CWG 2022

Achinta Sheuli: সংসার চালাতে জরির কাজও করেছেন অচিন্ত্য

দুই কিশোর পুত্রের কনিষ্ঠজন অচিন্ত্য শিউলি বার্মিংহামে কমনওয়েলথ গেমসে ভারোত্তোলনে ৭৩ কেজি বিভাগে সোনা জিতেছেন।

Advertisement

নুরুল আবসার

পাঁচলা শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০২২ ০৬:৪০
Share:

n পদক রাখার শো-কেস নেই ঘরে। দেওয়ালে পেরেক থেকেই ঝোলে সে সব। কমনওয়েলথ গেমসে স্বর্ণপদকজয়ী অচিন্ত্যর মা পূর্ণিমা শিউলি সোমবার সেই সব পদক নামিয়ে দেখাচ্ছেন। ছবি: সুব্রত জানা।

কিশোর দুই ছেলে এবং স্ত্রীকে রেখে হাওড়ার পাঁচলার দেউলপুরের বাসিন্দা, ভ্যানচালক জগৎ শিউলি যখন মারা গেলেন, দেহ সৎকারের টাকা ছিল না পরিবারের। অন্ধকারে ডুবে থাকা সেই পরিবারে ৯ বছর পরে যেন উৎসবের আলো!

Advertisement

সে দি‌নের দুই কিশোর পুত্রের কনিষ্ঠজন অচিন্ত্য শিউলি বার্মিংহামে কমনওয়েলথ গেমসে ভারোত্তোলনে ৭৩ কেজি বিভাগে সোনা জিতেছেন। রবিবার রাতে টিভিতে সেই মুহূর্ত দেখে আনন্দে চোখের জলে ভেসেছেন মা পূর্ণিমা, দাদা অলোক। উৎসবে মেতেছে গোটা গ্রাম।

সোমবার দিনভর পাড়া-পড়শির ভিড় ছিল অচিন্ত্যদের টালির বাড়িতে। পূর্ণিমা বলেন, ‘‘কী দারিদ্র্যের মধ্যে কেটেছে অচিন্ত্যের ছেলেবেলা! ওর বাবা বেঁচে থাকলে আজ কী খুশিই না হতেন!’’

Advertisement

রবিবার ভারতীয় সময় রাত ৯টা নাগাদ প্রতিযোগিতায় নামার আগে মাকে ফোন করেছিলেন অচিন্ত্য। মা ছেলেকে বলেন, ‘‘সোনা তুমি পাবেই। তোমার দিকে সারা দেশ তাকিয়ে আছে।’’ ছেলে কথা রাখায় মা গর্বিত।

ভ্যান চালিয়ে জগৎ যা রোজগার করতেন, তাতে সংসার চলত না। ঠেকনা দিতে পূর্ণিমা জরির কাজ করতেন। বাবার মৃত্যুর পরে অচিন্ত্য এবং অলোকও মায়ের সঙ্গে সেই কাজে হাত লাগান। অলোক পাড়ার কোচ অষ্টম দাসের আখড়ায় ভারোত্তোলন অনুশীলন করতেন। ভাইকেও সেখানে ভর্তি করিয়ে দেন। সেই শুরু।

২০১৪ সালে অচিন্ত্য দেউলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণিতে পড়ছিলেন। অষ্টম তাঁকে পুণের আর্মি স্পোর্টস ইনস্টিটিউশনে ভর্তি করিয়ে দেন। এরপর থেকে সেখানেই অচিন্ত্যের পড়াশোনা এবং খেলাধুলো— দু’টোই চলেছে। গত বছর সেনাবাহিনীতে চাকরি পান তিনি। এখন পাতিয়ালায় অনুশীলন করেন।

অলোক বলেন, ‘‘বাড়িতে ভাইকে পুষ্টিকর খাবার দিতে পারিনি। সেনার প্রতিষ্ঠানে কিছু টাকা প্রতি মাসে পাঠাতে হত। সেটাও দিতে আমাদের কষ্ট হত।’’ এই অবস্থায় অষ্টম পাশে দাঁড়ান। পূর্ণিমার কথায়, ‘‘অষ্টমবাবুর ঋণ শোধ করতে পারব না। এখানে অচিন্ত্যকে পুষ্টিকর খাবার কিনে দিতেন। মাঝেমধ্যে টাকাও দিয়েছেন‌। নিজের খরচে ছেলেকে পুণেতে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করিয়ে দেন।’’ সোমবার দুপুরে গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, গ্রামবাসীদের ভিড়ে কার্যত মেলা বসেছে। অচিন্ত্যর বন্ধু সঞ্জু শিউলি, অজয় শিউলি, শ্রীমন্ত শিউলিদের উচ্ছ্বাস, ‘‘শুধু আমাদের গ্রাম নয়, দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে অচিন্ত্য।’’ খুশির অন্ত নেই দেউলপুর উচ্চ বিদ্যালয়েও। এ দিন স্কুলে সবাইকে মিষ্টিমুখ করানো হয়। মিড-ডে মিলেও ছিল মিষ্টি। প্রধান শিক্ষক সমীরকুমার মণ্ডলের নেতৃত্বে শিক্ষক-শিক্ষিকারা বাড়িতে গিয়ে অচিন্ত্যের মায়ের হাতে মিষ্টির প্যাকেট তুলে দেন। প্রধান শিক্ষকের কথায়, ‘‘আসল উৎসব হবে অচিন্ত্য ফেরার পরে। গ্রামবাসীদের সঙ্গে নিয়ে ওকে সংবর্ধনা দেব।’’

৬ অগস্ট অচিন্ত্যের বাড়ি ফেরার কথা। তাঁর ফেরার অপেক্ষায় দেউলপুর। অলোক বলেন, ‘‘২০২৪ সালের প্যারিস অলিম্পিক ভাইয়ের পরবর্তী লক্ষ্য। ওর সঙ্গে মোবাইলে ভিডিয়ো-কলে আমার কথা হয়েছে। ভাই জানিয়েছে, অলিম্পিকে সোনার জন্য ঝাঁপাবে।’’ ছাত্রের প্রতি অষ্টমের প্রত্যয়, ‘‘আমার বিশ্বাস, অচিন্ত্য অলিম্পিকে সোনা পাবে। ওর জেদ আছে। শুধু কমনওয়েলথে আটকে থাকার ছেলে ও নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন