মতুয়াদের নাগরিকত্ব ইস্য়ুতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি দিলেন অধীর চৌধুরী। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
মতুয়া সম্প্রদায়ের নাগরিকত্ব সুরক্ষায় কেন্দ্রের জরুরি হস্তক্ষেপ দাবি করলেন সর্বভারতীয় কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধীর চৌধুরী। শুক্রবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে তিনি বিশদে একটি চিঠি পাঠিয়ে মতুয়াদের জন্য বিশেষ বিধান সহ অর্ডিন্যান্স (অধ্যাদেশ) জারির আবেদন জানিয়েছেন। তাঁর দাবি, ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা (এসআইআর)-র কঠোর নথিপত্রের শর্ত বহু মতুয়ার কাছে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে দীর্ঘ দিন ভারতের মাটিতে বসবাস করেও এসআইআর ঘোষণার পর তাঁরা চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন।
শাহকে লেখা চিঠিতে অধীর লিখেছেন, পূর্ব পাকিস্তানে ধর্মীয় নির্যাতনের জেরে বহু মতুয়া পরিবার দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। বছরের পর বছর ধরে তারা ভারতের সামাজিক কাঠামো, সংস্কৃতি এবং গণতান্ত্রিক পরিসরের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অথচ, এখন তাঁদের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, যা তাঁর মতে অন্যায় এবং মানবিকতার পরিপন্থী। তাঁর চিঠিতে অধীর আরও উল্লেখ করেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিবেশী দেশের ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হওয়া নাগরিকদের ক্ষেত্রে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) কাট–অফ তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ থেকে বাড়িয়ে ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ করেছে। এই নীতিগত পরিবর্তনকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে তিনি মতুয়া সম্প্রদায়ের জন্যও একইরকম ব্যতিক্রমী ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। তাঁর যুক্তি, “যাঁরা বহু দশক আগে বাধ্য হয়ে ভারতে এসেছেন, তাঁদের নাগরিকত্ব সুরক্ষায় আসন্ন শীতকালীন অধিবেশন শুরুর আগে অর্ডিন্যান্স আনাই এখন সবচেয়ে জরুরি পদক্ষেপ।’’
বহরমপুরের প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদের দাবি, নাগরিকত্বের জটিলতার কারণে বহু মতুয়া পরিবার ভোটাধিকার হারানোর ভয়ে দিন কাটাচ্ছেন। এই পরিস্থিতি জনস্বার্থবিরোধী এবং গণতান্ত্রিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করার শামিল। তাঁর আর্জি, মতুয়া সহ পিছিয়ে পড়া অনুরূপ অন্যান্য সম্প্রদায়ের নাগরিকত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষায় কেন্দ্র এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নিক।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘের আমন্ত্রণে ঠাকুরনগরের অনশন মঞ্চে গিয়ে অনশনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন চৌধুরী। সেখানে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মমতা বালা ঠাকুরের সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি। তাঁদের আতঙ্ক, ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা এবং নাগরিকত্ব হারানোর আশঙ্কা সরেজমিনে শুনে তিনি আশ্বাস দেন—এই লড়াইয়ে মতুয়াদের পাশে থাকবেন বলেও আশ্বাস দেন অধীর। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “মানুষ কয়েক দশক ধরে এখানে বাস করছেন, ভোট দিচ্ছেন, প্রতিনিধিও নির্বাচন করেছেন। অথচ আজ তাঁদের কাছে ২৫ বছরের পুরনো নথি চাওয়া হচ্ছে—এটা অমানবিক, অবজ্ঞাসূচক এবং সামাজিকভাবে অসংবেদনশীল।”