উধাও চিকিৎসকেরা!
নদিয়ার মীরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে অভিযোগটা আসছিল নাগাড়ে। শেষতক, চিকিৎসকদের এমন ‘উবে যাওয়া’ রোগ সারাতে দাওয়াই বাতলেছিলেন কালীগঞ্জের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক তিমিরবরণ ভদ্র।
রীতিমতো সই-সাবুদ করে একটি ‘অর্ডার’ তিনি পাঠিয়ে দেন জেলার মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক, বিডিও-সহ স্থানীয় থানার ওসিকেও! সেখানে কোন চিকিৎসক, কোথায়, কোন দিন ‘ডিউটি’ করবেন স্পষ্ট করে লেখা রয়েছে। কিন্তু বিপত্তিটা বেধেছে ওসিকে করা অনুরোধে। সেখানে বলা হয়েছে, কোনও চিকিৎসক তাঁর নির্ধারিত দিনে অনুপস্থিত থাকলে তাঁকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসতে হবে। গত ৬ ফেব্রুয়ারির এই ‘অর্ডার’ ঘিরেই বিতর্ক শুরু হয়েছে।
ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (আইএমএ) নদিয়া জেলা সভাপতি রমেন্দ্রনাথ সরকার বলছেন, ‘‘চিকিৎসক অনুপস্থিত থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হোক। পুলিশ তাঁকে তুলে আনবে কেন? চিকিৎসকেরা কি
দুষ্কৃতী নাকি?’’
বিষয়টি জানতে পেরে ওই ‘অর্ডার’ সংশোধন করার নির্দেশ দিয়েছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায়। তিনি বলেন, ‘‘কোনও ভাবেই এমন অর্ডার করা যায় না। কেন বিএমওএইচ এমনটা করলেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
৬ ফেব্রুয়ারির সেই অর্ডার।
মীরা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দু’জন চিকিৎসকই অসুস্থ। অভিযোগ, অন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রের যে চিকিৎসকদের সেখানে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার কথা, তাঁদের অনেকেই তা
করছিলেন না। ফোনও বন্ধ করে রাখছিলেন। ফলে কড়া পদক্ষেপ করতে গিয়েই বিএমওএইচ বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন।
কালীগঞ্জের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক তিমিরবরণ ভদ্র অবশ্য বলছেন, ‘‘একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। তা মিটেও গিয়েছে। অবিলম্বে ওই অর্ডার সংশোধন করে দেওয়া হবে।’’
পাশের ব্লক নাকাশিপাড়াতেও ক’দিন ধরে ‘নিখোঁজ’ রুদ্রনারায়ণ সরকার নামে এক চিকিৎসক! বাড়িতে ফোন করলে বলা হচ্ছে, ‘তিনি তো হাসপাতালে।’ আর ধর্মদা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গেলে তাঁর সহকর্মীরা জানাচ্ছেন, তিনি বাড়ি গিয়েছেন।
চার দিনের এমন টানাপড়েনের পরে শুক্রবার নদিয়ার নাকাশিপাড়া ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সমীর আচার্য ওই চিকিৎসকের নামে স্থানীয় থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেছেন। ক্ষুব্ধ সমীরবাবু বলছেন, ‘‘কাঁহাতক আর এ সব সহ্য করা যায়! কাউকে না বলে তিনি নাকি ছুটিতে চলে গিয়েছেন। এ দিকে ফোনও বন্ধ। কিছু একটা হয়ে গেলে কে দায় নেবে, বলুন তো?’’
আনন্দবাজারের পক্ষ থেকে রুদ্রনারায়ণবাবুকে একাধিক বার ফোন করা হয়। কিন্তু তাঁর ফোন বন্ধ ছিল। জবাব মেলেনি এসএমএসেরও। যদিও রবিবার রাতে বিএমওএইচ সমীর আচার্য বলেন, ‘‘ওই চিকিৎসক জানিয়েছেন, তিনি আরও এক সপ্তাহ আসতে পারবেন না। বুঝুন কাণ্ড!’’