ভক্তবালার রেশ মিটতে না মিটতেই ফের আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠল নদিয়ার এক বিএড কলেজের বিরুদ্ধে।
গত বছর টাকার বিনিময়ে অতিরিক্ত ছাত্র ভর্তি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল চাপড়ার ভক্তবালা বিএড কলেজের বিরুদ্ধে। এ বার নিয়ম বহির্ভূত ভাবে পড়ুয়াদের কাছে বাড়তি টাকা চাওয়ার অভিযোগ উঠল কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত শান্তিপুরের বালিয়াডাঙা শরিফ বিএড কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। রানাঘাটের মহকুমাশাসক রাজর্ষি মিত্র বলেন, ‘‘ওই পড়ুযারা আমার কাছে এসেও বিষয়টি জানিয়েছিলেন। তাঁদের পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে অভিযোগ জানাতে বলেছি।’’
বৃহস্পতিবার কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে গোটা বিষয়টি জানিয়েছেন ওই বিএড কলেজের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের পড়ুয়ারা। শুক্রবার শান্তিপুর থানাতে তাঁরা একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। ঘটনার তদন্তও শুরু হয়েছে বলে জানান ওসি পার্থপ্রতিম রায়। পড়ুয়ারা জানান, ২৮ জন পড়ুয়ার স্বাক্ষর-সহ ওই অভিযোগপত্র মুখ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী ও এনসিটিই-র কাছেও তাঁরা পাঠাবেন।
পড়ুয়াদের অভিযোগ, রাজ্য সরকারের উচ্চশিক্ষা দফতর নির্ধারিত ৫০ হাজার টাকা তাঁরা জমা দিয়েছেন আগেই। তারপরেও দফায় দফায় তাঁদের কাছ থেকে নানা খাতে আরও প্রায় ৪৫ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি ফর্ম ফিল আপের অজুহাতে আরও ২১ হাজার ৫০০ টাকা চেয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।
রাজ্য শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, এখন বিএড পরীক্ষা হয় ১৪০০ নম্বরের (থিওরি ৭০০ ও প্র্যাকটিকাল ৭০০)। এর মধ্যে ১২০ নম্বর থাকে সংশ্লিষ্ট কলেজের নিয়ন্ত্রণে। আর ৫৮০ নম্বরের পরীক্ষা হয় এক্সটার্নাল কোনও শিক্ষকের উপস্থিতিতে। ফলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে মোট ৭০০ নম্বর কলেজেরই হাতে থাকে। আর বিপত্তিটা সেখানেই। কী রকম?
পড়ুয়াদের অভিযোগ, ওই ৭০০ নম্বরের ‘জুজু’ দেখিয়ে ফি বছর অতিরিক্ত টাকা আদায় করেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। শরিফ বিএড কলেজের পড়ুয়াদের দাবি, কলেজ কর্তৃপক্ষ কথায় কথায় ওই ৭০০ নম্বরের প্রসঙ্গ তোলেন। ঠারেঠোরে বুঝিয়েও দেওয়া হয়, তাঁদের কথামতো অতিরিক্ত টাকা না দেওয়া হলে পরীক্ষায় নম্বর কমে যাবে। পড়ুয়াদের একাংশের দাবি, কলেজ কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত টাকা চাওয়ার প্রমাণও (অডিও ও ভিডিও রেকর্ডিং) তাঁদের কাছে আছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বালিয়াডাঙার ওই বিএড কলেজের পড়ুয়ারা গত বুধবার প্রথম এই বিষয়টি কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের নজরে আনেন। এরপর বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই পড়ুয়ারা উপাচার্যের ঘরের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে ওই পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের সবরকম সহযোগিতার আশ্বাস দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রতনলাল হাংলু।
কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রসেনজিৎ দেব বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের কাছে গোটা বিষয়টি জানার পরেই আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ করছি। পডুয়ারাও যাতে কোনও সমস্যায় না পড়েন সে দিকে নজর রাখা হচ্ছে।’’ বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই কলেজের বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য গৌতম পালের নেতৃত্বে চার জনের একটি কমিটি তৈরি করা হয়েছে। কলেজ যাতে কোনও ভাবে এক্সটার্নাল শিক্ষককে প্রভাবিত করতে না পারে সে দিকেও কড়া নজর রাখবে বিশ্ববিদ্যালয়। ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা আর না ঘটে তার জন্যও বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পড়ুয়াদের সচেতন করা হবে। কিন্তু এমনটা ঘটছে কেন?
নয়ের দ শকে বিএড পাশ করেছেন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক। তাঁর ব্যাখ্যা, সেই সময় বিএড পরীক্ষা হত এক হাজার নম্বরের (থিওরি ৭০০ ও প্র্যাকটিক্যাল ৩০০)। তার মধ্যে একটি ইউনিটের মাত্র ২৫ নম্বর থাকত কলেজের হাতে। এখন সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০০। আর এই নম্বরকেই হাতিয়ার করে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে বেসরকারি বিএড কলেজের একাংশ।
বালিয়াডাঙা বিএড কলেজের বেশ কয়েকজন পড়ুয়ার কথায়, ‘‘আমাদের কলেজের মালিক টাকার জন্য সবকিছুই করতে পারেন। আমাদের হাজিরার খাতাও তিনি ছিঁড়ে ফেলেছেন। তাছাড়া টাকা চাওয়ার এই বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে ফল ভাল হবে না বলেও আমাদের শাসানো হচ্ছে। সামনে আমাদের প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা। আমরা সত্যিই খুব উদ্বিগ্ন।’’
অভিযুক্ত ওই কলেজের মালিক শরিফউদ্দিন মণ্ডলকে এ দিন একাধিক বার ফোন ও এসএমএস করেও কোনও জবাব মেলেনি।