ভাঙতে ভাঙতেও ভেসে গেল না! কংগ্রেস বুঝিয়ে দিল, এখনও শক্তি নিঃশেষ হয়নি তাদের!
নিজেদের ‘ক্ষমতা’ ধরে রাখার সঙ্গে ‘প্রাসঙ্গিক’ রাখল কংগ্রেস। ভাঙন আর গোষ্ঠী-কোন্দলে বিধ্বস্ত দলের মানরক্ষা হওয়ায় স্বভাবতই স্বস্তিতে নেতা-কর্মীরা। পুরভোটে ভোটব্যাঙ্ক খানিকটা ধরে রেখে কংগ্রেস বুঝতে পারছে, বিধানসভা ভোটে তাঁদের একেবারে অগ্রাহ্য করা যাবে না!
পুরভোটের মুখে কলকাতার তিন কাউন্সিলর দল বদলে তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় বড় ধাক্কা খেয়েছিল কংগ্রেস। আনকোরা প্রার্থীদের নিয়েই লড়েছে কংগ্রেস। লোকসভা ভোটের নিরিখে শহরে ৮টি ওয়ার্ডে এগিয়েছিল তারা। সন্তোষ পাঠক ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডে জিতবেনই, এই বিশ্বাস অবশ্য ছিল। শেষ পর্যন্ত ২০১০-এর মতোই কলকাতায় পাঁচটি আসন ধরে রেখেছে কংগ্রেস। সন্তোষ আগের তুলনায় জয়ের ব্যবধান বাড়ানোর সঙ্গেই তৃণমূল, বিজেপি এবং ফরওয়ার্ড ব্লকের তিন প্রার্থীরই জামানত বাজেয়াপ্ত করতে পেরেছেন। প্রকাশ উপাধ্যায়ের জয়ও দলের মনোবল বাড়িয়েছে। প্রকাশবাবুর প্রচারে বাধা দেওয়া ও তাঁর সভায় ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তার পরেও বেলেঘাটার দাপুটে তৃণমূল বিধায়ক পরেশ পালকে হারিেয় কংগ্রেস ‘সন্ত্রাসে’রও জবাব দিয়েছে বলে দলীয় নেতৃত্বের অভিমত। কলকাতার ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের শ্বেতা ইন্দোরিয়াকে হারিয়েছেন শগুফ্তা পরভিন। ১৩৫ এবং ১৪০ নম্বর ওয়ার্ডও পেয়েছে কংগ্রেস। পাঁচ বছর আগে ১৪০ নম্বরে কংগ্রেসই জিতেছিল। পরে সেই কাউন্সিলর তৃণমূলে চলে যান। সেই পুরনো সতীর্থকে হারিয়ে ওয়ার্ড পুনরুদ্ধার স্বভাবতই বাড়তি আনন্দের। পাঁচ নম্বর বরোর পাঁচটি ওয়ার্ডে কংগ্রেস প্রার্থীরা আছেন দ্বিতীয় স্থানে। কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘দলের বিপর্যয়ে সব সময়ই কংগ্রেস কর্মীরা ঘুরে দাঁড়ান। এ বারও সেটাই হল। কংগ্রেসের ভোটব্যাঙ্কের সঙ্গে প্রার্থীদের লড়াই ও পরিশ্রমেই এই ফল।’’ প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি মানস ভুঁইয়া বলেন, ‘‘শাসক দলের তাণ্ডব ও পুলিশ-প্রশাসনের নির্লজ্জ পক্ষপাতের মোকাবিলা করে যে লড়াই তাঁরা করেছেন, তার জন্য কংগ্রেস কর্মীদের আমার সেলাম!’’
দীপা দাশমুন্সির উত্তর দিনাজপুরে, অধীর চৌধুরীর মুর্শিদাবাদে কংগ্রেস শক্তি অক্ষুণ্ণ রেখেছে। লোকসভা ভোটে রায়গঞ্জে দীপা হেরেছিলেন। তবে পুরভোটের মুখে দীপা এলাকায় সংগঠনকে সচল রেখেছেন। যার ফলশ্রুতি— কালিয়াগঞ্জে তৃণমূল একটি আসন না পাওয়া। ইসলামপুরেও ১৭টির মধ্যে ১০টি দখলে কংগ্রেসের। দীপার কথায়, ‘‘দুই পুরসভায় কংগ্রেসের সাংগঠনিক শক্তিই মূলধন। শান্তিপূর্ণ ভাবে মানুষ ভোট দিতে পেরেছেন বলেই এই ফল।’’ কান্দি ও মুর্শিদাবাদ পুরসভাও একই কারণে দখলে রয়েছে। বেলডাঙা ও ধুলিয়ানে ত্রিশঙ্কু হলেও কংগ্রেসই বোর্ড গড়বে বলে আশা দলের। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর বলেন, ‘‘এমন একটা ভাব করা হচ্ছিল, যেন কংগ্রেস কোথাও কোনও আসনই পাবে না! এই ফল প্রমাণ করেছে, কংগ্রেস ধূলিসাৎ হয়ে যায়নি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘লোকসভার তুলনায় কংগ্রেসের ভোট দু’শতাংশের বেশি বেড়েছে। এই ফল বুঝিয়েছে, রাজ্যে অন্যতম বিরোধী শক্তি হওয়ার লড়াইয়ে কংগ্রেস রয়েছে।’’