ছাত্র মৃত্যুতে তদন্তের ভার নিল সিআইডি

মাস দু’য়েক আগেই দশম শ্রেণির এক ছাত্রের মৃত্যুতে নাম জড়িয়েছিল পুরপ্রধানের ছেলের। সুহৃৎ দাস নামে ওই কিশোরের বাবা-মায়ের অভিযোগ ছিল, সহপাঠীই খুন করে পুকুরের জলে ফেলে দেয় সুহৃৎকে। যদিও কালনা থানা দাবি করে, ময়নাতদন্তে আঘাতের চিহ্ন মেলেনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা ও কালনা শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৬ ০২:১৯
Share:

এই পুকুর থেকেই দেহ মিলেছিল সুহৃতের (ইনসেটে)। ফাইল চিত্র।

মাস দু’য়েক আগেই দশম শ্রেণির এক ছাত্রের মৃত্যুতে নাম জড়িয়েছিল পুরপ্রধানের ছেলের। সুহৃৎ দাস নামে ওই কিশোরের বাবা-মায়ের অভিযোগ ছিল, সহপাঠীই খুন করে পুকুরের জলে ফেলে দেয় সুহৃৎকে। যদিও কালনা থানা দাবি করে, ময়নাতদন্তে আঘাতের চিহ্ন মেলেনি। পুলিশি তদন্তে সন্তুষ্ট না হয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন সুহৃতের বাবা-মা। বুধবার ওই মামলার তদন্তভার সিআইডির হাতে তুলে দেওয়া হল।

Advertisement

ওই পরিবারের আইনজীবী উদয়শঙ্কর চট্টোপাধ্যায় জানান, আইনশৃঙ্খলাজনিত সমস্যার কারণে থানা তদন্ত করতে পারছে না। তার ফলে মামলাটি সিআইডিকে হস্তান্তর করা হচ্ছে বলে সরকারি কৌঁসুলি শুভব্রত দত্ত এ দিন আদালতকে জানান। বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী চার সপ্তাহের মধ্যে সিআইডির কাছে মামলার রিপোর্ট চেয়েছেন।

দু’দিন নিখোঁজ থাকার পরে ১৫ জুন কালনারই এক পুকুর থেকে দেহ মিলেছিল সুহৃতের। তার বাবা হৃষিকেশ দাস ছেলেকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। অভিযুক্তের তালিকায় নাম ছিল সুহৃতের সহপাঠী, কালনার পুরপ্রধানের ছেলে এবং পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলার সমরজিৎ হালদারের। শহর জুড়ে প্রতিবাদ মিছিল, বিক্ষোভ শুরু হয়। ঘটনার দিন জনতার একাংশ খেপে উঠে পুরপ্রধান দেবপ্রসাদ বাগকেও মারতে উদ্যত হন। কোনও রকমে রেহাই পান তিনি। পরে পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে। পুরপ্রধানের ছেলে আপাতত বর্ধমানের জুভেনাইল হোমে এবং অভিযুক্ত কাউন্সিলর জেলে রয়েছেন।

Advertisement

তবে গোড়া থেকেই পুলিশের ভূমিকায় সন্তুষ্ট ছিল না সুহৃতের পরিবার। খুনের বিচার চেয়ে এবং তাঁদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে অভিযোগ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও যান তাঁরা। পুলিশের যদিও দাবি ছিল, ওই ছাত্রের দেহে কোনও আঘাতের চিহ্ন মেলেনি। জলে ডুবেই মৃত্যু হয়েছে। এরপরেই হাইকোর্ঠের দ্বারস্থ হন ওই পরিবার। এ দিন সুহৃতের বাবা হৃষিকেশবাবু বলেন, ‘‘আমরা পুলিশের তদন্তে সন্তুষ্ট ছিলাম না। তাই হাইকোর্টে যাই। আমদের বিশ্বাস, ছেলেকে পরিকল্পিত ভাবে খুন করা হয়েছে। বিচার পেতে যত দূর যেতে হয় যাব।’’ মা, কেতকী দেবীও বলেন, ‘‘বিচার চেয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গিয়েছিলাম। মামলা সিআইডির হাতে যাওয়ায় আশা করি বিচার পাব।’’

পুরপ্রধান দেবপ্রসাদবাবু যদিও দাবি করেন, এখনও মামলার তদন্তভার হস্তান্তরের কোনও নথিপত্র পাননি তিনি। তবে সমস্ত তদন্তকারী দলকেই সাহায্য করা হবে বলে তাঁর আশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘প্রথম থেকেই বলছি প্রকৃত সত্য উদ্ধার হোক। যেই তদন্ত করুক সহযোগিতা করা হবে।’’

এ দিন বর্ধমানের এক কিশোরী নিখোঁজের তদন্তভারও সিআই়ডিকে দিয়েছেন বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী। ওই কিশোরীর পরিবারের আইনজীবী উদয়শঙ্কর চট্টোপাধ্যায় ও স্নিগ্ধা দাস জানান, ১৭ জুলাই বর্ধমান শহরের বাসিন্দা ওই কিশোরী নিখোঁজ হয়। পুলিশে ডায়েরি করা হলেও তাঁর খোঁজ মেলেনি। এ দিন সরকারি কৌঁসুলি অমিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় আদালতে বলেন, মোবাইল ফোনের টাওয়ার লোকেশন খতিয়ে দেখে পুলিশ জেনেছে, ওই কিশোরী বর্তমানে তিরুঅনন্তপুরমে রয়েছে। তাকে ভিন রাজ্য থেকে দ্রুত উদ্ধার করার জন্য মামলাটির তদন্তভার সিআইডিকে দেন বিচারক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন