Karnataka Assembly Election 2023

জোটের পালেই হাওয়া, দাবি কংগ্রেস-বামের

কর্নাটকের জয়ের পর বাম ও কংগ্রেসের বক্তব্য, বিজেপির বিরুদ্ধে তারা নিজেদের মতো করেই লোকসভা ভোটে জনমত সংগঠিত করতে চায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০২৩ ০৮:১৭
Share:

কর্নাটকে কংগ্রেসের জয় নিশ্চিত হওয়ার পরে সমর্থকদের উল্লাস। শনিবার বেঙ্গালুরুতে। পিটিআই

কর্নাটকের জয় কংগ্রেসকে দেশ জুড়েই নতুন অক্সিজেন দিল। বিজেপিকে হারিয়ে উজ্জীবিত কংগ্রেস আপাতত জানিয়ে দিল, লোকসভা ভোটের আগে বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে আলোচনায় তারা আগ্রহী নয়। একই সুরে সিপিএমেরও বক্তব্য, এ রাজ্যে বিজেপি এবং তৃণমূলের মোকাবিলায় গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে একজোট করার প্রক্রিয়া কর্নাটকের পরে আরও গতি পাবে।

Advertisement

সাগরদিঘি বিধানসভা উপনির্বাচনে বাম-কংগ্রেস জোটের কাছে তৃণমূলের পরাজয়ের পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, তাঁরা একাই চলবেন। ইদানিং অবশ্য তৃণমূল নেত্রী বলছেন, বিজেপির বিরুদ্ধে বৃহত্তর জোটের বাইরে কেউই থাকবে না। তবে বিজেপির বিরুদ্ধে যেখানে যে শক্তিশালী, তাকে জায়গা ছাড়তে হবে। কর্নাটকের এ বারের ফলাফলকে বিজেপির বিরুদ্ধে মানুষের রায় এবং পরিবর্তনের পক্ষে জনাদেশ বলে ব্যাখ্যা করেও কংগ্রেসের নাম নেননি তৃণমূল নেত্রী। তার প্রেক্ষিতেই বাম ও কংগ্রেসের বক্তব্য, বিজেপির বিরুদ্ধে তারা নিজেদের মতো করেই লোকসভা ভোটে জনমত সংগঠিত করতে চায়।

কর্নাটকে বিধানসভা নির্বাচনের ফল বেরোনোর পরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী শনিবার বলেছেন, ‘‘সেই চিকমাগালুর থেকে ইন্দিরা গান্ধীকে জিতিয়ে যে ধারা শুরু হয়েছিল, এখনও প্রয়োজনের সময়ে কর্নাটক কংগ্রেসকে খালি হাতে ফেরায়নি। ঘৃণার রাজনীতি পরাস্ত হয়েছে। কর্নাটকে বিজেপির ৪০% কমিশনের সরকার চলছে বলে কংগ্রেসের যে প্রচার, তাকে মানুষ গ্রহণ করেছেন।’’ তৃণমূল সংক্রান্ত প্রশ্নে তাঁর বক্তব্য, ‘‘দিদি (মমতা) মনে করেছিলেন, রাহুল গান্ধীকে দিয়ে কিছু হবে না। কিন্তু রাহুলের ‘ভারত জোড়ো, নফরত ছোড়ো’র ডাকে মানুষ সাড়া দিয়েছেন। এখন ওঁর এটা মেনে নিতে অসুবিধা হতেই পারে। তৃণমূলের সঙ্গে জোট নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি না। লোকসভা ভোটে এক দিকে বিজেপি, আর এক দিকে কংগ্রেস, এর মধ্যে লড়াই। বাংলার মানুষকে বলব, কংগ্রেসের সঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষ জোটে আসুন।’’

Advertisement

কংগ্রেস সাংসদ ও দলের বর্ষীয়ান নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, ‘‘সব দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছেড়ে কংগ্রেস এবং বামপন্থীদের এখন একসঙ্গে নামতে হবে। লোকসভা ভোটে বাংলাতেও আমাদের ভাল ফল হবে, সেই পরিস্থিতি আছে। কিছু আঞ্চলিক শক্তির পছন্দ না হলেও মোদী সরকারকে সরিয়ে বিকল্প আসতে পারে কংগ্রেসের নেতৃত্বেই।’’

অধীরের সুরেই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলছেন, ‘‘কর্নাটকে ৪০% কাটমানির সরকার ছিল। মানুষ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছেন। এখানে কাটমানি ৭৫%, মুখ্যমন্ত্রী তাই ঘাবড়ে গিয়েছেন!’’ তাঁরও দাবি, ‘‘কয়েক দিন আগে কংগ্রেস-সিপিএমকে বাদ দিয়ে তৃতীয় একটা ফ্রন্ট করতে চাইছিলেন তৃণমূল নেত্রী। এখন কংগ্রেসের নাম করছেন না। কিন্তু সাগরদিঘি দেখিয়েছে তৃণমূল অপরাজেয় নয়, কর্নাটক আবার দেখাল নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরা অপরাজেয় নন।’’ দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরে সিপিএমের কর্মী সন্মেলনেও এ দিন কর্নাটকের প্রসঙ্গ এনে বিজেপি ও তৃণমূলকে বিঁধেছেন সেলিম। তবে একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়ে কংগ্রেসের জয়ের পরেও গত বার লোকসভা ভোটে এ রাজ্যে কিন্তু আসন সমঝোতা হয়নি। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে, খোলা মনে এগোতে হবে।’’ সিপিএম নেতৃত্ব মানছেন, রাহুল গান্ধী এখন আরও পরিণত, প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরার ভূমিকাও উল্লেখযোগ্য। তাই কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার প্রক্রিয়া মসৃণ হবে বলেই তাঁরা আশাবাদী।

বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষও মেনে নিয়েছেন, কংগ্রেসের পালে এখন হাওয়া লেগেছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতনে এ দিন কর্নাটক-প্রশ্নের জবাবে দিলীপ বলেন, ‘‘অনেক দিন পরে কংগ্রেসের পালে একটু হাওয়া লেগেছে। উৎসাহিত হয়েছেন ওঁরা। তাঁদের সুযোগ দিয়েছে লোকেরা। তাঁদের শুভেচ্ছা জানাই। জনগণ যে রায় দিয়েছে সেটা সর্বোপরি।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার আবার ইঙ্গিত করেছেন সুষ্ঠু ভোটের দিকে। কর্নাটকের গণনা চলাকালীন সুকান্ত দাবি করেন, ‘‘সরকার পরিবর্তন হয় সময় সময়ে। রাজনীতিতে এটাই স্বাভাবিক। এটা তৃণমূল হলে, ভোট লুট করে জিততো! আমরা তো ভোট লুট করে জিতব না।’’

কর্নাটকের জয় উদযাপন করতে এ দিন কলকাতায় রাস্তায় নেমেছিল কংগ্রেস। দক্ষিণের রাজ্যে ফলের প্রবণতা স্পষ্ট হতে শুরু করার পর থেকেই শহরের নানা জায়গায় দলের পতাকা ও আবির নিয়ে উৎসবে নেমে পড়েন কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকেরা। প্রদেশ কংগ্রেসের সদর দফতর বিধান ভবনে জয়ের উৎসব করতে ভিড় জমান দলের কর্মী-সমর্থকেরা। প্রদেশ কংগ্রেস নেতা শুভঙ্কর সরকার, মধ্য কলকাতা জেলা কংগ্রেস সভাপতি সুমন পাল প্রমুখ সেখানে ছিলেন। মহম্মদ আলি পার্ক থেকে যুব কংগ্রেসের ডাকে বিজয় মিছিল এ দিন বিজেপির রাজ্য দফতরের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময়ে সামান্য উত্তেজনা হয়। ‘জয় বজরংবলী’ স্লোগান দেন যুব কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা। মিছিলে ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতা অমিতাভ চক্রবর্তী। তাঁর দাবি, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যে ভাবে বজরংবলীর মুখোশ পরে ঘৃণা ছড়িয়েছিলেন, তার পরে মানুষ তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছে।’’ দক্ষিণ কলকাতায় রানি ভবানী রোডে প্রয়াত নেতা প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির বাড়ির সামনে জয় উদযাপন করেছেন আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়-সহ কংগ্রেস নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন