টেকনোয় টোকাটুকি, সরব নজরদার শিক্ষিকা

স্কুল-কলেজে টোকাটুকির অভিযোগ প্রায়ই ওঠে। এ বার নজরদার কলেজ-শিক্ষকদের সামনেই অবাধ গণ-টোকাটুকির অভিযোগ উঠল টেকনো ইন্ডিয়ার মতো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৪:১২
Share:

টেকনো ইন্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: টেকনো ইন্ডিয়ার অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে।

স্কুল-কলেজে টোকাটুকির অভিযোগ প্রায়ই ওঠে। এ বার নজরদার কলেজ-শিক্ষকদের সামনেই অবাধ গণ-টোকাটুকির অভিযোগ উঠল টেকনো ইন্ডিয়ার মতো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে। এবং সেই অভিযোগটা এল টেকনো ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজেরই এক নজরদার-শিক্ষিকার কাছ থেকে।

Advertisement

সাধারণ স্কুল-কলেজের পরীক্ষায় রাজনৈতিক খুঁটির জোরে নকলবাজি চলে বলে অভিযোগ ওঠে হামেশাই। ওই শিক্ষিকার অভিযোগ, টেকনোর মতো বেসরকারি কলেজে টোকাটুকির বিষয়টিকে আমল না-দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষের তরফেই তাঁদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল!

বুধবার ওই কলেজে চূড়ান্ত বর্ষের ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়াদের সেমেস্টার পরীক্ষায় নজরদারির দায়িত্বে ছিলেন ওই শিক্ষিকা। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরও তিন শিক্ষক এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতিনিধি। তাঁদের উপস্থিতিতেই পরীক্ষার্থীরা যে-ভাবে নকল করেছেন এবং বাধা দিতে গিয়ে তাঁকে যে-পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছে, ফেসবুকে নিজের ওয়ালে তা বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরেছেন ওই শিক্ষিকা। তাঁর এই পোস্টের পরে অনেকেই টোকাটুকির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। আবার অনেকে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া পরিচয় দিয়ে প্রতিবাদও জানিয়েছেন।

Advertisement

এই নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের এমেরিটাস অধ্যাপিকা সুপ্রিয়া চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘টোকাটুকি চলছে। অথচ তা নিয়ে কর্তৃপক্ষ নিজস্ব লাভের কথা ভেবে নীরব! এটা খুবই দু্ঃখজনক ঘটনা।’’

টেকনো ইন্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ জানান, বিষয়টিকে তাঁরা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। ব্যবস্থাও নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে কথা বলেছেন অভিযোগকারিণী শিক্ষিকার সঙ্গেও। পরে যোগাযোগ করা হলে ওই নজরদার-শিক্ষিকা এই বিষয়ে আর কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

কিন্তু শিক্ষিকা-নজরদারের পোস্টের পরে টোকাটুকি নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। রাজ্যের বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত অনেকেই লিখেছেন, শুধুই টেকনো ইন্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয় নয়, টোকাটুকির ব্যাধি রাজ্যের অন্যান্য কলেজেও ছড়িয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনার এক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে শিক্ষকতার পরে উত্তরবঙ্গের কলেজে যোগ দিয়েছেন, এমন এক শিক্ষক পোস্টে জানান, তাঁর আগের কর্মক্ষেত্রেও টোকাটুকি দেখেছেন তিনি। তবে তা বন্ধ করতে শিক্ষকদের সাহায্যও করেছেন কলেজ-কর্তৃপক্ষ। টেকনোর শিক্ষিকার পোস্টের পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কলেজের এক অতিথি শিক্ষকের অভিযোগ, তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বিভিন্ন কলেজে টোকাটুকি চলে। টোকাটুকি আটকাতে ‘ওপেন বুক’ পরীক্ষা নেওয়া হয় না কেন, সেই প্রশ্নও তুলেছেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকা।

উত্তর কলকাতার একটি কলেজের অধ্যক্ষ জানান, টোকাটুকির প্রকোপ বাড়ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে পড়ুয়ারা ঝঞ্ঝাট বাধাতে পারে, এই আশঙ্কায় বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে চান না বহু নজরদার। নকল ধরা পড়লেও তাঁরা কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার পথে যেতে চান না। এই বিষয়ে মতামত জানতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়কে বারবার ফোন করা হয়েছিল, পাঠানো হয়েছিল মেসেজ-ও। সাড়া মেলেনি।

ওয়েবকুটা-র সাধারণ সম্পাদক শ্রুতিনাথ প্রহরাজের বক্তব্য, টেকনোর ওই শিক্ষিকা সাহসী। তাই সাহস করে সমস্যাটা সামনে এনেছেন। কিন্তু এটা শুধু একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা নয়। গণ-টোকাটুকি এ রাজ্যে মড়কের রূপ নিয়েছে। অধিকাংশ কলেজেই এটা ঘটছে। ‘‘অধ্যক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট নজরদারেরা সাহস করে ব্যবস্থা নিতে পারেন না। কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা নিলেই শাসক দলের কোপে পড়ে যাবেন,’’ বলেন শ্রুতিনাথবাবু।

এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘শাসক দলের ভয়ে কলেজের যে-অধ্যক্ষ টোকাটুকিকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন, তাঁকে আর ওই পদেই থাকতে হবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন