Sukanta Majumdar

BJP: মৃতদেহ নিয়ে বিজেপি-পুলিশ অশান্তি কালীঘাটে

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৭:৫৩
Share:

সুকান্ত মজুমদারকে রাস্তা থেকে তুলছে পুলিশ। সৌজন্য: এবিপি আনন্দ

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির অদূরে দলীয় কর্মীর মৃতদেহ নিয়ে বসে পড়লেন বিজেপির নতুন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, ভবানীপুরের দলীয় প্রার্থী প্রিয়ঙ্কা টিবরেওয়াল, সাংসদ অর্জুন সিংহ প্রমুখ। ওই জায়গায় তাঁদের যাওয়ার ঘোষিত কর্মসূচি ছিল না বলে পুলিশ জানিয়েছে। বিজেপি-ও তা অস্বীকার করেনি। পুলিশের সঙ্গে বচসা, ধস্তাধস্তি হয় বিজেপি কর্মীদের। সুকান্তকে সরিয়ে দেয় পুলিশ।

Advertisement

বিধানসভা ভোটে মগরাহাট পশ্চিম কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী মানস সাহা বুধবার ঠাকুরপুকুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান। অভিযোগ, ভোটের ফল প্রকাশের দিন গণনাকেন্দ্র থেকে বেরোতেই তৃণমূলের লোকজন লাঠি-রড-ইট দিয়ে মেরে তাঁর মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিল। মাস দু’য়েক চিকিৎসার পরে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরেন তিনি। কিছু দিনের মধ্যে তাঁর ফের শরীর খারাপ হলে ঠাকুরপুকুরের বেসরকারি হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়। বুধবার সেখান থেকে তাঁর ছুটি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই দিনই তাঁর মৃত্যু হয়। বিজেপির অভিযোগ, মানস ভোট পরবর্তী হিংসার শিকার। যদিও ভোট গণনার দিন তাঁর উপরে হামলার পরে দলের তরফে থানায় অভিযোগ করা হয়নি।

বৃহস্পতিবার মানসের মৃতদেহ বিজেপির রাজ্য দফতরে আনা হয়। সেখানে সুকান্ত, কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরী-সহ রাজ্য নেতারা মানসকে শেষ শ্রদ্ধা জানান। হরদীপ বলেন, ‘‘আগামী দিনে গণতন্ত্রকে মজবুত করতে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে সত্য প্রকাশ করা প্রয়োজন।’’ সুকান্ত বলেন, ‘‘এই ঘটনা গণতন্ত্রের পক্ষে লজ্জা। বাংলায় এই রকম অরাজকতা চলে। অন্য কোথাও চলে না।’’

Advertisement

বিজেপির রাজ্য দফতর থেকে সুকান্তর নেতৃত্বে বিজেপি কর্মীরা মানসের মৃতদেহ নিয়ে রওনা হন। বিজেপির তরফে জানানো হয়েছিল, মৃতদেহ নিয়ে কেওড়াতলায় যাওয়া হবে। কিন্তু আচমকাই দেখা যায়, সুকান্তরা মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির গলি হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের কাছে পৌঁছে গিয়েছেন।

লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘বিজেপির তরফে বলা হয়েছিল, আশুতোষ মুখার্জি রোড ধরে ওঁরা কেওড়াতলার দিকে যাবেন। কিন্তু হঠাৎ হাজরায় ডান দিকে ঢুকে ওঁরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন। বিজেপির রাজ্য সভাপতি আচমকা রাস্তার মাঝে বসে পড়েন। তখন পিছনে গাড়ির লাইন! ওঁকে উঠতে অনুরোধ করা হয়। শোনেননি! অগত্যা পুলিশকর্মীরা ওঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে সরান।’’ হাজরা থেকে বিজেপি কর্মীরা মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির গলির দিকে হানা দেওয়ার সময়ে মমতা ভবানীপুরে ভোটপ্রচারে ছিলেন। সেখানে কর্তব্যরত পুলিশকর্তারা খবর পেয়ে হাজরায় বাহিনী পাঠান।

এই ঘটনায় পুলিশ অবশ্য এখনও কাউকে গ্রেফতার করেনি। শহরে যান চলাচল অব্যাহত রেখে বিক্ষোভকারীদের দ্রুত সরানোয় জোর দিয়েছিল তারা। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘ওঁদের সঙ্গে একটি মৃতদেহ ছিল। তখনই ধরপাকড় করলে মৃতদেহের অমর্যাদা হত। সেটা আমরা চাইনি। দরকারে পরে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।’’

পরে সুকান্ত অভিযোগ করেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ আমাদের বাধা দেয়। আমাদের প্রার্থী প্রিয়ঙ্কা ও সাংসদদের উপরে হামলা হয়। জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতোর নিরাপত্তারক্ষীর গলা চেপে ধরা হয়। সাংসদদের উপর হামলা হয়েছে। তাই আমরা লোকসভার স্পিকারের কাছে অভিযোগ জানাব।’’ বিজেপি নেতারা কেন মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে যাওয়ার পরিকল্পনা গোপন করে পুলিশকে বলেছিলেন, কেওড়তলায় যাওয়া হবে? সুকান্তর দাবি, ‘‘আমাদের কোনও পরিকল্পনা ছিল না। পুলিশ গাড়ি থামাতে আমরা নামি। পুলিশ মৃতদেহ হাইজ্যাক করার চেষ্টা করছিল।’’ সুকান্তর সংযোজন, ‘‘এর আগে মুখ্যমন্ত্রী নিজে বার বার বিভিন্ন দেহ নিয়ে রাজনীতি করেছেন। তাই আমরাও করব ভাবছি। আমরা একটু প্রশ্ন করতে গিয়েছিলাম। শুনলাম, উনি নাকি জানেন না, কোথায় ভোট পরবর্তী হিংসা হয়েছে। তাই দেখাব বলে ভেবেছিলাম।’’

নতুন রাজ্য সভাপতি হয়ে দলীয় কর্মীদের চাঙ্গা করতেই কি তাঁর এ দিনের এ হেন পদক্ষেপ? সুকান্ত বলেন, ‘‘আমাদের কর্মীরা উদ্দীপ্তই আছেন। আগামীতে এটাই করা হবে। চোখে চোখ রেখে কড়া জবাব দেব। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, খেলা হবে। আমরা গোল দেব।’’

মানসের মৃতদেহ নিয়ে বিজেপি নেতাদের আচরণ এবং অভিযোগের জবাবে তৃণমূলের মুখপাত্র সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, ‘‘নির্বাচনের চার মাস পরে বিজেপি এক জনের মৃতদেহ নিয়ে অশান্তি ছড়াতে চেয়েছিল। ভবানীপুরে একটা গোলমাল করে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করার চক্রান্ত। নির্বাচন কমিশন এ সব দেখুক।’’ তাঁর আরও কটাক্ষ, ‘‘অসমে নিরস্ত্র, নিরীহ মানুষের উপর পুলিশ যে বর্বরোচিত আক্রমণ করেছে, তাতে বিজেপির গণতন্ত্রের চেহারা বিশ্বের মানুষের সামনে ধরা পড়েছে!’’

এ দিন রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ মানসের দেহ তাঁর বাড়িতে পৌঁছয়। ডায়মন্ডহারবার পুলিশ জেলার সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, হামলার দিন কেউ লিখিত অভিযোগ দায়ের করেননি। পুলিশ নিজের উদ্যোগে মামলা করে তিন জনকে গ্রেফতার করেছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন