প্রসাদ খুইয়ে পদ রাখাই ভার শ্যামার

দিদির দেওয়া মন্ত্রিত্ব পাছে খোয়া যায়! তাই পিতৃদত্ত ‘প্রসাদ’ কাটা পড়ছে দেখেও হজম করে নিয়েছিলেন। তবু সম্ভবত শেষরক্ষা হচ্ছে না। ‘পদ’ভারই এখন মন্ত্রীমশাইয়ের শনি! রাজ্যপালের নির্দেশ, শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে অন্য নাম বলা ও সই করার দায়ে রাজ্যের বস্ত্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিক নবান্ন। মন্ত্রীমশাইয়ের পৈতৃক নাম শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। বাঁকুড়া-বিষ্ণুপুরের তৃণমূল বিধায়ককে এই নামেই চেনে গাঁ-গঞ্জ। অথচ রাজভবনে নতুন সরকারের মন্ত্রী হিসাবে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে সেই তিনিই হয়ে গিয়েছিলেন ‘শ্যামাপদ’!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:২২
Share:

শ্যামাবাবু। ফাইল চিত্র

দিদির দেওয়া মন্ত্রিত্ব পাছে খোয়া যায়! তাই পিতৃদত্ত ‘প্রসাদ’ কাটা পড়ছে দেখেও হজম করে নিয়েছিলেন। তবু সম্ভবত শেষরক্ষা হচ্ছে না। ‘পদ’ভারই এখন মন্ত্রীমশাইয়ের শনি!

Advertisement

রাজ্যপালের নির্দেশ, শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে অন্য নাম বলা ও সই করার দায়ে রাজ্যের বস্ত্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিক নবান্ন।

মন্ত্রীমশাইয়ের পৈতৃক নাম শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। বাঁকুড়া-বিষ্ণুপুরের তৃণমূল বিধায়ককে এই নামেই চেনে গাঁ-গঞ্জ। অথচ রাজভবনে নতুন সরকারের মন্ত্রী হিসাবে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে সেই তিনিই হয়ে গিয়েছিলেন ‘শ্যামাপদ’! ‘প্রসাদ’ কেটে ‘পদ’ যোগ করে যখন শ্যামাবাবুর নাম ডাকা হচ্ছে, তখন সেখানে হাজির ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শ্যামা নিজেও ধোপদুরস্ত হয়ে শপথ নেওয়ার জন্য উঠে দাঁড়িয়েছেন। নাম ডাকা হয়ে গিয়েছে, আপত্তি তুললে যদি সব ভেস্তে যায়? ঝুঁকি না নিয়ে শ্যামাপ্রসাদবাবু সকলের সামনে ‘শ্যামাপদ’ নামেই শপথ নিলেন, রাজভবনের খাতায় ওই নামে সইও করে দিলেন।

Advertisement

সরকারি ফাইলে এই কাণ্ড-কারখানার কথা জেনে রীতিমতো অবাক রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। নবান্নের খবর, মন্ত্রীমশাই নিজেই এক সময় সরকারের কাছে নামের ভুলটি সংশোধন করার জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন। নিজের আসল নামের পক্ষে প্রমাণও পেশ করেছিলেন। সেই মোতাবেক ‘পদ’ কেটে ‘প্রসাদ’ করার আর্জি নিয়ে গত বছরের অগস্ট মাসে রাজভবনে ফাইল গিয়েছিল। সে বার কেশরীনাথ কিছু প্রশ্ন তুলে ফাইলটি ফেরত পাঠিয়ে দেন। পরে রাজ্য সরকার ফের সেই ফাইলটি রাজভবনে পাঠায়। এ বার সেটা আবারও ফেরত দিয়ে সরকারকেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিলেন রাজ্যপাল।

রাজ্যপাল বলেছেন, “সংবিধান ও ঈশ্বরের নামে যখন মন্ত্রগুপ্তির শপথ নেন এক জন মন্ত্রী, সেখানে তিনি নিজের অন্য নাম বলেন কী করে?” তাঁর প্রশ্ন, যাঁর নাম শ্যামাপ্রসাদ, তিনি মন্ত্রিসভার রেজিস্ট্রারে ‘শ্যামাপদ’ বলে স্বাক্ষর করলেনই বা কেন?

