিলেছে। তাঁদের মধ্যে বাংলাদেশের আওতাধীন ৫১টি ছিটের ৯৫০০ জন বাসিন্দা রয়েছেন। অন্যদিকে সাবেক ভারতীয় ছিটমহল থেকে আসা বাসিন্দাদের মধ্যে ভোটার সংখ্যা ৫৭৪ জন। কোচবিহারের দিনহাটা, মেখলিগঞ্জ ও হলদিবাড়ির অস্থায়ী শিবিরে তাঁদের রাখা হয়েছে। সম্প্রতি কোচবিহারের সাংবাদিক বৈঠক করে খোদ জেলাশাসক পি উল্গানাথন ওই বাসিন্দাদের ভোটধিকার প্রয়োগের ব্যাপারে প্রস্তুতির কথা জানিয়েছিলেন। ওই বাসিন্দাদের নাম ভোটার তালিকায় তোলার পর ৪২টি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ওই বাসিন্দাদের ভোটগ্রহণের প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। দিনহাটার মহকুমা শাসক কৃষ্ণাভ ঘোষ অবশ্য বলেন, “সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দাদের ভোটদানের জন্য প্রাথমিক প্রস্তুতি অনেকটা এগিয়েছে। কমিশনের নির্দেশ হাতে এলেই সমস্ত পদক্ষেপ করা হবে।”

সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দাদের ভোটদানের এমন সম্ভাবনা ঘিরে আগে থেকেই অবশ্য রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে তাঁদের মন জয়ের চেষ্টা শুরু হয়েছে। জমেছে কৃতিত্ব দাবির লড়াই। তৃণমূল, বাম, বিজেপি, কংগ্রেস সব শিবিরেরই দাবি ছিটমহল বিনিময়ে কারিগর তারাই। যা দেখে সাবেক ছিটের কয়েকজন বাসিন্দার বক্তব্য জেলার ন’টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে দিনহাটা, সিতাই, শীতলখুচি, মেখলিগঞ্জ সহ চারটি বিধানসভায় ওই ভোটাররা সত্যিই ফ্যাক্টর হতে পারেন। নাগরিক অধিকার রক্ষা সমন্বয় কমিটি অবশ্য ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, সাবেক ছিটমহলের ওই বাসিন্দাদের পাশে যে দল থাকবে তাঁরাই সমর্থন পাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন