কার জন্য কে বলি, বন্ধুত্বের গেরো ৪৩

শত্রুর শত্রু মানে বন্ধু! কিন্তু বাইরের বন্ধুকে ডাকতে গিয়ে যদি ঘরের আসন টলে যায়? তৃণমূলের মোকাবিলায় বিধানসভা ভোটে বাম ও কংগ্রেসের বোঝাপড়ার চর্চার মাঝেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে এই প্রশ্ন। ভাবনায় পড়েছে দুই শিবিরই!

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:৩৭
Share:

শত্রুর শত্রু মানে বন্ধু! কিন্তু বাইরের বন্ধুকে ডাকতে গিয়ে যদি ঘরের আসন টলে যায়?

Advertisement

তৃণমূলের মোকাবিলায় বিধানসভা ভোটে বাম ও কংগ্রেসের বোঝাপড়ার চর্চার মাঝেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে এই প্রশ্ন। ভাবনায় পড়েছে দুই শিবিরই! আশু বিপদ ঠেকানোর তাগিদে আদর্শগত ও রাজনৈতিক ব্যবধান আপাতত মুছে ফেলে দুই শক্তি যদি কাছাকাছি আসার সিদ্ধান্তই নেয়, কী হবে তার পরে? কে কার জন্য কী ভাবে আসন ছাড়বে? আরও স্পষ্ট করে বললে, উত্তর দিনাজপুর, মালদহ ও মুর্শিদাবাদে ছড়িয়ে থাকা ৪৩টি বিধানসভা আসনই এই বন্ধুত্বে গেরো!

কী ভাবে? উত্তর ও মধ্যবঙ্গের ওই তিন জেলাতেই কংগ্রেস এখনও সাংগঠনিক ভাবে নিজস্ব ক্ষমতা রাখে। আবার সিপিএম, ফরওয়ার্ড ব্লক এবং আরএসপি— এই তিন বাম শরিকের গত বারের জেতা বেশ কিছু আসন ছড়িয়ে আছে ওই তিন জেলাতেই! পাঁচ বছর আগের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস-তৃণমূলের জোট ছিল। সেই জোটের শরিক হিসাবেই ওই তিন জেলায় কংগ্রেস যে সব আসনে জিতেছে, বামফ্রন্ট সেখানে দ্বিতীয়। আবার বাম শরিকেরা যে কয়েকটি আসন ঘরে তুলতে পেরেছে, তার প্রায় সবই কংগ্রেসকে হারিয়ে! তাই এখন প্রশ্ন, কংগ্রেস-বাম সমঝোতা হলেও কে কাকে আসন ছাড়বে এখানে?

Advertisement

জটিলতা আঁচ করেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলছেন, ‘‘তৃণমূলের অত্যাচার থেকে বাঁচতে কংগ্রেসের নিচু তলার কর্মীরা বলছেন, সিপিএমের সঙ্গে জোট করতেও অসুবিধা নেই! কিন্তু উত্তর দিনাজপুর, মালদহ ও মুর্শিদাবাদের পরিস্থিতি অন্য। সেখানে কংগ্রেসের সাংগঠনিক শক্তি আছে।’’ কংগ্রেসের তরফে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অবশ্যই হাইকম্যান্ড নেবে। তার আগে প্রদেশ সভাপতি অবস্থান নিয়ে রেখেছেন, তৃণমূলের সঙ্গে জোট তাঁরা চান না। একলা লড়াই ভাল। তেমন পরিস্থিতি হলে বামেদের সঙ্গে যাওয়া যেতেও পারে। এই ‘একলা লড়া’র কথা বারবার মনে করিয়ে দিতে হচ্ছে ওই তিন জেলার বাস্তবতা মাথায় রেখেই!

একই সুরে ফব-র রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলছেন, ‘‘বিধানসভায় বহু বছর ধরে আমরা ৩৪টা আসনে লড়ি। ফ্রন্টে থেকেও আমাদের নেতা-কর্মীরা নিজেদের ভাগের আসন সিপিএমকেই ছাড়তে চান না! সেখানে কংগ্রেসকে আসন ছাড়ার কথা জেলার নেতা-কর্মীদের বোঝাতে পারব?’’ আরএসপি নেতৃত্বও মানছেন, কাজটা সহজ নয়!

কংগ্রেস ও বাম শিবিরের হিসাব বলছে, অধীরের জেলা মুর্শিদাবাদের ২২টি আসনের মধ্যে গত বার তৃণমূল পেয়েছিল একটি আসন। কংগ্রেসের ছিল ১৪, বাকি ৭ বামেদের। মালদহে ১২টির মধ্যে কংগ্রেসের ছিল ৭, বামেদের তিন। বাকি দু’টি তৃণমূল। আর উত্তর দিনাজপুরের ৯টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস চার এবং বাম তিন। তৃণমূল এবং নির্দল প্রার্থীর দখলে ছিল একটি করে আসন। পরে দুই শিবির ভাঙিয়েই মুর্শিদাবাদে দুই, মালদহে তিন এবং উত্তর দিনাজপুরে দু’জন বিধায়ককে তুলে নিয়েছে তৃণমূল। কিন্তু তাতেও বাস্তবতার খুব ফারাক হয়নি! গত বারের ফল দেখে যখনই আসন বিন্যাসের আলোচনা আসবে, পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দেখা দেবে বাম ও কংগ্রেস!

দুই শিবিরেই এই সমস্যা নিয়ে ঘরোয়া আলোচনা শুরু হয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, সমস্যার বিশ্লেষণে কংগ্রেসের মধ্যে অধীর ও আব্দুল মান্নানও এক বিন্দুতে! বঙ্গ রাজনীতিতে বাম-কংগ্রেস বোঝাপড়ার তত্ত্বের প্রথম প্রবক্তা মান্নানের সঙ্গে কথা বলে সম্পর্কের শৈত্য কাটানোর চেষ্টা করেছেন অধীরই। চাঁপদানির প্রাক্তন বিধায়ককে প্রদেশ সভাপতির প্রস্তাব, বাম-কংগ্রেস জোট হলে মুর্শিদাবাদের কোনও আসন থেকে দাঁড়ান মান্নান। হাজার হোক, তিনিই তো এই যুক্তির হয়ে প্রথম সওয়ালকারী! মান্নান সবিনয় জানান, নিজের হুগলি ছে়ড়ে মালদহ বা মুর্শিদাবাদে প্রার্থী হতে গেলে তার মানে দাঁড়াবে, নিজের জন্যই তিনি বাম-কংগ্রেস বোঝাপড়া চেয়েছিলেন! তার চেয়ে তিনি দাঁড়াবেনই না। মান্নানের কথায়, ‘‘ব্যক্তিগত শত্রুতা বা স্বার্থ আমার নেই। কংগ্রেসের ভালর জন্যই প্রস্তাব দিয়েছিলাম। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পরে দল যদি প্রচারের দায়িত্ব দিলে পালন করব।’’ একই অবস্থান অধীরেরও। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য মেনে নিচ্ছেন, ‘‘কেল্লা এত সহজে ফতে হয় না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন