জিটিএ-র রিপোর্ট কেন্দ্র, রাজ্যকে

ধসে ৬৩৫ কোটির ক্ষতি পাহাড় জুড়ে

টানা বৃষ্টির জেরে ভয়াবহ ধসে ওলটপালট হয়ে গিয়েছিল দার্জিলিং পাহাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকা। গত ১ জুনের ওই ঘটনায় পাহাড়ের মিরিক এবং কালিম্পঙের পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নেয়। এক এক করে ৩২টি নিথর দেহ উদ্ধার হলেও আজও খোঁজ মেলেনি ৮ জনের। বহু পরিবার এখনও ভিটেহারা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কাটিয়ে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিকের দিকে এগোতেই পাহাড়ের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব তৈরি শুরু করে গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ) কতৃর্পক্ষ।

Advertisement

কৌশিক চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৫ ০২:১৫
Share:

টানা বৃষ্টির জেরে ভয়াবহ ধসে ওলটপালট হয়ে গিয়েছিল দার্জিলিং পাহাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকা। গত ১ জুনের ওই ঘটনায় পাহাড়ের মিরিক এবং কালিম্পঙের পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নেয়। এক এক করে ৩২টি নিথর দেহ উদ্ধার হলেও আজও খোঁজ মেলেনি ৮ জনের। বহু পরিবার এখনও ভিটেহারা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কাটিয়ে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিকের দিকে এগোতেই পাহাড়ের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব তৈরি শুরু করে গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ) কতৃর্পক্ষ। গত সপ্তাহেই ধসের একটি প্রাথমিক রিপোর্ট তৈরি করে রাজ্য ও কেন্দ্রের কাছে পাঠিয়েছেন জিটিএ কতৃর্পক্ষ। সেই রিপোর্টে জানানো হয়েছে, প্রাথমিকভাবে পাহাড়ের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৬৩৫ কোটি টাকা।

Advertisement

জিটিএ-র বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের দায়িত্বে আছেন ‘অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি’ বা ‘ওএসডি’ গোপাল লামা। দার্জিলিং জেলার প্রাক্তন অতিরিক্ত জেলাশাসক গোপালবাবু চলতি সপ্তাহেও কলকাতা গিয়ে বিভিন্ন মহলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। জিটিএ-র ওএসডি বলেন, ‘‘২০০৯ সালের আয়লার পর এত বড় প্রাকৃতির দুর্যোগ পাহাড়ে হয়নি। রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, গার্ড ওয়াল, জমি-সহ সর্বত্র ক্ষতি হয়েছে। পরিকাঠামোগত প্রচুর কাজ করতে হবে।’’ তিনি জানান, আপাতত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৬৩৫ কোটি টাকা বলে সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় সমীক্ষার কাজ হচ্ছে, ক্ষতির অঙ্কটা বাড়বে। তবে এখনও অনুদানের কোনও টাকা মেলেনি।’’

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, গত ২০১১ সালে জিটিএ চুক্তির পর পাহাড়ের সরকারি দফতরের সিংহভাগই এখন জিটিএ-র অধীনে। গত ১ জুনের পর জেলা প্রশাসন ত্রাণ শিবির, বড় রাস্তা-সহ পরিকাঠামো স্বাভাবিক করার কাজে নামে। সেই সময় কেবলমাত্র বাড়িঘর এবং জমিজমা মিলিয়ে ৭৫ কোটির কাছাকাছি ক্ষতি হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন জানিয়ে দেন। তার পরে সরকারি নির্দেশে জিটিএ-র বিভিন্ন দফতর আলাদা আলাদা করে ক্ষয়ক্ষতি ঠিক করার জন্য সমীক্ষার কাজ শুরু হয়। পূর্ত, শিক্ষা, বিদ্যুৎ, সেচ-মত বিভিন্ন দফতর জিটিএ বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরে রির্পোট জমা দেয়। সব মিলিয়ে তা আপাতত ৬৩৫ কোটির মত দাঁড়িয়েছে। দার্জিলিঙের জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘দুর্যোগের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার কাজ প্রশাসন করেছে। কিন্তু বিভিন্ন দফতর জিটিএ-র অধীণে থাকায় ক্ষয়ক্ষতির হিসাব জিটিএ-ই করবে। আমরাও রাজ্য সরকারকে পরিস্থিতির কথা জানিয়েছি।’’

Advertisement

গত ১ জুন ভোররাত থেকে পাহাড় ধসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। মিরিক এবং কালিম্পঙের বিভিন্ন এলাকায় সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়। মিরিকের টিংলিং এলাকায় ধসে তলিয়ে যায় গ্রামই। এ ছাড়াও লাভা, আলগাড়া, গিদ্দাপাহাড়, মঞ্জুদারা, কোলাখাম, গরুবাথান, ৮ এবং ১১ মাইল এলাকায় বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়। ৩২টি দেহ উদ্ধার হয়। তবে এখনও ৮ মাইলের একজন, কোলখামের চার জন এবং টিংলিঙের তিন জনের হদিশ মেলেনি। পাহাড় জুড়ে ২২টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়। সেখানে প্রায় ২৪০০ জন আশ্রয় নেন। জিটিএ-র হিসাবে অনুসারে, পাহাড়ের ১৬৫টি গ্রামের ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ৯৫ হাজার বাসিন্দা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। এদের কারও বাড়ি ধসে গিয়েছে, কারও পরিবারের বাকিরা মারা গিয়েছেন। অনেকেরই দোকান বা চাষের জমি নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে।

জিটিএ-র অফিসারেরা জানিয়েছেন, প্রায় ২ হাজার বাড়ির ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে পাকা বাড়ির সংখ্যা প্রায় ৫০০। কাঁচা বাড়ি রয়েছে ১৫০০ মত। তবে পাহাড়ের ধসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে রাস্তা, সেতু, গার্ডওয়াল এবং কালর্ভাটের। সেই সঙ্গে ঝোরার গার্ডওয়াল এবং গ্রামীণ এলাকায় রাস্তাঘাট পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। জিটিএ-র হিসাবে রাস্তার ক্ষতির পরিমাণই প্রায় ২০০ কোটি টাকার কাছাকাছি। এ ছাড়াও স্কুল কলেজ ও সরকারি ভবনের কিছু কিচু ক্ষতি হয়েছে। বিদ্যুতের লাইন, টেলিফোন লাইন বহু জায়গায় পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। গ্রামীণ এলাকায় চাষের জমিরও প্রচুর ক্ষতি হয়েছে বলে সমীক্ষায় উঠে এসেছে। জিটিএ সদস্য তথা গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেন, ‘‘মিরিক ছাড়াও কালিম্পঙের বহু গ্রামের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। অনেক জায়গায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ক্ষতির রিপোর্ট তৈরি হয়েছে। আমরা কেন্দ্র এবং রাজ্যের কাছে বিশেষ প্যাকেজের দাবি জানাচ্ছি।’’

গত ২০০৯ সালে মে মাসে পাহাড় জুড়ে আছড়ে পড়ে ‘আইলা’। সেবার দার্জিলিং ও কার্শিয়াং মিলিয়ে ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এনএইচপিসি’র দুটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বিরাট ক্ষতির মুখে পড়ে। প্রশাসনের তরফে সেবার প্রায় ৩৪৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করা হয়েছিল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement