সরকারের ‘হিত’ করতে গিয়েছিলেন। হয়েছে বিপরীত! শিশু পাচারের ঘটনা নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে বোঝাতে গিয়েছিলেন, বেসরকারি হোমে কে বাচ্চা এনে রাখছে, তা তাঁর দফতরের জানার কথা নয়। কিন্তু তার ওই মন্তব্যের পর রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধেই নজরদারিতে সার্বিক গাফিলতির অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। মহিলা ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজার উপরে তাই প্রবল ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে শশীকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এ নিয়ে তিনি যেন আর টুঁ শব্দটিও যেন না করেন!
শিশু বিক্রির চক্র প্রকাশ্যে আসায় গত এক সপ্তাহ ধরে তোলপাড় চলছে রাজ্যে। মঙ্গলবার নিজেই সাংবাদিক বৈঠক ডেকেছিলেন শশী। সেখানে তিনি বলেন, শিশু দত্তক নেওয়ার প্রক্রিয়ার উপরে সরকারি নজরদারির ব্যবস্থা থাকলেও শিশু পাচার ধরা বা তা আটকানোর মতো পরিকাঠামো তাঁর দফতরের নেই। মন্ত্রী এ-ও বলেছিলেন, ১০টি বাচ্চা যেখান থেকে উদ্ধার হয়েছে, সেই ‘পূর্বাশা’ হোম তাঁর দফতরের আওতায় পড়ে না।
এই কথার পরেই প্রশ্ন ওঠে, সরকারি নজরদারির ফাঁক গলেই যে রাজ্যে শিশু পাচারের রমরমা চলছে, তা-ই কি প্রকারান্তরে মেনে নিলেন শশী? তা ছাড়া, সরকারও কি এ ভাবে দায় এড়াতে পারে? শশীর দফতরের না হোক, কোনও না কোনও দফতরের দায় তো থাকবেই। স্বাভাবিক ভাবেই অস্বস্তিতে পড়ে যায় সরকার।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার লখনউয়ে ছিলেন। সূত্রের খবর, সেখান থেকে রাতে পটনা পৌঁছেই শশীর সাংবাদিক বৈঠকের কথা শুনে প্রচণ্ড রেগে যান তিনি। যদিও সরাসরি শশীকে নিজে ফোন করেননি মমতা। পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ফোনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ব্যাপারটা তো পুরোপুরি শশীর দফতরের বিষয় নয়! তিনি কেন সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুলবেন? কাজেই পার্থবাবু যেন শশীকে মুখ বন্ধ রাখতে বলেন।
মুখ্যমন্ত্রীর ওই নির্দেশ পেয়ে বুধবার দুপুরে শশীকে ফোন করেন পার্থবাবু। মুখ্যমন্ত্রীর অনুমতি না নিয়ে শশী কেন সাংবাদিক বৈঠক করেছেন, সে ব্যাপারে কৈফিয়ত চান। তার পর জানিয়ে দেন, তিনি যেন মুখে
কুলুপ আঁটেন।
যদিও বিরোধীরা ইতিমধ্যেই শশীর মন্তব্যকে অস্ত্র করেছে। এ দিন বিক্ষোভে তাঁর ইস্তফার দাবি তুলেছে কংগ্রেস ও বিজেপি। সল্টলেকের ময়ূখ ভবনের সামনে বিক্ষোভে বিজেপির রাজ্য সম্পাদক লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘নার্সিংহোম থেকে শিশু পাচার হয়ে যাচ্ছে, মায়ের কোল খালি হয়ে যাচ্ছে, অথচ প্রশাসন নাকি জানেই না!’’ একই ভাবে প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক তুলসী মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে
দক্ষিণ কলকাতায় বিক্ষোভ দেখিয়েছে কংগ্রেস।