নবান্নের খবর, রাজভবনের এই কড়া মনোভাব জানার পরে প্রশাসনের কর্তারা এখন বস্ত্রমন্ত্রীকে ঝেড়ে ফেলতেই তৎপর। সরকারের এক মুখপাত্রের কথায়, সারদা মামলায় আগেই বস্ত্রমন্ত্রীর নাম জড়িয়েছে। তাঁকে ডেকে পাঠিয়ে জেরা করেছে সিবিআই এবং ইডি। বেশ কয়েক মাস তাঁকে মন্ত্রিসভার বৈঠকেও আসতে বারণ করা হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীও তাঁর ব্যাপারে আগের মতো আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এই অবস্থায় রাজ্যপালের কড়া মনোভাব জানার পরেও বস্ত্রমন্ত্রীর ‘ভুল নামে’র বোঝা আর টানতে রাজি নয় সরকার। কারণ, শ্যামাবাবুর মন্ত্রিত্বের বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে রাজভবন।

সাড়ে তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে মন্ত্রী থাকার পর এই নাম-বিভ্রাট থেকে মুক্তি পাওয়া কত দুষ্কর, তা জানেন শ্যামাও। তাঁর নাম পরিবর্তনের আর্জি যে ফেরত পাঠিয়েছে রাজভবন, তাও বিলক্ষণ জানেন মন্ত্রী। সোমবার এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বস্ত্রমন্ত্রী বলেন, “এ বিষয়ে আইনমন্ত্রীকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যপাল। গত সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রী আমাকে ডেকে এ কথা জানান। সরকার এখন আইনি পরামর্শ নিচ্ছে। অ্যাডভোকেট জেনারেল বা লিগাল রিমেমব্র্যান্সারের মতামত এলে তা রাজ্যপালকে জানিয়ে দেওয়া হবে।” আপনি কি পদত্যাগ করবেন? তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, “সেই প্রশ্ন এখনই কেন উঠছে?”

স্বরাষ্ট্র দফতরের এক শীর্ষকর্তা অবশ্য জানাচ্ছেন, রাজ্যপালের ফেরত পাঠানো ফাইলটি বস্ত্রমন্ত্রীর কাছেই ফেরত পাঠানো হবে। রাজ্যপালের অভিমত দেখে তিনি নিজেই নিজের করণীয় স্থির করবেন!

মুখরক্ষার্থে কী করতে পারেন শ্যামাবাবু?

আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ক্ষেত্রে পদত্যাগ করেই লজ্জা নিবারণের চেষ্টা করতে পারেন মন্ত্রীমশাই। কারণ, তাঁর মন্ত্রিত্বের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই নিয়ে জনস্বার্থ মামলা হলে বিপদে পড়বে সরকার।

আইনজ্ঞরা কী বলছেন? বম্বে হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “এমন ঘটনা অতীতে কখনও শুনিনি। অনেক সময় পদবীর ভুল হয়, কিন্তু নামের বিভ্রাট তো হওয়া উচিত নয়। তবে মন্ত্রিমশাই ভুল স্বীকার করে নিলে তা সংশোধন করা সম্ভব।” বিধানসভার প্রাক্তন অধ্যক্ষ হাসিম আব্দুল হালিম বলেন, “যা পরিস্থিতি তাতে শ্যামাপ্রসাদ বা পদ যেই হোন না কেন, তাঁকে পদত্যাগ করতে হবে। এ ভাবে অন্যের নামে মন্ত্রিত্বের শপথ নেওয়া যায় না।” এটা কি এক প্রকার জালিয়াতি? হালিম সাহেবের মতে, “জালিয়াতি বলছি না, কিন্তু ভুল তথ্য দেওয়ার ঘটনা তো বটেই।” আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ অবশ্য এই ঘটনাকে জালিয়াতি বলেই আখ্যা দিচ্ছেন। তাঁর কথায়, “সংবিধানে স্পষ্ট বলা রয়েছে, এক জন মন্ত্রী তাঁর নিজের নামেই মন্ত্রগুপ্তির শপথ নেবেন। কেউ যদি অন্যের নামে শপথ নেন, তা হলে সেটা জালিয়াতিই। রাজ্যপালের উচিত, তাঁকে বরখাস্ত করা।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন