মল্লিকার্জুন খড়্গে। ফাইল চিত্র।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চেয়েছিলেন, তাঁর ব্রিগে়ড সমাবেশে আসুক সর্বভারতীয় কংগ্রেস। বাংলার কংগ্রেস চেয়েছিল, তৃণমূলের ব্রিগেড মঞ্চে রাহুল গাঁধী যেন না আসেন। শেষ পর্যন্ত মমতার ব্রিগেডে লোকসভার দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়গেকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিল কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। ব্রিগেডে এসে তিনি কী বলবেন, সে ব্যাপারে প্রদেশ কংগ্রেসের কাছেই মতামত চেয়েছে এআইসিসি। তবে পূর্ব ঘোষণা মতোই মমতার মঞ্চে থাকছেন না সিপিএম তথা বামেদের কোনও প্রতিনিধি।
দলীয় স্তরে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বকে এআইসিসি জানিয়ে দিয়েছে, বিজেপি-বিরোধী সমাবেশে তৃণমূল নেত্রীর আমন্ত্রণ রক্ষা করতে ১৯ জানুয়ারি আসছেন খাড়গে। এক দিনের কলকাতা সফরে খাড়গেকে সহায়তা করার জন্য রাজ্যের দুই কংগ্রেস নেতাকে দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে। আর স্বয়ং মমতাই মঙ্গলবার খাড়গের আসার কথা প্রকাশ্যে জানিয়ে দিয়েছেন। ব্রিগেডে এক ঝাঁক ‘ভিভিআইপি’র নিরাপত্তা ও প্রোটোকলের ব্যবস্থা নিয়ে নবান্নে এ দিন প্রস্তুতি বৈঠকের পরে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘কংগ্রেস আমাদের সমাবেশে আসছে। মল্লিকার্জুন খাড়গে আসবেন। সনিয়াজি’র (গাঁধী) শরীরটা খারাপ। উনি আসতে পারবেন না।’’ মমতা অবশ্য রাহুলের নাম করেননি।
শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস সভাপতি তৃণমূলের মঞ্চে না আসার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় স্বস্তিতে দলের বাংলার নেতারা। দিল্লির বার্তা পেয়ে তাঁরা আপাতত চেষ্টা করছেন, রাজ্য রাজনীতির ‘বাধ্যবাধকতা’ সংক্রান্ত কিছু অংশ খাড়গের বক্তৃতায় অন্তর্ভুক্ত করতে। এআইসিসি-র তরফে বলা হয়েছে, তৃণমূলের মঞ্চে এসে কংগ্রেস জাতীয় পরিস্থিতিতে বিজেপি-বিরোধিতার কথাই বলবে। নানা উদাহরণ দিয়ে ‘চওকিদার চোর হ্যায়’-এর অভিযোগ তোলা হবে। বলা হবে, নরেন্দ্র মোদীর জমানায় দেশের সাংবিধানিক কাঠামোই বিপন্ন। বিজেপিকে হারাতে লোকসভা ভোটের আগে দেশ জু়ড়ে কোনও ‘মহাজোট’ সম্ভব নয়। তবে বিভিন্ন আঞ্চলিক দল রাজ্যওয়াড়ি পরিস্থিতির নিরিখে নিজেদের মতো করে সমঝোতা করছে। বিজেপি-বিরোধিতার প্রশ্নে সকলেই একমত।
এই বক্তব্যের সঙ্গেই এই রাজ্যের সমীকরণের উপরে একটি অংশ জুড়তে চেয়ে ‘নোট’ তৈরি করছে প্রদেশ কংগ্রেস। দলীয় সূত্রের খবর, সেখানে বলা হচ্ছে— বিজেপি-বিরোধিতার প্রশ্নে একমত হলেও রাজ্যে কংগ্রেস প্রধান বিরোধী দল, তৃণমূল শাসক। রাজ্যের কংগ্রেস কর্মীরা শাসকের বিরুদ্ধে লড়াই করেই দলকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। রাজ্য রাজনীতিতে বিরোধী দল হিসেবেই কংগ্রেস তার ভূমিকা পালন করবে। প্রদেশ কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, ‘‘ব্রিগেডের প্রস্তাবিত বক্তব্যের উপরে আমাদের মতামত চেয়েছে এআইসিসি। আমাদের কথা আমরা জানিয়ে দিচ্ছি। তার পরে কী বলা হবে, সেই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এআইসিসি-ই নেবে।’’
কেরলের মুখ্যমন্ত্রী, সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য পিনারাই বিজয়ন এবং সিপিআই, আরএসপি, ফরওয়ার্ড ব্লককেও আমন্ত্রণ জানিয়েছিল তৃণমূল। তারা কেউই আমন্ত্রণ স্বীকার করেনি। মমতার ব্রিগেডের দিনই সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বরং বাংলায় এসেও দাড়িভিটে যাবেন সভা করতে। মমতা অবশ্য বলেছেন, ‘‘আমরা সকলকেই আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। কেউ কোনও রাজনৈতিক কারণে না-ই আসতে পারে, সেই মতকে আমরা সম্মান করি।’’ তবে তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, সনিয়ার ডাকে দিল্লিতে বিরোধী নেতৃত্বের বৈঠকে মমতা গিয়েছিলেন। সেখানে সীতারাম থাকা সত্ত্বেও তৃণমূল নেত্রী কোনও ‘বাছবিচার’ রাখেননি। কিন্তু তৃণমূলের সমাবেশ থেকে সরে দাঁড়িয়ে সিপিএম ‘খণ্ড ভাবনা’র বাইরে বেরোতে পারল না!