Mamata Banerjee

‘ধর্মান্ধ’দের সামনে প্রতিবাদ করে ঠিক করেছেন, ভিক্টোরিয়ায় ‘জয় শ্রীরাম’-কাণ্ডে সাফ কথা মমতার

মমতা বললেন, ‘‘‘আমরা কি বাড়িতে কাউকে নিমন্ত্রণ করে ডেকে এনে চড় মারতে পারি? আমাকে ওখানে ডেকে অপমান করা হয়েছে। টিজ করেছে ওরা।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরশুড়া শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২১ ১৭:০৬
Share:

পুরশুড়ার সভায় বক্তব্য রাখছেন মমতা। ছবি: পিটিআই

অপমান মানতে পারেননি বলেই প্রতিবাদে মঞ্চ ছেড়েছিলেন। ভিক্টোরিয়ায় যে কথা বলে বক্তৃতা না দিয়ে নেমে গিয়েছিলেন, সে কথাই আবার বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হুগলির পুরশুড়ায় দলীয় জনসভায়।

Advertisement

শনিবার নেতাজি জন্মজয়ন্তীতে প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন মমতা। তিনি বক্তব্য রাখতে যাওয়ার সময় দর্শকাসন থেকে আচমকাই ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি তোলা হয়। প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তৃতা না দিয়েই মঞ্চ ছাড়েন মমতা। সেই ঘটনার পরে সোমবারই ছিল তাঁর প্রথম প্রকাশ্য সভা। সেখানেই মমতা বললেন, ‘‘‘আমরা কি বাড়িতে কাউকে নিমন্ত্রণ করে ডেকে এনে চড় মারতে পারি?’’ বললেন, ‘‘আমাকে ওখানে ডেকে অপমান করা হয়েছে। কিছু ধর্মান্ধ টিজ (টিটকারি) করেছে। নেতাজির জন্মজয়ন্তী পালনের সংস্কৃতি এটা নয়। আসলে নেতাজিকে অপমান করা হয়েছে। বাংলার অপমান, নেতাজির অপমান আমি কিছুতেই মেনে নেব না। সেই জন্যই সে দিন কিছু বলতে আমি অস্বীকার করেছিলাম।’’

ভিক্টোরিয়ার ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক চলছে। শুধু তৃণমূল নয়, কংগ্রেস আর সিপিএম-ও সে দিনের কাণ্ডকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর অপমান বলে মনে করছে। বিধানসভায় এর বিরুদ্ধে নিন্দাপ্রস্তাব আনতে চলেছে শাসকদল। অন্য দিকে বিজেপি মমতার সে দিনের ভূমিকাকে দেখছে অসৌজন্য হিসেবে ।

Advertisement

পুরশুড়ার সভায় শুধু বিজেপি-কে তোপ দাগা নয়, তৃণমূল ছেড়ে যাওয়া বা ছেড়ে যেতে চাওয়াদের উদ্দেশেও বার্তা দিলেন তৃণমূল নেত্রী। মমতা বলেন, ‘‘যাঁরা বিজেপি-তে যেতে চাইছেন, তাড়াতাড়ি চলে যান। পায়ে গিয়ে পড়ুন! ট্রেন ছেড়ে দেবে না হলে!’’ যাঁরা ইতিমধ্যেই দল পাল্টে ফেলেছেন, তাঁদেরও কটাক্ষ করে তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘‘ওঁরা কালো টাকা সাদা করতে বিজেপি-তে গিয়েছেন। বিজেপি যেন একটা ওয়াশিং মেশিন। গেলেই সব কালো সাদা হয়ে যায়। বেপথে টাকা করে এখন বিজেপিকে ধরে মুক্তি পেতে চাইছেন ওঁরা। যাঁরা দল বদলেছেন, তাঁরা বুঝেছেন, তৃণমূল তাঁদের টিকিট দিত না। এখন অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে চাইছেন।’’

প্রসঙ্গত, মমতার সভায় আসেননি হুগলির উত্তরপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল। তাঁকে নিয়ে জল্পনার মধ্যেই প্রবীর জানিয়েছেন, মঙ্গলবার তিনি সাংবাদিক বৈঠক করবেন। পক্ষান্তরে, মমতার সভায় দেখা গিয়েছে সিঙ্গুরের তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকে। যাঁর পুত্র বিজেপি-তে যাচ্ছেন বলে প্রকাশ্যেই জানিয়েছেন। ইন্টারনেটের সমস্যার কারণে সোমবারের সভা শুরু হতে কিছু দেরি হয়। দুপুর ১টার কিছু পরে বক্তৃতা শুরু করেন মমতা। তিনি প্রথমেই বলেন, ‘‘এই সভা আমি বুথকর্মীদের উৎসর্গ করছি। কেউ গাছ থেকে পড়ে নেতা হয় না। একেবারে নিচু স্তর থেকে লড়াই করেই নেতা হতে হয়।’’

সোমবারের সভায় মহিলাদের উপস্থিতি ছিল আলাদা করে চোখে পড়ার মতো। একেবারে সামনের সারিতেই ছিলেন মহিলারা। উচ্ছ্বাসও ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। বক্তব্যের মধ্যেও বারবার মহিলাদের সামনের সারিতে থাকার কথা তুলে ধরেন মমতা। সম্প্রতি অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ বা দেবলীনা দত্তকে বিজেপি-র একাংশের রোষের মুখে পড়তে হয়েছে। সেই প্রসঙ্গে আগেই মুখ খুলেছিলেন মমতা। সোমবারও তিনি সেই ঘটনার উল্লেখ করে মঞ্চের সামনে বসা মহিলাদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘হাতা-খুন্তি নিয়ে আপনারা তৈরি থাকুন। বাইকে করে বিজেপি-র গুণ্ডারা এলে রান্না করে দেবেন। আমি চাই আমার মা-বোনেরা এই লড়াইয়ে সামনে থাকুন।’’

সোমবারের সভা থেকে একাধিক গুরুত্বপূ্র্ণ ঘোষণা করেন মমতা। তিনি জানান, আপাতত জুন মাস পর্যন্ত ঘোষণা করা হলেও, পরবর্তী কালেও বিনামূল্যে রেশন দেওয়ার প্রকল্প চালিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে তাঁর সরকার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আত্মবিশ্বাসী মন্তব্য, ‘‘আমরাই ক্ষমতায় আসব, আর জুনের পরেও আমারা এই রেশনের প্রকল্প চালিয়ে নিয়ে যাব।’’ পাশাপাশি, সোমবার অস্থায়ী স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেন মমতা। যান্ত্রিক কারণে যদি কার্ড দেওয়া সম্ভব না হয়, তা হলে অস্থায়ী স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন