কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। ফাইল চিত্র।
গোপালকৃষ্ণ গাঁধী থেকে শুরু। তার পর এম কে নারায়ণন হয়ে কেশরীনাথ ত্রিপাঠী— রাজভবনের অধিকার নিয়ে বিতর্ক সমানে চলছে। অন্যতম প্রশ্ন হল, রাজ্যপাল প্রশাসনের কাজের ক্ষেত্রে কি কিছু বলতে পারেন? ডেকে পাঠাতে পারেন প্রশাসনিক কর্তাদের?
সংবিধান বলছে, রাজ্যপাল রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান। তাঁর কোনও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নেই। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার পরামর্শ মেনে তিনি সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। মন্ত্রিসভার পরামর্শ মেনেই রাজ্যপাল বিধানসভার অধিবেশন ডাকেন। আইন তৈরির ক্ষেত্রেও রাজ্যপালের সই জরুরি।
তবে এ সব বিষয়ে নয়, বিতর্ক হয় রাজ্যপালের বিশেষ ক্ষমতা (কনস্টিটিউশনাল ডিসক্রিশন) নিয়েই। তা হল, রাজ্যপালই কোনও রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসনের সুপারিশ করতে পারেন। রাজ্যপাল মনে করলে বিধানসভায় পেশ হওয়া কোনও বিলের উপর রাষ্ট্রপতির মতামত চাইতে পারেন। এবং সর্বোপরি রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রী বা তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্য বা প্রশাসনিক কর্তাদের ডেকে পাঠিয়ে কোনও বিষয় সম্পর্কে রিপোর্ট চাইতে পারেন। সংবিধান বিশেষজ্ঞ অমল মুখোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘রাজ্যপালের মূলত দুটি ক্ষমতা। এক, আইনগত এবং প্রশাসনিক যে কোনও বিষয়ে সরকার তাঁকে জানাতে বাধ্য। দুই, তিনি যদি কোনও বিষয়ে রিপোর্ট চান, তা-ও সরকারকে দিতে হবে। এছাড়া, তিনি চিঠি লিখে মুখ্যমন্ত্রীকে পরামর্শ দিতে পারেন। কিন্তু কখনও নির্দেশ দিতে পারেন না।’’
রাজভবনের এক মুখপাত্র বলেন, ‘‘রাজ্যপালকে প্রতিমাসে দিল্লিতে রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে রিপোর্ট পাঠাতে হয়। তিনি বিশেষ রিপোর্টও পাঠান। সেই কারণে জরুরি পরিস্থিতিতে প্রশাসনিক কর্তাদের ডেকে পরিস্থিতি জেনে নেওয়া প্রয়োজন হয়ে পড়ে।’’ মুখ্যমন্ত্রী বা মন্ত্রিসভার সদস্যদেরও সেই কারণে ডাকতে হতে পারে তাঁদের। এ ছাড়া যে সব সাংবিধানিক পদে রাজ্যপাল নিয়োগ করেন, তাঁদেরও পরামর্শের প্রয়োজনে রাজভবনে যেতে হয়। রাজ্য নির্বাচন কমিশনার থাকার সময় মীরা পাণ্ডে প্রায়ই যেতেন রাজভবনে। সাম্প্রতিক পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে বর্তমান নির্বাচন কমিশনার অমরেন্দ্রকুমার সিংহও বেশ কয়েকবার রাজভবনে পরিস্থিতি জানিয়ে এসেছিলেন।
তবে রাজ্যপালের এক প্রাক্তন সচিব বলেন, ‘‘যখনই কোনও রাজ্যপাল ক্ষমতাবলে সরকারের কাছে রিপোর্ট চেয়েছেন, বিতর্ক হয়েছে। বীরেন জে শাহ রাজ্যপাল
থাকাকালীন যখন জেলায় জেলায় ঘুরে প্রশাসনিক বৈঠক শুরু করেছিলেন, তা নিয়েও আপত্তি জানিয়েছিল তৎকালীন সরকার।’’
সম্প্রতি আসানসোলে গোষ্ঠী সংঘর্ষের পর বর্তমান রাজ্যপাল সেখানে যেতে চাইলে প্রথম দিন নিষেধ করেছিল নবান্ন। কেশরীনাথ ত্রিপাঠী অবশ্য পরদিন আসানসোলে যান, প্রশাসনের কাছে রিপোর্টও নেন। নন্দীগ্রাম-সিঙ্গুর পর্বে গোপালকৃষ্ণ গাঁধী প্রায়ই মুখ্যসচিব, পুলিশ প্রধানকে ডেকে পাঠাতেন। এম কে নারায়ণন অবশ্য মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিবকে প্রায়ই নৈশভোজে ডেকে রিপোর্ট নিতেন।
রাজ্যপালের কিছু ক্ষমতা আবার আচার্য হিসাবেও রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আইন অনুযায়ী, আচার্য চাইলে উপাচার্যদের ডেকে রিপোর্ট নিতে পারেন। রাজভবনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আসলে অনেকটাই নির্ভর করে রাজ্যপালের ব্যক্তিত্বের উপর। সিঙ্গুর পর্বে গোপালকৃষ্ণ গাঁধী সরকার ও বিরোধী পক্ষের মধ্যে মীমাংসা বৈঠকে মধ্যস্থ হয়েছিলেন। সংবিধানে এ কথা কোথাও লেখা নেই। কিন্তু সে সময় সকলেই তা মেনে নিয়েছিলেন।’’