নোট বাতিলের ধাক্কায় রাজ্যেই ৫ হাজার কোটি ক্ষতির আশঙ্কায় মুখ্যমন্ত্রী

সোমবার বিধানসভায় বিতর্কে অংশ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘কেন্দ্রের এই নোট-বন্দি খেলায় ধ্বংসের পথে চলেছে দেশের অর্থনীতি। বাংলার অর্থনীতিকেও মরুভূমির ওপর দাঁড় করিয়ে দিয়েছে এই তুঘলকি সিদ্ধান্ত।’’ এর পরই রাজ্যের রাজস্ব ক্ষতির একটি হিসেব বিধানসভায় তুলে ধরেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৪:৪৮
Share:

সোমবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: সুদীপ আচার্য

নোট বাতিলের ধাক্কায় চলতি অর্থবর্ষের শেষ পাঁচ মাসে রাজ্যের সওয়া পাঁচ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

সোমবার বিধানসভায় বিতর্কে অংশ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘কেন্দ্রের এই নোট-বন্দি খেলায় ধ্বংসের পথে চলেছে দেশের অর্থনীতি। বাংলার অর্থনীতিকেও মরুভূমির ওপর দাঁড় করিয়ে দিয়েছে এই তুঘলকি সিদ্ধান্ত।’’ এর পরই রাজ্যের রাজস্ব ক্ষতির একটি হিসেব বিধানসভায় তুলে ধরেন তিনি। মমতার কথায়, ‘‘নোট বাতিলের জেরে চলতি আর্থিক বছরের বাকি মাসগুলিতে রাজ্যের রাজস্ব আদায় ২৫ শতাংশ কমে যেতে পারে। হিসেব মতো ক্ষতির পরিমাণ হতে পারে প্রায় ৫২৬০ কোটি টাকা। যা বার্ষিক রাজস্ব আদায়ের ১১ শতাংশ।’’

কেন্দ্রের নোট সিদ্ধান্ত বাংলার শিল্প-বাণিজ্যের কোন কোন ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, তা-ও জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘এর ফলে চা ও পাট, কৃষি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, পরিকাঠামো উন্নয়ন সবই বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। চা শিল্পে ক্ষতি হতে পারে ২৫ শতাংশ। সিমেন্টে ১৫, বৈদ্যুতিন সামগ্রীতে ৫০, গাড়ি বিক্রি থেকে কর বাবদ ১৫ এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর বাণিজ্যে ২০ শতাংশের মতো ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।’’

Advertisement

অর্থ দফতরের একাংশের মতে, নোট বাতিলের ফলে রাজ্যের অর্থনীতিকে ধাক্কা লাগবে ঠিকই। আবার এটাও ঠিক, গত তিনটি ত্রৈমাসিকে রাজস্ব আদায় উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়েনি। গত তিন বছরের হিসেব দিয়ে অর্থ-কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, ২০১৬-১৭ বাজেটে নিজস্ব কর সংগ্রহের যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল, তা এখন কোনও ভাবেই অর্জন করা সম্ভব নয়। এ বছর বাজেটে ৫০ হাজার কোটি টাকা নিজস্ব কর সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়েছিল অর্থ দফতর। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৬% বেশি। কিন্তু বাস্তবে নিজস্ব করের বৃদ্ধির হার গত তিন বছরে ১০% ছাড়ায়নি। ‘‘ফলে ৫০ হাজার কোটি যে রোজগার হবে না, তা জানাই ছিল। এখন নোট বাতিলের ফলে তো নয়ই’’— বলেন দফতরের এক কর্তা।

পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৫-১৬ বাজেটে সরকার ৪৭ হাজার কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যে নেমে ৪৩ হাজার কোটির বেশি তুলতে পারেনি। ২০১৪-১৫ সালে ৪২ হাজার কোটি আদায়ের লক্ষ্য নিলেও আদায় হয়েছিল ৩৯ হাজার কোটি।

অর্থ কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, নোট বাতিলের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির আশঙ্কা আবাসন এবং পরিকাঠামো ক্ষেত্রে। এর ফলে সিমেন্ট, ইস্পাতের বিক্রি কমে যাবে। শিল্পেও মন্দা আসবে। ফলে বিদ্যুতের চাহিদাও কমবে। আর বিদ্যুতের চাহিদা কমলে কয়লার উৎপাদন কমবে। এক কর্তার কথায়, ‘‘সবচেয়ে বেশি ভ্যাট আদায় হয় যে সব জিনিসে, যেমন ইস্পাত, সিমেন্ট, কয়লা থেকে আয় কমতে বাধ্য। কমবে বিদ্যুৎশুল্কও। ভোগ্যপণ্যের বিক্রিও হু হু করে কমছে।’’

শুধু এটুকু নয়। রবি চাষ ধাক্কা খেলে, আলু, সর্ষে, ডালের উৎপাদন কমবে। তার ফলে মূল্যবৃদ্ধি আকাশ ছোঁবে বলে আশঙ্কা অর্থ-কর্তাদের। এক কর্তার কথায়, ‘‘কৃষি থেকে সরাসরি কর আসে না। তবে কৃষি পণ্যের বাণিজ্য থেকে তো সরকারের রোজগার হয়। এ বার সেটাও মার খাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন