গায়ে মাখছে না তৃণমূল

প্রার্থী তুলেছে কংগ্রেস, বয়কট সিপিএমেরও

ফল বেরনোর আগেই মন্তেশ্বরে যেন ফাঁকা মাঠ শাসকদলের! ভোটের ফল তো আগাম জানা, তৃণমূল নেতৃত্বের ভাবখানাও এমন।

Advertisement

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৩১
Share:

ফল বেরনোর আগেই মন্তেশ্বরে যেন ফাঁকা মাঠ শাসকদলের! ভোটের ফল তো আগাম জানা, তৃণমূল নেতৃত্বের ভাবখানাও এমন।

Advertisement

শাসক-শিবিরে এ হেন আত্মবিশ্বাসের কারণ যে একেবারে নেই, তা নয়। বর্ধমানের এই বিধানসভা কেন্দ্রের উপ-নির্বাচনে ভোটের দিনই সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে প্রার্থিপদ প্রত্যাহারের কথা জানিয়েছিল কংগ্রেস। এ বার সিপিএমও ভোট-লুঠ, এজেন্টদের বুথে বসতে না দেওয়ার অভিযোগ তুলে ভোটগণনা বয়কটের সিদ্ধান্ত নিল। তৃণমূলের দাবি, জামানত জব্দ হয়ে যাবে বুঝে গণনা এড়িয়ে যেতেই এই পথ নিয়েছে বিরোধীরা।

সোমবার সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তাপস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নির্বাচনের শুরু থেকে লাগামহীন সন্ত্রাস চলেছে। প্রচারেও পদে পদে বাধা দেওয়া হয়েছে। ভোটের দিন অবাধে ভোট-লুঠ, এজেন্টদের মারধর করে বের করে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ, পর্যবেক্ষককে জানিয়েও লাভ হয়নি। সমস্ত দিক বিবেচনা করেই গণনাকেন্দ্রে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’ কংগ্রেস প্রার্থী বুলবুল আমহেদ শেখেরও দাবি, ‘‘ভোট নিয়ে আমাদের আর কোনও আগ্রহ নেই। মানুষ নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। তাই আমরা গণনাকেন্দ্রে থাকছি না।’’ এ দিন শাসকদলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে জেলাশাসককে স্মারকলিপিও দিয়েছেন কংগ্রেস নেতারা। বিজেপির তরফে এ দিন সকালে গণনা বয়কটের কথা বলা হলেও পরে জানানো হয়, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অনুমতি না পাওয়ায় গণনাকেন্দ্রে যাবেন তাঁরা।

Advertisement

দু’দশক ধরে বামেদের হাতে থাকা মন্তেশ্বর বিধানসভা আসনে এ বারই প্রথম তৃণমূল জেতে। তবে, কানঘেঁষে। মাত্র ৭০৬ ভোটে সিপিএম প্রার্থী চৌধুরী মহম্মদ হেদায়তুল্লাকে হারিয়ে জয়ী হন তৃণমূলের সজল পাঁজা। মাসখানেক আগে সজলবাবুর মৃত্যুতে উপনির্বাচন ঘোষণা হয়। প্রার্থী হন তাঁর ছেলে সৈকত পাঁজা। এ বার কিন্তু নিছক জয় নয়, বড় ‘মার্জিন’ নিয়ে জেতাই তৃণমূলের পাথির চোখ। সেই লক্ষ্য সফল করতে যা যা কৌশল নেওয়ার, সবই শাসকদল নিয়েছিল বলে বিরোধীদের অভিযোগ। শুরু থেকেই রাজনীতিতে আনকোরা সৈকতের সঙ্গে এ বার একাধিক বিধায়ক, ব্লক নেতাদের দাঁড় করিয়েছিল শাসকদল। চেনা ঢঙে প্রচারের সঙ্গে আশা কর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, গ্রামীণ চিকিৎসকদেরও প্রচারে নামানো হয়।

শনিবার, ভোটের দিন সিপিএম প্রার্থী মহম্মদ ওসমান গনি সরকার অভিযোগ করেন, ২৭৩টি বুথের বেশির ভাগেই এজেন্ট বসতে দেয়নি তৃণমূল। ভোটের আগের রাত থেকেই বেছে বেছে বিরোধী কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার কার্ড কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ করে কংগ্রেস-বিজেপি। ৪৭টি অভিযোগ জমা পড়ে প্রশাসনের কাছে। যদিও তৃণমূলের দাবি, বিরোধীদের এজেন্ট হওয়ার মতো কেউ ছিলেন না। দলের জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথ বলেন, ‘‘পুরোটাই বিরোধীদের নাটক। সন্ত্রাস হলে প্রচার করতেই পারত না বিরোধীরা।’’

বিরোধী দুই দল গণনা বয়কটের সিদ্ধান্ত জানানোর পরে এ দিনই কার্যত জয়ের মেজাজ ছিল শাসক শিবিরে। বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, ‘‘বিধানসভা নির্বাচনে আমাদের জয়ের ব্যবধান খুব কম ছিল ঠিকই। এ বার ব্যবধান অনেক বেশি হবে।’’ কালনার বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডুও সেই দাবি করেছেন। মন্ত্রী স্বপনবাবুর আবার বক্তব্য, মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়ের উন্নয়ন, প্রাক্তন বিধায়ক সজল পাঁজার প্রতি সহানুভূতি আর মোদী সরকারের নোট বাতিলের সিদ্ধান্তে মানুষের ক্ষোভের প্রতিফলন দেখা যাবে ইভিএমে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement