এমন সরকার পাবেন না, আশাকর্মীদের বললেন মুখ্যমন্ত্রী

বিদ্রোহে ইন্ধনের নালিশ মমতার

আশাকর্মীদের ‘বিদ্রোহ’র পিছনে নিশ্চিত ‘কারও’  উদ্দেশ্যমূলক প্ররোচনা বা ইন্ধন রয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে একাধিক জনসভা ও বৈঠকে অভিযোগ তুলেছিলেন। রাজ্য আশাকর্মীদের জন্য কী কী সুবিধা দিচ্ছে তারও বিবরণ উঠে এসেছিল মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৪৭
Share:

জেলাস্তরের স্বাস্থ্য পরিষেবা নির্ভর করে আছে প্রধানত তাঁদের কাঁধে ভর করেই। সেই আশাকর্মীরা গত ১৮ ডিসেম্বর কলকাতায় সরকারি নীতির বিরুদ্ধে মিছিল ও জনসভায় বিপুল সংখ্যায় যোগ দেওয়ার পরেই রাজ্যের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্কে টানাপোড়েন চরমে উঠেছিল। তোলপাড় শুরু হয়েছিল স্বাস্থ্য দফতরে। আশাকর্মীদের ‘বিদ্রোহ’র পিছনে নিশ্চিত ‘কারও’ উদ্দেশ্যমূলক প্ররোচনা বা ইন্ধন রয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে একাধিক জনসভা ও বৈঠকে অভিযোগ তুলেছিলেন। রাজ্য আশাকর্মীদের জন্য কী কী সুবিধা দিচ্ছে তারও বিবরণ উঠে এসেছিল মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতায়। নবান্নের নির্দেশে মিছিলে যাওয়ার জন্য একাধিক জেলায় আশাকর্মীদের শো কজ করা হয়েছিল। আশা কর্মীরা অভিযোগ করেছিলেন, একাধিক জেলায় পুলিশ তাঁদের বাড়ি পর্যন্ত হাজির হয়ে মিছিলে যাওয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করছে, ভয় দেখাচ্ছে।

Advertisement

নদিয়া সফরে এসে কৃষ্ণনগরে গভর্মেন্ট কলেজের মাঠে মঙ্গলবার প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী ফের সেই আশাকর্মীদের প্রসঙ্গ তুলেছেন। তাঁর বক্তৃতায় এসেছে কলকাতায় মিছিল, বিক্ষোভ কর্মসূচির কথা। এ বার আশাকর্মীদের মিছনে উস্কানিদাতার পরিচয় শুধু ইঙ্গিতে আবদ্ধ রাখেননি তিনি। সরাসরিই ইন্ধনদাতার নাম জানিয়েছেন। বলেছেন, ‘‘এসইউসি নেচে বেড়াচ্ছে। কলকাতায় টানতে-টানতে নিয়ে যাচ্ছে। জিজ্ঞাসা করুন, চৌত্রিশ বছর ছিলেন, মাইনে বাড়িয়েছেন?’’ কেন্দ্রীয় প্রকল্প হওয়া সত্ত্বেও আশাকর্মীদের জন্য তাঁর সরকার মাসে দু’ হাজার টাকা ভাতা-র ব্যবস্থা করেছে, সেই কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি। বিরোধীদের একাংশের অভিযোগ, পঞ্চায়েত নির্বাচন শিয়রে, এই সময় আশাকর্মীদের সরকার-বিরেধী বিশাল সমাবেশে আসলে প্রশাসন ভুত দেখছে। কারণ গ্রামের দিকে আশাদের প্রভাব যথেষ্ট বেশি।

আশাকর্মীরা প্রথম থেকেই দাবি করেছে, কোনও রাজনৈতিক দলের প্রভাবে তাঁরা সমাবেশ করেননি। স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে, নিজেদের মনের আকুতি থেকে তাঁরা পথে নেমেছিলেন, কারণ তাঁরা শোষিত। ‘পশ্চিমবঙ্গ আশাকর্মী ইউনিয়ান’ এর তরফে ইসমত আরা খাতুন নদিয়ার সভার পরে মন্তব্য করেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর মাথায় ‘প্ররোচনা’ ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিছুতেই সেটা ভুলতে পারছেন না।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘রাজ্য যেমন আমাদের ২০০০ টাকা করে দিচ্ছে তেমন আমাদের নিংড়ে নেওয়া হচ্ছে। এমন অনেক কাজ করানো হচ্ছে যা আমাদের করার কথা নয়। গাছ বিলি,পরীক্ষার গার্ড জেওয়া, মেলার ডিউটি সব আমাদের করতে হচ্ছে।’’

Advertisement

এ দিন আশাকর্মীদের পাশাপাশি আইসিডিএস কর্মীদের সরকার কী কী সুবিধা দিচ্ছে তা-ও জানান মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্র আইসিডিএসের টাকা কমিয়েছে জানিয়ে বলেন, ‘‘আইসিডিএস এর ৯০ শতাংশ টাকা কেন্দ্র দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। আমাদের তা দিতে হচ্ছে। ওরা এটাই করে। এক-একটা প্রকল্প চালু করে আবার বন্ধ করে দেয়। আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মীদের বলছি, অন্যের কথা শুনে কিছু করবেন না। এমন সরকার আর পাবেন না।’’ মুখ্যমন্ত্রীর কথার সমর্থন করে রাজ্যের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা পরে টেলিফোনে বলেন, ‘‘২০১৭ সালের নভেম্বর থেকে কেন্দ্র আইসিডিএস প্রকল্পে নিজেদের অংশ কেটে প্রায় বাদ দিয়েছে। রাজ্যের খরচ বেড়ে গিয়েছে। আমরা তো প্রকল্প বন্ধ করতে পারি না। টেনে যাচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন