প্রাথমিক স্তরে পঞ্চম শ্রেণিকে আনতে কমিটি

পঞ্চম শ্রেণিকে প্রাথমিকের অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে প্রথম ও প্রধান বাধা পরিকাঠামোর ঘাটতি। স্থায়ী স্কুলভবন, সজ্জিত শ্রেণিকক্ষের অভাব তো আছেই। সর্বোপরি রয়েছে শিক্ষক-শিক্ষিকার ঘাটতি।

Advertisement

সুপ্রিয় তরফদার

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৮ ০৫:০৬
Share:

কেন্দ্রীয় আইন অনুযায়ী প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি শিক্ষার প্রাথমিক স্তরের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চমের স্থান এখনও উচ্চ প্রাথমিকেই। কেন্দ্র ও অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য আনতে এ বার সক্রিয় হয়েছে রাজ্য।

Advertisement

সেই তৎপরতার অঙ্গ হিসেবে রাজ্য সরকারকে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করার প্রস্তাব দিয়েছে স্কুলশিক্ষা দফতর। ওই কমিটিতে জেলাশাসক-সহ স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিনিধিদের যুক্ত করার প্রস্তাবও রয়েছে। আপাতত প্রস্তাব, তবে তাঁদের অন্তর্ভুক্তি যে হবেই, তা এক প্রকার নিশ্চিত বলে দফতরের কর্তাদের দাবি। এ ভাবেই পঞ্চম শ্রেণিকে প্রাথমিকে আনার পথে এক ধাপ এগিয়েছে স্কুলশিক্ষা দফতর।

জুলাইয়ে সব জেলা স্কুল পরিদর্শক (ডিআই)-এর কাছে বিভিন্ন স্কুলের পরিকাঠামোর বিষয়ে রিপোর্ট তলব করা হয়েছিল। কিন্তু যে-সব রিপোর্ট এসেছে, তার অধিকাংশই ত্রুটিপূর্ণ বলেই অভিযোগ। স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, ১৪ অগস্ট বিকাশ ভবনে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়। দফতরের উচ্চপদস্থ কর্তা, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বোর্ড, সর্বশিক্ষা মিশনের কর্তারা সেখানে ছিলেন। সেই বৈঠক থেকেই রাজ্য সরকারকে কমিটি গড়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। ঠিক হয়, ওই কমিটি প্রতিটি স্কুল পরিদর্শন করে প্রাথমিকের নতুন বিন্যাসে পরিকাঠামোর দিক থেকে কী কী অবশ্য প্রয়োজন, তা জানাবে।

Advertisement

আরও পড়ুন: স্কুলপাঠ্যে ফারহানই মিলখা, সরব অভিনেতা

পঞ্চম শ্রেণিকে প্রাথমিকের অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে প্রথম ও প্রধান বাধা পরিকাঠামোর ঘাটতি। স্থায়ী স্কুলভবন, সজ্জিত শ্রেণিকক্ষের অভাব তো আছেই। সর্বোপরি রয়েছে শিক্ষক-শিক্ষিকার ঘাটতি।

থাকতে পারেন কারা

• ডিএম/এসডিও/বিডিও

• প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান

• প্রাথমিকের ডিআই

• মাধ্যমিকের ডিআই

• সর্বশিক্ষা মিশনের জেলা প্রকল্প আধিকারিক

সূত্র: স্কুলশিক্ষা দফতর

বিকাশ ভবনের ওই বৈঠকে উপস্থিত এক কর্তা জানান, রাজ্যে প্রাথমিক স্কুল রয়েছে প্রায় ৫৬ হাজার। শিক্ষকের সংখ্যা এক লক্ষ ৮০ হাজার। পঞ্চম শ্রেণিকে প্রাথমিক স্কুলের অন্তর্ভুক্ত করতে হলে আরও ৫০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। সেই জন্যই জুলাইয়ে ডিআই-দের বলা হয়েছিল, প্রাথমিকে পঠনপাঠনের নতুন বিন্যাসের জন্য কোথায় কী কী প্রয়োজন, তার তালিকা তৈরি করা হোক। ডিআই-দের রিপোর্ট এসেছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বেশির ভাগ রিপোর্ট নিছক শুকনো পরিসংখ্যান। অনুসন্ধান করা হয়নি। ফলে রিপোর্টে অস্বাভাবিক হিসেব-পরিসংখ্যান জায়গা পেয়েছে। যেমন রিপোর্ট বলছে, প্রাক্‌-প্রাথমিক ও পঞ্চম শ্রেণির জন্য শুধু শ্রেণিকক্ষ ও শৌচালয় তৈরি করতেই প্রয়োজন হবে পাঁচ হাজার কোটি টাকা! কিন্তু তার থেকে অনেক কম অর্থেই তা করে ফেলা সম্ভব বলে জানান বিকাশ ভবনের বৈঠকে থাকা ওই কর্তা।

শিক্ষাকর্তারা জানাচ্ছেন, অনেক স্কুলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক একসঙ্গে রয়েছে। কোথাও আবার প্রথম থেকে পঞ্চম রয়েছে একসঙ্গে। সেখানে বাড়তি শ্রেণিকক্ষের প্রয়োজন নেই। অথচ ডিআই-দের রিপোর্টে সেটার উল্লেখই নেই। আবার কোথাও কোথাও চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পঠনপাঠনের জন্য শিক্ষক রয়েছেন মাত্র তিন জন। অর্থাৎ একসঙ্গে চারটি ক্লাস চলা সম্ভব নয়। এই বৈষম্য মেটাতে তথ্য সংগ্রহের জন্য কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ‘‘সরকার অনুমোদন দিলেই দ্রুত কাজ শুরু হবে,’’ বলেন এক শিক্ষাকর্তা।

বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘সামঞ্জস্য অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু সব কিছুর আগে উচ্চ প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে শিক্ষক নিয়োগ সম্পূর্ণ করা দরকার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন