বিশ্বভারতী-ব্যবসায়ী সমিতি দু’পক্ষ থানায়, মেলা ঘিরে সংঘাত প্রবল

পুলিশে অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ দায়ের ঘিরে প্রবল সংঘাতে বিশ্বভারতী ও ব্যবসায়ী সমিতি।

Advertisement

বাসুদেব ঘোষ 

শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:৫৯
Share:

উপাচার্যের নেতৃত্বে মেলা তুলতে অভিযান চলছে। —নিজস্ব চিত্র

পুলিশে অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ দায়ের ঘিরে প্রবল সংঘাতে বিশ্বভারতী ও ব্যবসায়ী সমিতি।

Advertisement

শুক্রবার মেলা শেষের দিনই ব্যবসায়ী সমিতির কর্মকর্তারা বিশ্বভারতীকে অনুরোধ করেছিলেন মেলায় তেমন বিক্রিবাটা না হওয়ায় আরও দু’দিন সময় দিতে। বিশ্বভারতী সেই প্রস্তাব খারিজ করায় ব্যবসায়ী সমিতির দুই কর্মকর্তা উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর উপস্থিতিতেই যুগ্ম কর্মসচিব সঞ্জয় ঘোষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন ও তাঁকে হুমকি দেন বলে অভিযোগ। বিশ্বভারতীর কর্মসচিব আশা মুখোপাধ্যায় শান্তিনিকেতন থানায় সেই দিনই ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সুনীল সিংহ ও কোষাধ্যক্ষ সুব্রত ভকতের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। রবিবার দুপুরে মেলা তুলতে বহু দোকানের উপরে তাণ্ডব চালানো হয় বলে বিশ্বভারতীর বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তোলে ব্যবসায়ী সমিতি। ওই রাতেই উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী-সহ একাধিক আধিকারিকের বিরুদ্ধে মারধর, লুটপাট এমনকি যৌন হেনস্থার অভিযোগ দায়ের হয় শান্তিনিকেতন থানায়।

জেলা পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ বলেন, ‘‘সব অভিযোগেরই তদন্ত হচ্ছে।’’ বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের অবশ্য

Advertisement

দাবি, সমস্ত অভিযোগই মিথ্যা। এ ভাবে বাধা দিলে পৌষমেলা আয়োজন করাই সম্ভব হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।

শনিবারই দোকানপাট তুলতে মাঠে নামেন উপাচার্য-সহ মেলা কমিটির সদস্যরা। সেদিন ব্যবসায়ীদের একাংশের ক্ষোভের মুখে পড়েন উপাচার্য। তাঁর সামনে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দেন ব্যবসায়ীদের অনেকে। রবিবার দুপুরে ফের অভিযান হয়। একাধিক দোকানদারের কাছ থেকে বিশ্বভারতীর কর্মীরা বেশ কিছু জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করেন। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, তখনই উপাচার্যের উপস্থিতিতেই মেলা তুলতে রীতিমতো তাণ্ডব

চালান বিশ্বভারতীর কর্মীরা। সেখানেই এক মহিলাকে যৌন হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ।

লিখিত অভিযোগে ওই মহিলা জানিয়েছেন, রবিবার বিকেলে একটি কাপড়ের দোকান থেকে কিছু শীতবস্ত্র কিনে তিনি পৌষমেলার মাঠ থেকে বেরিয়ে আসছিলেন। তখনই একদল লোক তাঁর উপরে চড়াও হয়ে তাঁকে নিগ্রহ করে বলে অভিযোগ। তাঁর কথায়, ‘‘ওখানকার লোকজন মারফত জানতে পারি যে ওই সকল ১০-১২ জন ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, জনসংযোগ আধিকারিক অনির্বাণ সরকার, যুগ্ম কর্মসচিব সঞ্জয় ঘোষ-সহ আরও অনেকে। এরপর আমি পুরো বিষয়টি ব্যবসায়ী সমিতিকে জানাই ও রবিবার রাতে শান্তিনিকেতন থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ করি।’’ মানিক শেখ নামে এক ব্যবসায়ীও লুটপাট ও মারধরের অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর কথায়, ‘‘রবিবার মাঠ খালি করে দেওয়ার জন্য আমি মালপত্র প্যাক করছিলাম। হঠাৎই উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, কর্মসচিব আশা মুখোপাধ্যায় ও যুগ্ম কর্মসচিব সঞ্জয় ঘোষের নেতৃত্বে একদল লোক আমার দোকানের দুই বস্তা মাল জোরপূর্বক নিয়ে চলে যান। বাধা দিতে গেলে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ ও মারধর করা হয়।’’

এ বছর পৌষমেলা শুরুর আগে থেকেই ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের সংঘাতের আবহ তৈরি হয়েছিল। স্টলের ভাড়া বাড়ানো, স্টলের জন্য সিকিউরিটি মানি ধার্য করা, অনলাইনে স্টলের জায়গা বুক করার

মত সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে একাধিক স্মারকলিপি দিয়েছে, বিক্ষোভও দেখিয়েছে ব্যবসায়ী সমিতি। শুক্রবার ব্যবসায়ী সমিতির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগের পরে সেই দ্বন্দ্ব আরও তীব্র হয়। রবিবার রাতের ঘটনার পরে তা চরমে উঠেছে বলেই মত সংশ্লিষ্ট সব মহলের। ব্যবসায়ী

সমিতির সম্পাদক সুনীল সিংহ বলেন, ‘‘রবিবার মেলার মাঠে এক মহিলাকে যৌন হেনস্থার মতো অভিযোগ শুনেছি। বেশ কিছু ব্যবসায়ীর মালপত্র লুট করা হয়েছে বিশ্বভারতীর তরফ থেকে। আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি করছি নিরপেক্ষ তদন্ত করে এই ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের কঠোর শাস্তি হোক। না হলে বোলপুর ব্যবসায়ী সমিতির তরফ থেকে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামব।’’

বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, তাঁদের বিরুদ্ধে সব অভিযোগই মিথ্যা। বিশ্বভারতীর যুগ্ম কর্ম সচিব সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা বিশ্বভারতীর তরফ থেকে নিয়ম-নীতি মেনে প্রতি বছর পৌষমেলা করতে চাই। কিন্তু কিছু অসাধু দালাল এই বিষয়টাকে নিয়ে জল ঘোলা করছে। মেলা শুরু থেকে তারা বিভিন্নভাবে বাধা দিতে শুরু করেছিল।’’ তিনি দাবি করেন, ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে বসে ঠিক হয়েছিল এ বারের পৌষ মেলা চারদিনের হবে ও মেলা

তোলার জন্য আরও দু’দিন সময় দেওয়া হবে। কিন্তু মেলার চার দিন শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও ব্যবসায়ীদের একাংশ মেলা চালিয়ে যেতে চাইছিলেন বলে দাবি সঞ্জয়বাবুর। তাঁর কথায়, ‘‘করজোড়ে নিবেদন করেছিলাম মেলা মাঠ খালি করে দেওয়ার জন্য সকলের কাছে। কিন্তু তাঁরা প্রথমে শোনেননি। মেলা চালিয়ে যান। শুধু তাই নয় উপাচার্যের নামে ও আমাদের কর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে নানাভাবে মিথ্যা মামলায় জড়ানোর অপচেষ্টা করা হচ্ছে। এ ধরনের বাধার সম্মুখীন হলে আগামী দিনে বিশ্বভারতী মেলা করতে পারবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন