নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করার পরই তৃণমূলে যোগদানের কথা আনুষ্ঠানিক ভাবে জানিয়ে দিলেন মৌসম বেনজির নূর।— নিজস্ব চিত্র।
লোকসভা নির্বাচনের মুখে বাংলার কংগ্রেসকে বড়সড় ধাক্কা দিয়ে দিল তৃণমূল। উত্তর মালদহের কংগ্রেস সাংসদ মৌসম বেনজির নূর দল ছেড়ে দিলেন। যোগ দিলেন তৃণমূলে। সোমবার সন্ধ্যায় নবান্নে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করলেন মৌসম। তার পরে আনুষ্ঠানিক ভাবে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়ে দিলেন তৃণমূলে যোগদানের কথা।
ভোটের মুখে দলীয় সাংসদের এই দলবদল খুব বড় অস্বস্তি ডেকে আনল প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের জন্য। বিষয়টি নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রের প্রতিক্রিয়া প্রথম দিকে না পাওয়া গেলেও, রাতে প্রেস বিবৃতি দিয়ে তিনি বলেন, “আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের সঙ্গে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের কোনও রকম নির্বাচনী সমঝোতা ও জোট হচ্ছে না, এটা বুঝতে পেরে মৌসম বেনজির নূর দলত্যাগ করেছেন। দলত্যাগ না করার জন্য রাজ্য কংগ্রেস এবং সর্বভারতীয় কংগ্রেসের উচ্চ নেতৃত্ব বারংবার অনুরোধ করেছিলেন মৌসম নূরকে। কিন্তু তিনি প্রতি বারই জানিয়েছিলেন যে দলত্যাগ করছেন না। বাস্তবে দেখা গেল মৌসম নূর দলীয় নেতৃত্ব এবং দলের কর্মীদের সঙ্গে চরম বিশ্বাসঘাতকতা করলেন। সোমবার সকালবেলাতেও তাঁর সঙ্গে ফোনে কথা হয়। ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত আছেন এবং পরে ফোন করবেন বলে জানান তিনি। কিন্তু পরে আর ফোন করেননি।”
মৌসম দলত্যাগ করায় মালদহে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের কোনও রাজনৈতিক ক্ষতি হবে না বলেই মনে করছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। এর পাশাপাশি তিনি জানান, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের জন্য মালদহ (উত্তর) লোকসভা আসনে প্রার্থী হিসাবে বরকত গণিখান চৌধুরীর পরিবারের যোগ্যতম প্রতিনিধি বিধায়ক ঈশা খান চৌধুরীর নাম প্রদেশ কংগ্রেসের তরফে স্থির করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, মালদহ জেলা কংগ্রেসের নতুন সভাপতি নিয়োগের প্রক্রিয়াও শুরু করে দেওয়া হয়েছে।
সোমেন আরও বলেন, “আমাদের দুঃখ একটাই যে, শ্রীমতী মৌসম নূর ছিলেন মাননীয় বরকত গণিখান চৌধুরীর বংশের প্রতিনিধি। তাঁর দলত্যাগ ও বিশ্বাসঘাতকতা প্রকারান্তরে আমৃত্যু ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের আদর্শে বিশ্বাসী প্রয়াত বরকত গণিখান চৌধুরীর প্রতি অপমান ছাড়া আর কিছু নয়। আমাদের বিশ্বাস আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে মালদহের মানুষ প্রয়াত বরকতদার প্রতি এই অপমানের যোগ্য জবাব দেবেন।”
সোমেন মিত্রের পাশাপাশি দলের দুই প্রাক্তন সভাপতি অধীর চৌধুরী এবং প্রদীপ ভট্টাচার্য মৌসমের সমালোচনায় সরব হয়েছেন।
২০০৯ সালে সক্রিয় রাজনীতিতে আসেন মৌসম। মালদহের প্রবাদপ্রতিম কংগ্রেস নেতা গনিখান চৌধুরীর ভাগ্নি মৌসম সে বছরের জানুয়ারিতে সুজাপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে উপনির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন কংগ্রেসের টিকিটে। মৌসমের মা রুবি নূরের প্রয়াণে ওই আসনটি খালি হয়েছিল। মায়ের আসনে মৌসমই লড়েন এবং জেতেন। কিন্তু সে বছরই লোকসভা নির্বাচনে উত্তর মালদহ কেন্দ্র থেকে মৌসমকে ফের প্রার্থী করে কংগ্রেস। সে ভোটেও মৌসম জেতেন এবং সংসদে পৌঁছে যান। পরে ২০১৪ সালে আবার উত্তর মালদহ থেকে মৌসম জয়ী হন। রাহুল গাঁধী কংগ্রেস সভাপতি হওয়ার পরে মালদহ জেলা কংগ্রেসের সভাপতি পদটাও মৌসমই পান।
আরও পড়ুন: ‘খেলাশ্রী’র আসরে মুখ্যমন্ত্রী আবার টাকা দিলেন ক্লাবে, আরও দেওয়ার কথাও ঘোষণা
এ হেন মৌসম কিন্তু বেশ কিছু দিন ধরেই বেসুরে বাজছিলেন। কখনও প্রদেশ কংগ্রেসের লাইনের বিপরীতে গিয়ে তৃণমূলের সঙ্গে জোটের পক্ষে সওয়াল করছিলেন। কখনও তাঁর নানা মন্তব্যে নিজের তৃণমূল ঘনিষ্ঠতা বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন। তিনি যে দলবদল করতে পারেন, সে জল্পনা তখন থেকেই শুরু হয়েছিল। জল্পনা সত্যি করে সোমবার তৃণমূলে সামিল হয়ে গেলেন উত্তর মালদহের সাংসদ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে চান বলেও জানালেন।
মৌসমের সঙ্গে বৈঠক সেরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন নিজেই তাঁকে নিয়ে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন। মৌসমকে আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূলে স্বাগত জানান তিনি। সঙ্গে ছিলেন মালদহ জেলা তৃণমূলের পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারীও। মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল চেয়ারপার্সনের পাশে দাঁড়িয়ে মৌসম বলেন, ‘‘আপনারা দেখলেন ১৯ তারিখের ব্রিগেডে পুরো ভারতের নেতৃত্ব এসেছিলেন বিজেপির বিরুদ্ধে ওঁকে সমর্থন দেওয়ার জন্য। উনিই আমাদের মুখ। ওঁকে দেখেই আমি তৃণমূলে যোগ দিলাম।’’ বিজেপি-কে আক্রমণ করে মৌসম বলেন, ‘‘বাংলাকে নিয়ে বিজেপির যে অশুভ উদ্দেশ্য রয়েছে, তা রোখার জন্য যা করার আমি করব।’’
মেধাতালিকা না দিলে জেলে ভরব সচিবকে, এসএসসি মামলায় মন্তব্য ক্ষুব্ধ বিচারপতির
এ রাজ্যে যে তিনটি জেলায় কংগ্রেসের জনভিত্তি উল্লেখযোগ্য, তার অন্যতম মালদহ। সেই মালদহ থেকে নির্বাচিত এক সাংসদই জেলে গেলেন তৃণমূলে— কংগ্রেসের জন্য এটা বড় ধাক্কা তো বটেই। আর দলবদল করা নেত্রী প্রয়াত গনিখানের ভাগ্নি হওয়ায় অস্বস্তির গভীরতা আরও বেশি।
প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি তথা প্রচার কমিটির চেয়ারম্যান অধীর চৌধুরী বলেছেন, ‘‘আগেও শোনা গিয়েছিল উনি দল ছাড়বেন। এ বার সেই খবরটাই এল। দুঃখজনক ছাড়া আর কী বলব।’’ প্রদেশ কংগ্রেসের আর এক প্রাক্তন সভাপতি তথা দলের সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান প্রদীপ ভট্টাচার্যের গলাতেও প্রায় একই সুর। তিনি বললেন, ‘‘আগেও শুনেছিলাম, তিনি দল ছাড়তে পারেন। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি জানিয়েছিলেন, সব ভিত্তিহীন। এখন আবার শুনছি তিনি দল ছেড়ে তৃণমূলে চলে গেলেন। কী আর বলব? কী বলার আছে?’
(বাংলার রাজনীতি, বাংলার শিক্ষা, বাংলার অর্থনীতি, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার স্বাস্থ্য, বাংলার আবহাওয়া -পশ্চিমবঙ্গের সব টাটকা খবরআমাদের রাজ্য বিভাগে।)