অবস্থান: আলাদা রাজ্যের দাবিতে অনশনে বসেছেন গোর্খাল্যান্ড আন্দোলন সমন্বয় কমিটির সদস্যেরা। শুক্রবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: এএফপি।
দু’টি অনশন-ধর্না মঞ্চের মধ্যে ব্যবধান মোটে পঞ্চাশ মিটারের। কিন্তু তাতেই প্রকাশ্যে এসে পড়ল গোর্খা নেতৃত্বের ভিতরকার দ্বন্দ্ব। শুক্রবার দিল্লির যন্তরমন্তরে এমন দু’টি অনশন-ধর্না দেখার পরে পাহাড়ের নেতাদের মধ্যে আশঙ্কা, দুই শিবিরের বিবাদ প্রকাশ্যে আসার পরে না মনোবল হারান সাধারণ কর্মীরা!
আন্দোলন শুরুর কিছু দিন পরেই পাহাড়ের গুরুত্বপূর্ণ দলগুলিকে নিয়ে একটি সমন্বয় কমিটি গড়া হয়। সেই সমন্বয় কমিটিতে যোগ দেয় একদা বিমল গুরুঙ্গের বিরোধী জিএনএলএফ এবং হরকাবাহাদুর ছেত্রীর দল জন আন্দোলন পার্টিও। সমন্বয় কমিটি একাধিকবার আলোচনায় বসেছে। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে দেখা গিয়েছে, সমন্বয় কমিটির মধ্যে মতভেদ স্পষ্ট। যদিও তাকে এত দিন প্রকাশ্যে আসতে দেননি পাহাড়ের নেতারা।
কিন্তু শুক্রবার তা সামনে চলে এল। এবং যার জন্য এক পক্ষ দোষারোপ করল খোদ বিমল গুরুঙ্গকে।
দিল্লির যন্তরমন্তরে গত ৪৮ দিন ধরে রিলে অনশন চালিয়ে যাচ্ছে গোর্খা সংযুক্ত সংঘর্ষ সমিতি। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা থেকে বহিষ্কৃত ওই নেতারা এ দিনও অনশনে বসেন। এ দিকে পূর্ব ঘোষণা মতো এ দিন ওই একই জায়াগায় অনশনে বসতে আসেন গোর্খাল্যান্ড আন্দোলন সমন্বয় কমিটির (জিএমসিসি) নেতারা। কিন্তু তাঁদের সঙ্গে এক ছাতার তলায় বসতে অস্বীকার করেন সংঘর্ষ সমিতির নেতারা। তাঁরা জানিয়ে দেন, গুরুঙ্গের নির্দেশে চলা জিএমসিসি-র নেতৃত্ব তাঁরা মানতে রাজি নন। তাঁরা নিজেদের মতো আন্দোলন চালাবেন।
আরও পড়ুন: গরিব-স্বার্থেই হবে সংস্কার, দাবি অরুণ জেটলির
ওই গোষ্ঠীর অনড় মনোভাব দেখে বাধ্য হয়েই অনশন কর্মসূচি থেকে পিছিয়ে আসেন জিএমসিসি নেতৃত্ব। ঠিক হয়, ধর্নায় বসবেন শুধু মোর্চা সদস্যরা। আর সেটা সংঘর্ষ সমিতির অনশন মঞ্চ থেকে সামান্য দূরে। প্রকাশ্যে, বিশেষ করে দিল্লির মঞ্চে এ ভাবে গোর্খারা দু’ভাগ হয়ে যাওয়ায় রীতিমতো অস্বস্তিতে জিএমসিসি। সমন্বয় কমিটির সহ-সভাপতি কল্যাণ দেওয়ান পরে বলেন, ‘‘আমাদের উদ্দেশ্য এক। কোথাও ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে কি না, দেখা হচ্ছে।’’
এই দ্বন্দ্বের সূত্রপাত কিন্তু আগেই হয়েছে। গত ১ অগস্ট সমন্বয় কমিটির বৈঠক হয় দিল্লিতে। সেখানে বন্ধ চালু রাখার প্রশ্নে কার্যত হাতাহাতির পরিস্থিতি তৈরি হয়। বৈঠকের মধ্যে প্রস্তাব ওঠে, বন্ধ তুলে নেওয়া হোক। এক সময়ে গুরুঙ্গকেও ফোনে ধরা হয়। তিনি জানিয়ে দেন, এখনই বন্ধ তোলা যাবে না। এর পরেই বৈঠকে প্রশ্ন ওঠে, কমিটিতে যেখানে প্রায় তিরিশটি দল রয়েছে, সেখানে কেন গুরুঙ্গ সব সময় শেষ কথা বলবেন? শুরু হয় উত্তপ্ত কথা কাটাকাটি। তার পরেই কল্যাণ দেওয়ানের দিকে তেড়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে অন্য কয়েক জন নেতার বিরুদ্ধে। তখন তাঁকে কোনও রকমে বৈঠক থেকে বার করে নিয়ে যান অন্য নেতারা।
এ দিন অন্তর্দ্বন্দ্বের বিষয়টি সামনে চলে আসায় এবং গুরুঙ্গের দিকে আঙুল ওঠায় মোর্চার উপরে চাপ আরও বেড়েছে। এর সঙ্গে রয়েছে রাজ্য ও কেন্দ্রের তরফে অশান্তি ছেড়ে আলোচনায় বসার চাপ। পরিস্থিতি সামলাতে এ বার যুব মোর্চাকে সামনে ঠেলে দিয়েছেন গুরুঙ্গরা। পাহাড় নিয়ে দ্রুত বৈঠক ডাকার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে এ দিন চিঠি দিয়েছেন যুব মোর্চার নেতা অম্রুত ইয়নজন। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, পাহাড়ে তাঁদের যুব সংগঠনের অনশন ১৩ দিনে পড়েছে। অনশনকারীদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। ইয়নজনের বক্তব্য, ‘‘এই অবস্থায় দ্রুত আলোচনারই আর্জি জানিয়েছি প্রধানমন্ত্রীকে।’’
চাপের মধ্যে যুব মোর্চার এই বার্তায় জট কাটার আশাই দেখছেন পাহাড়ের মানুষ।