Fire Crackers

গুলিয়ে যাচ্ছে বাজির ‘কোড’, গন্ধমাদন তুলে আনার নির্দেশ

সবুজ বাজির শব্দমাত্রা ৯০ থেকে বাড়িয়ে ১২৫ ডেসিবেল করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শব্দমাত্রা বাড়িয়ে সুযোগ দেওয়া হলেও এ শহরে বিক্রি করার মতো সবুজ বাজি তৈরি হচ্ছে কই?

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:১৬
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

কোনটা সবুজ বাজি আর কোনটা নয়, সেটা বুঝতেই কালীপুজোর আগে ফের ফাঁপরে পড়েছে পুলিশ। যা নিয়ে আপাতত প্রবল চিন্তায় লালবাজারের কর্তারা। কারণ, তাঁরা দেখছেন, সবুজ বাজির নামে গত কয়েক দিনে শহরে যে সমস্ত বাজি ঢুকেছে, তার অধিকাংশেই ‘নিরি’ (ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট)-র কিউআর কোড নেই! দেখতে চাইলে দেখানো হচ্ছে, গুগল অ্যাপে স্ক্যান করা যায়, এমন কোড। এর কোনটি ভুয়ো আর কোনটি আসল, তা-ই বুঝে উঠতে পারছেন না পুলিশের অনেকে। এ দিকে, ‘নিরি’র কর্তারা স্পষ্টই জানাচ্ছেন, শুধুমাত্র তাঁদের দেওয়া কিউআর কোড-ই বৈধ। শেষ পর্যন্ত পুলিশকর্তারা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন, ‘বিশল্যকরণী’ চিনতে না পারলে ‘গন্ধমাদন পর্বত’ তুলে আনার জন্য! এ ক্ষেত্রে গন্ধমাদন পর্বত হল বাজির বাক্স। আর বিশল্যকরণী ভিতরে থাকা বাজি!

Advertisement

গত এক বছরে এ রাজ্যে একের পর এক বাজি বিস্ফোরণে মৃত্যুর জেরে মনে করা হয়েছিল, প্রশাসনিক স্তর থেকে বাজি বিক্রি নিয়ে কড়াকড়ি করা হতে পারে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, করোনার সময়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া ময়দানের বাজি বাজারও এ বার নতুন করে বসতে চলেছে। সেই সঙ্গে সবুজ বাজির শব্দমাত্রা ৯০ থেকে বাড়িয়ে ১২৫ ডেসিবেল করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শব্দমাত্রা বাড়িয়ে সুযোগ দেওয়া হলেও এ শহরে বিক্রি করার মতো সবুজ বাজি তৈরি হচ্ছে কই? বাজি ব্যবসায়ী মহল সূত্রের খবর, এ রাজ্যে সবুজ বাজি তৈরির ছাড়পত্র রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার একটি মাত্র কারখানার। কিন্তু ওই একটি কারখানার বাজিতে শহরের বৈধ বাজি বাজার কি আদৌ ভরানো সম্ভব? বাজি ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, এই কারণেই শহরে বাজি আনানো হচ্ছে ভিন্ রাজ্য থেকে। মুশকিল হল, এই ধরনের বাজির বেশির ভাগেরই শব্দমাত্রা ৯০ ডেসিবেলের বেশি। এতেই প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি এই বাজি বিক্রির পথ করে দিতেই তড়িঘড়ি শব্দমাত্রা বাড়ানো হল? স্পষ্ট উত্তর মিলছে না।

বাজি ব্যবসায়ীদের একাংশ আবার জানাচ্ছেন, আকাশে উঠে ফাটবে, এমন বাজির বাজার এ রাজ্যে প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল। কারণ, এই ধরনের বাজি দু’বার ফাটে। এক বার নীচে ফাটার পরে উপরে উঠে ফের ফাটে। মাধ্যাকর্ষণ কাটিয়ে উপরের দিকে ওঠার জন্য যে শক্তির প্রয়োজন, সেটা ৯০ ডেসিবেলের নীচে শব্দমাত্রা রাখতে গিয়ে করে ওঠা যাচ্ছিল না। এ বার শব্দমাত্রা ১২৫ ডেসিবেল হওয়ায় এই ধরনের বাজির বাজার আবার ফিরবে। এক ব্যবসায়ীর মন্তব্য, ‘‘এতেই বহু ক্ষেত্রে কান ঝালাপালা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে!’’

Advertisement

এই চিন্তাই আরও বাড়িয়েছে কিউআর কোড নিয়ে তৈরি হওয়া জটিলতা। কোনটি বৈধ আর কোনটি নয়, পুলিশ সেটা বুঝতে না পারলে পদক্ষেপ করবে কী করে, সেই প্রশ্ন উঠেছে। ‘নিরি’র প্রধান বিজ্ঞানী সাধনা রাইলু স্পষ্ট জানালেন, তাঁদের দেওয়া কিউআর কোড ছাড়া বাকি সবই বেআইনি। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের কিউআর কোড এন্ড টু এন্ড এনক্রিপ্টেড। অর্থাৎ, সুরক্ষিত। বাকি সবই জাল করা সম্ভব। যে কেউ নিজের মতো করে কিউআর কোড ছাপিয়ে বাক্সের গায়ে লাগিয়ে দিতে পারেন। ফলে ‘নিরি’র অ্যাপে স্ক্যান করে দেখে না নেওয়া পর্যন্ত সবুজ বাজি বৈধ কি না, জানা সম্ভব নয়।’’ ‘নিরি’র আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, প্রতিটি বাজির জন্য আলাদা আলাদা কিউআর কোড থাকার কথা। এই কিউআর কোডের উপরে সিএসআইআর এবং ‘নিরি’র লোগো থাকবে। ‘নিরি’র নির্দিষ্ট মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন দিয়ে স্ক্যান করলে তবেই প্রস্তুতকারী সংস্থার নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বরের পাশাপাশি কোন কোন উপাদান দিয়ে বাজিটি তৈরি হয়েছে, তা জানা যাবে। ‘নিরি’র এক কর্তার কথায়, ‘‘এমন বহু বাজি কারখানা রয়েছে, যাদের হয়তো ‘নিরি’র ছাড়পত্রই নেই। কোনও এক সময়ে তারা ‘নিরি’-তে আবেদন করেছিল। সেই আবেদনপত্রই অ্যাপ প্রস্তুতকারী সংস্থাকে দিয়ে কিউআর কোড বানিয়ে ঢুকিয়ে দিচ্ছে তারা। স্ক্যান করে সেটা দেখেই বাজি বৈধ বলে ধরে নেওয়া হলে মুশকিল।’’

তা হলে উপায়? আপাতত স্পষ্ট উত্তর নেই পুলিশের কাছেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন