INDIA Alliance

ভোটমুখী ওয়ার্কিং কমিটি গড়ল কংগ্রেস, বাংলার দুই প্রতিনিধি কি ‘ইন্ডিয়া’র তৃণমূলকে ‘বন্ধু’ চাইবেন

রবিবার প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর জন্মবার্ষিকীর দিনে প্রকাশিত হয়েছে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির তালিকা। সেই তালিকায় বাংলা থেকে রয়েছেন কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা অধীর চৌধুরী ও দীপা দাশমুন্সী।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০২৩ ১৬:৩২
Share:

এআইসিসির ওয়ার্কিং কমিটিতে জায়গা পেলেন অধীর চৌধুরী ও দীপা দাশমুন্সী। ফাইল চিত্র।

আগামী বছরের লোকসভা ভোটের আগে দলের নীতি নির্ধারক ওয়াকিং কমিটি গড়ে ফেলল এআইসিসি। রবিবার প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর জন্মবার্ষিকীর দিনে প্রকাশিত হয়েছে এই তালিকা। সেই তালিকায় বাংলা থেকে রয়েছেন কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা অধীর চৌধুরী। সঙ্গে রয়েছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেত্রী দীপা দাশমুন্সী। আর সেই কমিটির নাম ঘোষণার পরেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে বাংলায় ইন্ডিয়া জোটের কার্যকারিতা নিয়ে। কারণ, অধীর তো বটেই, দীপাও বাংলায় তৃণমূলের প্রবল বিরোধী বলেই পরিচিত। সঙ্গে তাঁরা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কঠোর সমালোচকও বটে। তাই কংগ্রেসের এমন সিদ্ধান্তে যে তৃণমূল নেতৃত্ব খুব একটা খুশি হবেন না, তা বলাই যায়।

Advertisement

অধীর আগেই এই কমিটিতে ছিলেন। তবে লোকসভার দলনেতা হওয়ার কারণই তাঁর নাম রয়েছে পাঁচ নম্বরে। সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে, সনিয়া গান্ধী, মনমোহন সিংহ ও রাহুল গান্ধীর পরেই স্থান পেয়েছেন অধীর। আর এই প্রথম কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটিতে জায়গা পেলেন দীপা। একসময় নীতি নির্ধারক কমিটির অন্যতম নেতা ছিলেন তাঁর স্বামী প্রয়াত প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সী। দীপার নাম রয়েছে তালিকার ৩৪ নম্বরে। গত কয়েক বছর ধরে এআইসিসির হয়ে প্রথমে বিভিন্ন রাজ্যে সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করার কারণেই দীপাকে ওয়ার্কিং কমিটিতে জায়গা দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন বাংলার রাজনীতির কারবারিদের একাংশ। গত বছর ডিসেম্বর মাসে হিমাচল প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের দায়িত্ব পেয়েছিলেন রায়গঞ্জের প্রাক্তন সাংসদ। সেই ভোটে ৪০ আসন জিতে ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন করে কংগ্রেস। তার পর চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে ত্রিপুরা বিধানসভা ভোটের প্রার্থী বাছাইয়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব তাঁকে তুলে দিয়েছিল এআইসিসি। দায়িত্ব পেয়েই ত্রিপুরায় বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের জোট গড়তে অন্যতম ভূমিকা ছিল দীপার। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যে বিজেপিকে হারাতে না পারলেও, তিনটি আসনে জিতেছিল ক‌ংগ্রেস। বছরের শেষে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, তেলঙ্গানা এবং রাজস্থানে ভোট। কংগ্রেস সূত্রে খবর, কমিটি গড়ার সময় এই সব রাজ্যে ভোটের কথাও মাথায় রাখা হয়েছে। কারণ, তেলঙ্গানার বিধানসভা ভোটের সিনিয়র পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দীপাকে। আর এ বার সরাসরি কংগ্রেসের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক কমিটিতে জায়গা হয়েছে ।

শনিবার প্রদেশ কংগ্রেসের সদর কার্যালয় বিধান ভবনে দলের জেলা সভাপতিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে রাজ্যে তৃণমূলের সম্পর্কে তাঁদের অবস্থান বদল হচ্ছে কি না, সেই প্রশ্নের উত্তরে অধীর বলেছেন, ‘‘আমরা আমাদের মতো লড়াই করছি। অবস্থান বদল হলে তখন সকলেই দেখতে পাবেন।’’ আসন ভাগাভাগির প্রশ্নেও প্রদেশ সভাপতির মন্তব্য, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল দল চালান। নিজের দলের জন্য ৪২টি আসন চাইতে পারেন, ৪২০টিও চাইতে পারেন! কংগ্রেস বিভিন্ন রাজ্যে আসন ছাড়াই রাজনীতি করবে, এমন কিছু ঠিক হয়েছে বলে আমার জানা নেই।’’ যদিও সূত্রের খবর, একাধিক জেলা সভাপতি বৈঠকে জানতে চান, নদী ও পুকুরের কথা বলে প্রদেশ সভাপতি কি অবস্থান বদলের কোনও ইঙ্গিত দিয়েছেন? লোকসভা ভোট এবং ‘ইন্ডিয়া’র প্রেক্ষিতে বাংলা নিয়ে কি কংগ্রেস হাই কম্যান্ডের অন্য কোনও ভাবনা আছে? পাল্টা অধীর জবাব দেন, ‘‘এই প্রসঙ্গে আলোচনার সময় এখনও আসেনি। তার জন্য এই বৈঠক ডাকাও হয়নি।’’ তা ছাড়া, নদী ও পুকুরের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলতে চেয়েছেন, জাতীয় স্বার্থকে রাজ্যের ঊর্ধ্বে দেখতে হবে। তার জন্যই ওই উদাহরণ টেনেছিলেন।

Advertisement

ঘটনাচক্রে, সেই বৈঠকের এক দিন পরেই অধীর-দীপাকে ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য হিসেবে ঘোষণা করেছে এআইসিসি। তাই এআইসিসির এমন সিদ্ধান্তের পর বাংলার রাজনীতিতে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। যদিও কংগ্রেসের এক নেতার দাবি, ১৪ অগস্ট, স্বাধীনতা দিবসের আগের দিন এক সন্ধ্যায় বেহালায় আয়োজিত এক কর্মসূচিতে মমতা বলেছেন, এ রাজ্যে ‘ইন্ডিয়া’র প্রতিটি ভোট (অর্থাৎ, সমস্ত বিজেপি-বিরোধী ভোট) তৃণমূলকে দেওয়ার জন্য। কারণ প্রসঙ্গে বাংলার রাজনীতির পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, কংগ্রেস এখনও বামেদের সঙ্গী করেই চলার পক্ষপাতী। ধূপগুড়ি উপনির্বাচনেও সিপিএম প্রার্থী ঈশ্বরচন্দ্র রায়কে সমর্থন দিয়েছে তাঁরা। তাই বাংলার রাজনীতিতে বিরোধী জোটের প্রকৃত চিত্র কী হবে, তা নিয়ে ধন্দের পরিবেশ কাটছে না। এই ওয়ার্কিং কমিটিতে জায়গা হয়েছে মমতা-ঘনিষ্ঠ কংগ্রেসের আইনজীবী নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভিরও। তিনি আবার বাংলা থেকেই মমতার সমর্থন পেয়ে বর্তমানে রাজ্যসভায় রয়েছেন। যে কারণে, প্রদেশ কংগ্রেসের সঙ্গে মনু সিঙ্ঘভির দূরত্ব কয়েক যোজন। ৩১ অগস্ট ও ১ সেপ্টেম্বর মুম্বইয়ে বৈঠকে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের দলগুলির মধ্যে আসন ভাগাভাগি ও রাজ্যভিত্তিক অবস্থান নিয়েও আলোচনা হতে পারে বলেই সূত্রের খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন