সমর্থন থাকলেও গ্রিন বাজি তৈরির পদ্ধতি নিয়ে ধন্দ

এক বাজি নির্মাতা সংস্থার কর্ণধার জানান, বেরিয়াম মূলত রংমশালেই ব্যবহার করা হয়। আগে এর জায়গায় কাঠকয়লার গুঁড়ো ব্যবহার করা হত। কাঠকয়লার গুঁড়োয় বড় মাপের দানা থাকায় মশলা ঠাসার পরেও ভিতরে বুদবুদ থেকে যায়।

Advertisement

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:৪৯
Share:

—প্রতীকী ছবি

রংমশালের ‘বিপদ’ কমাতে কাঠকয়লার বদলে আনা হয়েছিল ‘বেরিয়াম সল্ট’। কিন্তু সেই বেরিয়াম যে নিঃশব্দে মানুষের শরীরে ‘বিপদ’ ঘটিয়ে চলছিল, সে কথা ভাবেননি বাজি নির্মাতারা। কিন্তু গত ২৩ অক্টোবর বাজি নিয়ে নির্দেশিকা জারি করতে গিয়ে সে কথাই তুলে ধরেছে সুপ্রিম কোর্ট। এর পরেই বাজির মশলায় ‘বেরিয়াম সল্ট’-এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

Advertisement

এক বাজি নির্মাতা সংস্থার কর্ণধার জানান, বেরিয়াম মূলত রংমশালেই ব্যবহার করা হয়। আগে এর জায়গায় কাঠকয়লার গুঁড়ো ব্যবহার করা হত। কাঠকয়লার গুঁড়োয় বড় মাপের দানা থাকায় মশলা ঠাসার পরেও ভিতরে বুদবুদ থেকে যায়। তার ফলে রংমশাল পোড়ানোর সময়ে বিস্ফোরণের আশঙ্কা থাকে। তবে হাল্কা মিহি বেরিয়ামে সেই আশঙ্কা থাকে না। যদিও বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্ট উল্লেখ করে শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, বেরিয়াম পোড়ার ধোঁয়ার সামনে সামান্য সময় থাকলেও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। আর দীর্ঘ ক্ষণ থাকলে তো অন্যান্য সমস্যাও দেখা দেবেই। আমজনতার একাংশের অভিজ্ঞতা, এখনকার রংমশালে উজ্জ্বল আলোর পাশাপাশি প্রচুর ধোঁয়াও তৈরি হয়। তা থেকে অনেকের শ্বাসকষ্টও হচ্ছিল।

বাজি সংক্রান্ত নির্দেশিকা দিতে গিয়েই শীর্ষ আদালত ‘পরিবেশবান্ধব’ বা ‘গ্রিন’ বাজির কথা বলেছে। যদিও বাজি ব্যবসায়ীরা বলছেন, পরিবেশবান্ধব বাজি তৈরি করা কার্যত অসম্ভব। ‘পশ্চিমবঙ্গ বাজি শিল্প উন্নয়ন সমিতির’ সভাপতি সঞ্জয় দত্তের মতে, ‘‘পরিবেশবান্ধব বাজি তৈরি হলে তো ভালই। বাস্তবে সেটা কতটা সম্ভব তা নিয়ে কিন্তু সন্দেহ রয়েছে।’’ এ দিকে পরিবেশবিদেরা বলছেন, বাজি পুড়লে ধোঁয়া বেরোবেই। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট যে ‘পরিবেশবান্ধব’ বাজির কথা বলেছে তাতে বেরিয়ামের মতো মারাত্মক ক্ষতিকারক রাসায়নিক ব্যবহার করা হবে না।

Advertisement

বাজি নির্মাতাদের অনেকেরই পাল্টা যুক্তি, কাঠকয়লা চট করে জলীয় বাষ্প শুষে নেতিয়ে যেতে পারে। ফলে সেই বাজি নষ্ট হয়ে যাবে। তাই বেরিয়ামের ব্যবহার বন্ধ করা হলে বিস্ফোরণের বিপদ যেমন থাকছে, তেমনই ব্যবসারও ক্ষতি হবে বলে যাচ্ছেন বাজি নির্মাতারা। এই শহরের এক বাজি নির্মাতার কথায়, ‘‘আমি ডিসেম্বর থেকে বাজি তৈরি করি। গ্রীষ্মের মধ্যেই তা তৈরি শেষ হয়। কাঠকয়লার বর্ষায় সেই বাজি নষ্ট হলে প্রচুর টাকার ক্ষতি হবে।’’ তবে বেরিয়ামের পাশাপাশি পটাশিয়াম সালফেট বা সোরার ব্যবহার নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। নির্মাতাদের অনেকেই বলছেন, মূলত নিষিদ্ধ ‘জেনারেটর’ তুবড়ির ক্ষেত্রেই সোরার প্রয়োজন বেশি। এ দিকে পটাশিয়ামও অত্যন্ত বিপজ্জনক রাসায়নিক। পটাশিয়ামে কয়েক ফোঁটা জল পড়লেও মারাত্মক বিস্ফোরণ হতে পারে। সম্প্রতি একাধিক বাজি কারখানার আগুনের পিছনে এই রাসায়নিকই দায়ী বলে দাবি করছেন বাজি নির্মাতা ও ব্যবসায়ীদের একাংশ। বাজি ব্যবসায়ী শুভঙ্কর মান্নার মতে, সোরা বাদ দিয়েও কিন্তু বাজি তৈরি হতে পারে।

পরিবেশবান্ধব বাজির এই ধারণাকে কিন্তু স্বাগতই জানাচ্ছেন বাজি ব্যবসায়ী ও নির্মাতাদের একাংশ। তাঁদের মতে, বাজি থেকে ক্ষতিকারক উপাদান না সরালে তার প্রভাব সবার উপরেই পড়বে। এমনিতেই এই দূষণের কারণে বাজি কেনার পরিমাণ আগের তুলনায় কিছুটা কমেছে। তা ছাড়া বাজি শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে উন্নত বাজি তৈরি করতে হবে। সে ক্ষেত্রে ক্ষতিকর উপাদান কী ভাবে বাদ দেওয়া যায় তা নিয়ে গবেষণারও প্রয়োজন রয়েছে।

যদিও এ নিয়ে সবাই অবশ্য একমত নন। শেষমেশ পরিবেশবান্ধব বাজি তৈরি হবে কি না, তা নিয়ে ধন্দ রয়েই যাচ্ছে। সঞ্জয়বাবু বলছেন, ‘‘বাজি পোড়ানোর সময়সীমা আরও কিছু বা়ড়ানোর জন্য ভবিষ্যতে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হতে হবে। তখন বাজির মশলার উপাদানে কিছু ছাড় দেওয়ার আর্জিও জানানো হতে পারে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন