দেদার চুরি সেই সাব-স্টেশনে

পাওয়ার গ্রিড কর্তাদের অভিযোগ, ওরা দুষ্কৃতী। পাঁচিল টপকে অনায়াসে ঢুকে সাব-স্টেশনের যন্ত্রাংশ কেটে সাফ করছে। কম্পিউটার-সহ নানা সামগ্রীও চুরি হয়েছে। থানায় অভিযোগও দায়ের হয়েছে।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

ভাঙড় শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৭ ০৩:৪৩
Share:

অরক্ষিত: ভাঙড়ের সেই সাব-স্টেশন। —ফাইল চিত্র।

না আছে পুলিশ, না নিরাপত্তা কর্মী। প্রায় আড়াইশো কোটি টাকার সম্পত্তির রক্ষাকবচ শুধু গ্রিলের তালা!

Advertisement

ছ’মাস ধরে এমনই অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে ভাঙড়ে পাওয়ার গ্রিডের সাব-স্টেশন। শুধু দরজায় কান পাতলে শোনা যায় টুং-টাং শব্দ আর মানুষের নিচু গলার স্বর!

পাওয়ার গ্রিড কর্তাদের অভিযোগ, ওরা দুষ্কৃতী। পাঁচিল টপকে অনায়াসে ঢুকে সাব-স্টেশনের যন্ত্রাংশ কেটে সাফ করছে। কম্পিউটার-সহ নানা সামগ্রীও চুরি হয়েছে। থানায় অভিযোগও দায়ের হয়েছে। কিন্তু কেউ দেখার নেই। গত জানুয়ারিতে পাওয়ার গ্রিড বিরোধী আন্দোলনের পরেই সম্পত্তির সুরক্ষায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতরের কাছে বাহিনীর সুপারিশ করা হয়েছিল। স্বরাষ্ট্র দফতরের তরফে পাওয়ার গ্রিডের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখা হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। রাজ্য সরকারের তরফ থেকেও কোনও সাড়া মেলেনি। কোনও বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থাও পাওয়ার গ্রিডের সুরক্ষার দায়িত্ব নিতে রাজি হননি। এক গ্রিড কর্তার আশঙ্কা, ‘‘এ ভাবে দিনের পর দিন যন্ত্রগুলি বিকল অবস্থায় পড়ে থাকলে গোটা সাব-স্টেশনই অকেজো হয়ে পড়বে।’’

Advertisement

পুলিশ কী করছে?

রাজ্য পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘জানুয়ারির ঘটনার পরই পুলিশকে সংযমী আচরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাওয়ার গ্রিড এলাকায় টহলদারি করতে দেখলেই পুলিশকে লক্ষ করে বোমা ছোড়া হয়। সেই কারণে ওই এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়নি।’’ তবে, কাশীপুর থানা সূত্রে জানানো হয়েছে, চুরির অভিযোগ পাওয়ার পরেই পাওয়ার গ্রিডের কিছু পিতলের যন্ত্রাংশ-সহ মাছিভাঙা গ্রামের এক বাসিন্দাকে গ্রেফতার করা হয়।

মাছিভাঙা এবং খামারআইট গ্রামের মধ্যবর্তী এলাকাতেই রয়েছে সাব-স্টেশনটি। গত ১৭ জানুয়ারি স্থানীয় মানুষ এবং নকশাল নেতাদের গ্রিড-বিরোধী আন্দোলনের জেরে তেতে উঠেছিল ওই এলাকা। আঁচ লেগেছিল সাব-স্টেশনেও। সেখানকার নিরাপত্তা কর্মীদের মারধর করা হয়। পাশের পুলিশ ফাঁড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। তার পর থেকে আর সাব-স্টেশনের ধারে-কাছে ঘেঁষতে পারেননি গ্রিড কর্তারা। এখনও সাব-স্টেশনের গ্রিলের দরজার ফাঁক দিয়ে দেখা যায় সে দিনের তাণ্ডবের চিহ্ন। চেয়ার-টেবিল, লোহার যন্ত্রাংশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। রাস্তা ঢালাইয়ের যন্ত্র উল্টে পড়ে রয়েছে।

গ্রিড সূত্রে জানা গিয়েছে, সাব-স্টেশন তৈরির প্রায় ৯৫ শতাংশ কাজ শেষের পরেই ওই আন্দোলন হয়। তা না হলে গত ফেব্রুয়ারিতেই তা চালু হয়ে যেত। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা-সহ বৃহত্তর কলকাতার একটি বড় এলাকায় ভোল্টেজ সমস্যার সমাধান হতো। কিন্তু আচমকা আন্দোলনের জেরে সব স্তব্ধ। গ্রিডেরও ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন